শিক্ষণীয় গল্প- সন্ন্যাসীর খড়ম ও কিছু কথা।
কোন এক সন্ন্যাসীর খড়ম ব্যবহার করার অভ্যাস ছিল।
তিনি সর্বদাই খড়ম ব্যবহার করতেন।
আশ্রমে তো করতেনই কোথাও যখন যেতেন তখনও সঙ্গে খড়ম নিয়ে যেতেন। খড়মের সঙ্গে তাঁর খুব হৃদ্যতা তৈরি হয়েছিল। খড়মটিও খুব ভালো ছিল।
দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে করতে খড়মের বুকে সন্ন্যাসীর পায়ের ছাপ পড়ে আছে। এতে খড়মের খুব গর্ব। সে ভাবে, আমি মহারাজজীকে কত সেবা দিই। সেই হিসেবে আমিই শ্রেষ্ঠ শিষ্য।
এই গর্বিত ভাব মনে নিয়ে গুরুসেবা করতে করতে খড়মের অহংকার জন্মে। আমিই প্রকৃত গুরু সেবক, এমন ভাব নিয়ে খড়ম গুরুসেবা করে চলেছে।
গুরুর সাথে সে তীর্থে তীর্থে, মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু একটা কথা ভেবে তার মনে বড়ই কষ্ট হয়।
একদিন সুযোগ পেয়ে খড়ম গুরুজীকে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করল, প্রভু’ একটা কথা ভেবে আমি তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। যদি অনুমতি দেন জিজ্ঞাসা করি গুরু জানতে চাইলে- খড়ম বলল প্রভু, আমি আপনার পদসেবা করি।
কিন্তু আপনি যখন মন্দিরের ভেতর যান তখন আমাকে মন্দিরের বাইরে এক কোনে রেখে যান কেন ?
উত্তর দিতে গিয়ে গুরু বললেন, পরে একদিন বলব।
দিন যায় খড়মের ধৈর্য্য আর ধরে না।
গুরুর সঙ্গে কত মন্দিরে গিয়েছে কিন্তু কোনো মন্দিরেই দেবদর্শন তার হল না। গুরুও তার কারণ বলে না।
অন্য একদিন সুযোগ পেয়ে খড়ম কাকুতিমিনতি করে বলল, গুরুজী, আমি আপনার এত পদসেবা করছি, সব সময় খেয়াল রাখি যেন আপনার চরণে ধূলো না লাগে। ভেবে দেখুন, আমিই আপনার চরণযুগলকে জল, মাটি, কাদা থেকে রক্ষা করি।আমি নিজে নোংরা মেখে আপনার চরণযুগল পরিষ্কার রাখি। এমনকী আপনার চরণযুগলের চিহ্ন আমি আমার বুকে ধারণ করে থাকি, তবুও আপনি আমাকে দেবদর্শনের সুযোগ দেন না।
এবার আপনাকে এর উত্তর দিতেই হবে।
“”গুরু গম্ভীর হয়ে বললেন, সে তোর স্বভাবের জন্য””।
তুই যা বলেছিস সব ঠিক। আমার পায়ের ছাপ তোর বুকে আছে, জলে কাদায় আমায় রক্ষা করিস, সব ঠিক কিন্তু তোর স্বভাব খুব খারাপ।
“””সুযোগ পেলেই পেছনে কাদা ছেটানো তোর স্বভাব। যারা পেছনে কাদা ছেটায় তারা কখনও দেবদর্শনের যোগ্য নয়”””।
উত্তর শুনে খড়মের মন খারাপ হয়ে গেল।
সে ভারাক্রান্ত মনে বলল, আচ্ছা গুরুদেব, যখন আপনি আর এই জগতে থাকবেন না তখন ভক্তরা তো আমাকেই দেবতার পাশে কিংবা সামনে রেখে পূজা করবে।
এই কথা শুনে গুরু বললেন, ঠিক বলেছিস।
তখন ভক্তরা তোকেই গুরু মেনে পূজা করবে।
এবার খড়ম জিজ্ঞাসা করল, যার দেবদর্শন এর অধিকার নেই, সে কেমন করে দেবতা হয় ? ? ?
সঙ্গে সঙ্গে গুরু বললেন___ তখন যে তুই আর কাদা ছিটাবি না।
“””যারা কাদা ছেটায় অর্থাৎ কিনা যারা ‘পরনিন্দা’ ‘পরচর্চা’ ও ‘ছিদ্রাম্বেষী'(পরের ছেদা খুঁজে বেড়ায়) তারা দেবদর্শনের যোগ্য নয় আবার তারাই যদি ঐ পরনিন্দা-পরচর্চা ছেড়ে দেয় তবে নিজেরাই দেবতা হয়ে যেতে পারে”””।
মা বলেছিলেন, যদি সুখী হতে চাও তবে কারও দোষ দেখো না,দোষ দেখবে নিজের।।