পার্লারে নয়, ঘরে বসেই সারান চোখের ডার্ক সার্কেল
ভোর সাড়ে পাঁচটার অ্যালার্ম। মোবাইলের সুইচ টিপে বিরক্তিকর শব্দটা বন্ধ করে টুপুর। ইচ্ছে না হলেও বিছানা ছাড়তে হবে। মেয়ের অন লাইন ক্লাস শুরু হবে। নিজের অফিসের কাজও শুরু হবে। মোটামুটি ১০টার মধ্যে সব কাজ সেরে তৈরি হযে নিতে হবে। স্নান, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ঘরের টুকটাক কাজ, বাজার, দোকান সব। মেয়ের ক্লাস শেষ হলেই তার কাজ শুরু হয়ে যাবে। ল্যাপটপের সামনে একবার বসলে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কেটে যায়। তার মাঝেই খাওয়া এবং আরও কিছু টুকটাক কাজ। সন্ধেবেলাও ফ্রি হওয়ার উপায় নেই। মেয়ের পড়াশোনা এবং নিজের প্রেজেন্টেশনের কাজ আছে, ডিনার তৈরি, তারপর যেটুকু সময় হাতে থাকে ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা দেখতে দেখতেই কেটে যায়। কখন যে রাত একটা বেজে যায় খেয়ালও থাকে না।
এভাবে দিনের পর দিন চলছে। আগে যখন অফিস যেতে হত তখনও এরকম ব্যস্ততা থাকত। কাজ আর সংসারের চাপ, রোগ সংক্রমণের চিন্তা, পারিবারিক সমস্যা, কম ঘুম আর সবচেয়ে বড় কথা হল স্ট্রেস। এই সবের কারণে টুপুরের চোখের চারপাশের কালো দাগগুলো কিছুতেই যেতে চায় না। সঙ্গে ফ্রি-তে রয়েছে ফোলাভাব। অফিস যখন যেতে হত তখন মেক আপ করে সেসব ঢেকে নিতে হত। এখন মেক আপের বালাই নেই। তাই আয়নার সামনে দাঁড়াতে নিজেই নিজেকে দেখে আঁতকে ওঠে টুপুর।
টুপুর একা নয়। আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে চোখের চারপাশের এই ভয়ানক কালো রঙের আক্রমণে অনেকেই কাবু। মহিলারাই নন এই সমস্যায় পুরুষরাও জর্জরিত হন। অনেকেই চোখের চারধারের কালো দাগ এবং ফোলাভাব কমাতে পার্লারে ছোটেন। নানারকম ট্রিটমেন্ট করেন। কিন্তু সেসবের বদলে বাড়িতে সামান্য চর্চা করলেই কালো দাগ এবং ফোলাভাব দূর হতে পারে। আর সঙ্গে মেনে চলতে হবে কয়েকটি নিয়ম। ব্যস্ তাহলেই চেহারা বদলে যাবে।
ঘরোয়া টোটকা
– সর্বগুণ সম্পন্ন শসা চোখের চারধারের কালি এবং ফোলাভাব মেটাতেও দুর্দান্ত। শুধু চোখই নয় ত্বকের কালো ভাব বা ট্যান দূর করতেও শসা দারুণ কাজ দেয়। ব্রণ সারিয়ে ত্বককে মোলায়েম রাখতেও শসা খুব কাজ দেয়। গরমে ত্বকের জ্বালা কম করতে শসার রস দারুণ উপাদেয়। খোসা সহ শসার পাতলা স্লাইস কেটে আধঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর দিনে দুবার ১০ মিনিট করে চোখের উপর রেখে চুপচাপ শুয়ে থাকুন। এমনকি ফেস মাস্ক ব্যবহার করার সময়ও এই স্লাইস চোখের উপর রাখতে পারে। তাতে সময় বাঁচবে। ১০ মিনিট পর উষ্ণ গরম জলে চোখ ধুয়ে নিন।
– অনেক সময় ডার্ক সার্কল গাঢ় হলে স্লাইস করা শসা কাজ দেয় না। তাহলে সমপরিমাণ শসার রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে তুলো দিয়ে চোখের চারপাশে আলতো করে লাগিযে নিন। খেয়াল রাখবেন যে চোখে যেন রস ঢুকে না যায়। মিনিট ১৫ এভাবে রেখে দিয়ে উষ্ণ গরম জলে ধুয়ে নিন।
– ঠান্ডা লাগার ধাত না থাকলে সকালে বা বিকেলের দিকে কোল্ড কমপ্রেস মেথড প্রয়োগ করতে পারেন। আই মাস্ক থাকলে সেটিকে মিনিট দশেক ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর চোখের চারপাশে মেখে নিন। তারপর আলতো করে আঙুল দিয়ে গোলাকারভাবে মাসাজ করতে থাকুন। প্রতিদিন এটি ব্যবহার করলে ভালো কাজ দেয়।
