জেলার খবর

ছাতকে শিশু সাব্বিরের মুল হত্যাকারী চাচা শাহপরান থেকে গ্রেফতার, হত্যার লোমহর্ষক বনর্না

আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

ছাতকে শিশু সাব্বিরের মুল হত্যাকারী চাচা শাহপরান থেকে গ্রেফতার, হত্যার লোমহর্ষক বনর্না

ছাতকের দক্ষিণ বাগবাড়ী লেভারপাড়া এলাকায় একটি পতিত জমি থেকে উদ্ধার করা অর্ধগলিত শিশু সাব্বির আহমদের মুল হত্যাকারী অলিল মিয়া ওরফে অলি (৩৫)কে শাহপরান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটের শাহপরান থানাধীন তেররতন উপশহর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন ছাতক থানার সেকেন্ড অফিসার হাবিবুর রহমান পিপিএম। গাড়ি চালক অলিল মিয়া ওরফে অলি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার রবির বাজার এলাকার মৃত বাদল মিয়ার পুত্র। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র সাব্বির আহমদের অর্ধগলিত লাশ ৪ মার্চ ছাতক শহরের লেবারপাড়া এলাকার একটি জমি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ছাতক থানার এসআই মাসুদ রানা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ছাতক থানায় একই হত্যা মামলা (নং-০৬) দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছাতক থানার এসআই আসাদুজ্জামান ২ মাস তদন্ত করে এর কোন ক্লু-উদঘাটন করতে পারেননি।

অবশেষে ছাতক থানার সেকেন্ড অফিসার, চৌকস পুলিশ অফিসার হাবিবুর রহমান পিপিএমকে চাঞ্চল্যকর সাব্বির আহমদ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ ২৩ মে এ হত্যাকান্ডে সাথে জড়িত লেবারপাড়া এলাকার বাসিন্দা তাজুল মিয়া খছরু(৫৫) এবং তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম(৪৫) গ্রেফতার করেন তিনি। তাজুল ইসলাম খছরু দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর গ্রামের মৃত রশিদ আলীর পুত্র। তারা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা বিজ্ঞ আদালতে কাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় সেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছে।

তাদের দেয় তথ্য মতে, আপন ভাবী ,সাব্বির আহমদের মা রাবিয়া খাতুনের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল অলিল মিয়া ওরফে অলি। পরকীয়ার বিষয়টি ধরা পরলে সাব্বিরের বাবা বাবুল মিয়ার সাথে রাবিয়া খাতুনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে রাবিয়া খাতুন প্রেমিক অলিল মিয়া ওরফে অলি মিয়াকে বিয়ে না করে সাব্বিরকে সাথে নিয়েই জুড়ি এলাকার আয়নুল হক মস্তান নামের অন্য এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। রাবিয়া খাতুনকে না পেয়ে আক্রোশে প্রতিশোধের নেশায় বিভোর হয়ে পড়ে অলি মিয়া।

এক পর্যায়ে তার সন্তান সাব্বির আহমদকে হত্যা করে এর চরম প্রতিশোধ নেয় সে। ২৮ ফেব্রুয়ারী কৌশলে সৎ পিতার ঘর থেকে সাব্বির আহমদকে অপহরন করে ছাতক শহরের লেবারপাড়া এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম খসরুর বাসায় নিয়ে আসে অলিল মিয়া ওরফে অলি মিয়া। এখানে চাচা অলি মিয়ার সাথে একদিন অবস্থান করে সাব্বির আহমদ। তখনও শিশু সাব্বির বুঝতে পারেনি যে তাকে হত্যা করার জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।

কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। ১ মার্চ একই কক্ষে চাচার সাথে ঘুমিয়ে পড়ে সাব্বির। মধ্য রাতে যখন গভীর নিদ্রায় সাব্বির চাচার পাশে ঘুমাচ্ছিল। ওই সময়টাকেই খুনের জন্য উত্তম মনে করেই খুনী অলিল মিয়া ওরপে অলি মিয়া ঘুমন্ত সাব্বিরকে গলায় গামছা বেঁধে চেপে ধরে সাব্বিরের গলা। শ্বাসরুদ্ধ করে রাখার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার দেহটি প্রানহীন হয়ে পড়ে। চিরনিদ্রঅয় শায়িত হয় সাব্বির। এ লাশ কাঁথা-কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে রেখে কক্ষ তালাাবদ্ধ করে রাতের আধারে পালিয়ে যায় খুনী অলি। ওই কক্ষে সাব্বিরের লাশ তালাবব্ধ অবস্থায় থাকায় কক্ষ থেকে দূর্গন্ধ বের হতে থাকে।

তখন ধরা পড়ার আশংকায় ৩ মার্চ তাজুল মিয়া খসরু ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম রাসায়নিক তরল ব্যবহার করে লাশ ঝলসে দিয়ে বিকৃত অবস্থায় লাশ ঘুম করার লক্ষ্যে বসত ঘর সংলগ্ন কচু ক্ষেতে লুকিয়ে রাখে সাব্বিরে লাশ। কিন্তু লাশ পচা দূর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে অবশেষে ৪ মার্চ ভোরে অর্ধগলিত লাশ লেবারপাড়া এলাকার একটি জমিতে ফেলে দিয়ে আসে স্বামী-স্ত্রী। ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজিম উদ্দিন জানান, এটি একটি নির্মম হত্যাকান্ড। আসামীদের জেলহাজতে পাঠানা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button