আরো...

প্রেম ও পারিবারিক আয়োজনের পরও বিয়েতে অস্বীকৃতি; অবশেষে অন্তসত্ত্বা মেয়েটির বিয়ে

স্টাফ রিপোর্টঃ

প্রেম ও পারিবারিক আয়োজনের পরও বিয়েতে অস্বীকৃতি; অবশেষে অন্তসত্ত্বা মেয়েটির বিয়ে

মেয়েটির বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি। দীর্ঘ আট বছরের প্রেমের সম্পর্ক টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি থানা এলাকার এক যুবকের সাথে। সম্পর্কের সূত্র ধরে পারিবারিকভাবেও জড়িয়ে পড়ে দুই পরিবার। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবেই মেয়েটির সাথে বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের খরচ যোগাতে জমিও বিক্রি করে দেয় মেয়েটির বাবা। বিয়ের আশ্বাসে এবং ছেলেটির পীড়াপিড়িতে ছেলেটির সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য হয় মেয়েটি। এক পর্যায়ে মেয়েটি অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

মেয়েটির সাথে বেশ কিছুদিন মেশার পর ছেলেটি বিয়ে নিয়ে মেয়েটির সাথে গড়িমসি করতে থাকে। বিয়ের তারিখ পেছাতে থাকে। একদিন জানিয়ে দেয়, মেয়েটিকে সে বিয়ে করবে না। বিয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় দেনদরবার করে মেয়েটি ও তার পরিবার। এতে করে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক আরো খারাপ হয়। ছেলের পরিবারও এক পর্যায়ে ছেলেটির পক্ষে অবস্থান নেয়। ছেলেটির পরিবার অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার বড় ভাই এলাকার প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি।

পেটে বাচ্চা নিয়ে মেয়েটি অসহায় হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মেয়েটির পরিবারও এই লড়াইয়ে তাকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। একা হয়ে পড়ে মেয়েটি। আর কোনো উপায় না দেখে বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স’কে জানায় মেয়েটি। পুলিশের সহযোগিতা চায় সে। ছেলে বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে অস্বীকৃতি জানায়। সে চায় তাকে বিয়ে করে সম্মানজনকভাবে ঘরে তুলে নেয়া হোক।

এই বার্তাটি গ্রহন করে মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি থানার ওসি মো. চান মিয়ার নিকট পাঠিয়ে এ বিষয়ে তাকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনার প্রেক্ষিতে, ওসি ধনবাড়ি ছেলেটির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। স্থানীয় অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিদেরকে সম্পৃক্ত করেন। ওসি ধনবাড়ি মো. চান মিয়ার অসাধারন উদ্যোগ ও আয়োজনে এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ছেলে ও মেয়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ৮ জুন ২০২১ খ্রি. তারিখে বিয়ে হয়।

মেয়েটি বাংলাদেশ পুলিশকে লিখেছে, “সব আশা ভরসা যখন শেষ হয়ে গেছে, বাঁচার ইচ্ছা পর্যন্ত শেষ হয়ে গিয়েছিল, মানসিক ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম, সেই মূহুর্তে আপনারা আমাকে নতুনভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।” সে আরো লিখেছে, “একজন সাধারণ মেয়ের পাশে থেকে, আপনাদের একান্ত প্রচেষ্টায় আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া জানাই। আপনাদের মানবিক কাজের জন্য আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। আপনাদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। তবে, নামাজ পড়ে দোয়া করবো সারাজীবন।”

বিয়ের পর একাধিক বার মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। কথা হয়েছে তার স্বামীর সাথেও। মেয়েটি জানিয়েছে, খুব ভাল আছে। সর্বশেষ ৭ জুলাই ২০২১ খ্রি. মেয়েটির সাথে কথা বলেছে মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স। সে জানিয়েছে তারা উভয়েই ভাল আছে। সুখী দম্পতি হিসেবে সংসার জীবন যাপন করছে। উল্লেখ্য, প্রচলিত পুলিশিং এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মানসিক নৈকট্য তৈরী ও সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী সমাধানে নানা প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স। উ‌ল্লেখ্য, ভুক্ত‌ভোগীর স‌র্বোচ্চ কল্যাণ ও সুরক্ষা বি‌বেচনায় প্র‌যোজ্য ক্ষে‌ত্রে ঘটনার সা‌থে সং‌শ্লিষ্ট ব্য‌ক্তি ও বিষয়াদির নাম প‌রিচয় প্রকাশ না করার প‌লি‌সি অনুসরন ক‌রে থা‌কে মি‌ডিয়া এন্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স উইং।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button