– ত্বকের খেয়াল রাখতে গোলাপ জলের জুড়ি মেলা ভার। চোখের কালো দাগ এবং ফোলাভাব দূর করতেও এটি বেশ কার্যকর। তুলো বা মেক আপ রিমুভাল প্যাড গোলাপ জলে ভিজিয়ে চোখের উপর মিনিট ১৫ রেখে দিন। চোখে আরাম পাবেন, ক্লান্তিভাব চলে যাবে এবং কালো দাগ উঠে যেতেও সাহায্য করবে।
– টোম্যাটোতে আছে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন ত্বকের পক্ষে এটি খুবই উপকারী। লাইপেন ত্বককে কোমল করে, ত্বকের কালোভাব বা ট্যান কমায়। চোখের কালো দাগ কমাতেও টোম্যাটো অসাধারণ কাজ দেয়। সমপরিমাণ টোম্যাটো এবং লেবুর রস মিশিয়ে তুলোয় করে চোখের চারপাশে মেখে ১০ মিনিট চুপচাপ বিশ্রাম নিন। দিনে দুবার করে এটি করুন। তফাত নিজেই বুঝতে পারবেন।
– গ্রিন টি-র ঠান্ডা ব্যাগ নিয়মিত চোখে রাখলে কালোভাব এবং ফোলাভাব দূর হয়। জলের মধ্যে গ্রিন টি-র ব্যাগ ভিজিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। আধঘণ্টা পর সেটি ফ্রিজ থেকে বের করে চোখের উপর রেখে ১০ মিনিট বিশ্রাম নিন। ১০ মিনিট পর টি ব্যাগ সরিয়ে উষ্ণ গরম জলে চোখের চারপাশ আলতো করে ধুয়ে নিন। দিনে দুবার করলে এটি ব্যবহার করতে পারলে চোখের চারপাশের কালোভাব অনায়াসে সেরে যাবে।
– অনেকেই হয়তো জানেন না যে আলুতে থাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি। ত্বকের জন্য তাই আলুর রস বেশ উপকারি। আলুর রসে তুলো বা মেকআপ প্যাড ভিজিয়ে ১০ মিনিট চোখের উপর রাখুন। উষ্ণ গরম জলে চোখের আশপাশ ধুয়ে নিন।
– কাঁচা দুধে তুলো ভিজিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। ঠান্ডা তুলো চোখের উপর রেখে ১০ মিনিট রেখে দিন। শেষ উষ্ণ গরম জলে চোখের চারপাশ ধুয়ে ফেলতে ভুলবেন না।
– চোখের চারপাশের কালোভাব দূর করতে ভিটামিন ই তেল এবং নারকেল তেল দুটিই দারুণ কাজ দেয়। ভিটামিন ই ত্বকের বলিরেখা দূর করতেও দারুণ কাজ দেয়। ভিটামিন ই অয়েল বা নারকেল তেল নিয়ে হালকা করে চোখের চারপাশ মাসাজ করুন। দুটি তেল সমপরিমাণ মিশিয়েও লাগাতে পারেন। সারারাত তেলটি রেখে দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন।
– আনারসের রসের সঙ্গে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে গাঢ় একটা পেস্ট তৈরি করুন। চোখের চারপাশে সেটি মেখে মিনিট দশেক অপেক্ষা করুন। তারপর তুলো বা নরম কাপড় উষ্ণ গরম জলে ভিজিয়ে প্যাকটি তুলে ফেলুন।
নিয়ম মেনে চলুন
– সাধারণ চকোলেটের পরিবর্তে ডার্ক চকোলেট খান। ত্বকের কালোভাব দূর করতে এটি দারুণ কাজ দেয়।
– বেশি করে জল খান কাঁচা নুন খাওয়া বন্ধ করুন। নুন যুক্ত খাবার খাওয়া কমান।
– অ্যালকোহল খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। না পারলে পরিমাণে কমিয়ে ফেলুন। না হলে চোখের ফোলাভাব এবং ডার্ক সার্কেল দূর করা খুব কঠিন।
– দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। না হলে চোখের কালো দাগ কোনোদিন যাবে না।
– নিয়মিত শরীর চর্চা এবং মেডিটেশন করুন।
– মুখে এবং চোখের চারপাশে প্রতিদিন অ্যালোভেরা ক্রিম মাসাজ করার অভ্যাস করুন।
– খুব ভালো করে মেক আপ তুলুন। তবে মুখে এবং চোখের চারপাশ জোরে জোরে ঘঁষবে না।
– প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার করবেন। চোখের চারপাশের কালোভাব চলে যাওয়ার পাশাপাশি মুখের ত্বকও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।