জেলার খবর

মাস ধরে বন্ধ ছাতক টু -সিলেট ট্রেন:কবে চালু হবে, জানেনা কেউ।

আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

মাস ধরে বন্ধ ছাতক টু -সিলেট ট্রেন:কবে চালু হবে, জানেনা কেউ।

‘সিলেট পাইকারী আড়ত থেকে পিয়াজ, রসুন, আদাসহ নানা কাঁচামাল কিইন্না ট্রেইনো করি ছাতক আইতাম’। পরে বাজারও ভারদি হাইট্রা মাল বেছতাম। মোটামুটি ফরতেখ দিন এই কাঁচামাল বেইচ্ছা যে লাভ পাইতাম, আমার সংসার চলিজিত’। কিন্তু আইজ ৯ মাস ট্রেইন বন্ধ অইয়া আমার ব্যবসা নাই। এখন আমি দিন মজুরের কাজ কইরা খাই।’ বড় কষ্টের সাথে এসব কথাগুলো বললেন ছাতকের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোনা মিয়া।

সংক্রামক ব্যাধী করোনা ভাইরাসের কারণে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে। যার ফলে রেলপথে যাতায়াতকারী মধ্যবিত্ত শ্রেনীর যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এছাড়াও এই অঞ্চলের অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ট্রেন চলাচল বন্ধে বেকার হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ বিকেলে ছাতক থেকে সিলেট ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। এখনও বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। কবে থেকে আবারও নিয়মিতভাবে ছাতক-সিলেট পথে ট্রেন চালু করা হবে, এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগন কেউ পরিস্কার করে বলতে পারছেন না। ছাতক বাজার রেলষ্টেশনের জনবল সংকট নিরসন ও দ্রুত ট্রেন চলাচলের দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

শিল্প নগরী ছাতকে ১৯৫৪ সালে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি স্থাপন করা হয়। বৃট্রিশ আমল থেকেই দেশ-বিদেশেরমধ্যে ব্যবসা-বানিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ট্রেন যাত্রীদের সেবায় একনিষ্ট ছিল।

রেলওয়ে সেবা ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এক সময় পুরস্কার পাওয়ারও রেকর্ড রয়েছে এই ষ্টেশনের। ট্রেন চালুর পর ছাতক বাজার রেল ষ্ট্রেশন থেকে ৪টি পণ্য পরিবহন ট্রেন ও প্রতিদিন ৪ বেলা চলাচল করতো। এছাড়া মালামাল পরিবহনে ৪টি ট্রেনে সিমেন্ট, জিপসাম, ভাঙ্গা পাথর, চুনাপাথর ও কমলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কম খরচে পরিবহন করা হতো।

ট্রেন চালুর শুরুর দিকে ছাতক থেকে সিলেটে যেতে ভাড়া ছিল ৪ আনা। বর্তমানে ছাতক থেকে সিলেটের জনপ্রতি যাত্রী ভাড়া মাত্র ১০টাকা। ছাতক থেকে এখন ট্রেনে সিলেটে পৌছতে সময় লাগছে সর্বোচ্চ একঘন্টা ১০মিনিট।

সিলেট শহর থেকে প্রতিদিনই ট্রেনে করে ছাতক শহরে অফিস করতেন প্রাইভেট একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বড় দূর্ভোগ নিয়ে প্রায় ২শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে এখন সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় ছাতকে নিয়মিতই যাতায়াত করতে হচ্ছে।

স্বল্প ভাড়ায় এখন সহজেই ট্রেনে ছাতকে যাতায়াত করতে অনেকটাই সুবিধা ছিলো। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে নজরদারী বাড়ালে রেলওয়ের আয় আরও বেশী বৃদ্ধি পাবে. এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা বলেন, অল্প খরচে ও নিরাপদে সিলেট শহরে যাতায়াতে ট্রেন চালুর পাশাপাশি রেলপথের জনবল বৃদ্ধি একান্ত প্রয়োজন। রেললাইনের সংস্কার, ট্রেনের বগিবৃদ্ধি ও ষ্টেশনের আধুনিকায়ন করা হলে ট্রেনের যাত্রীর অভাব হবেনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

ছাতক বাজার রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার আবু নাসের মো. রাসেল বলেন, এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় আমাকে প্রেশনে এখন সিলেটে কাজ করতে হচ্ছে। ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন যাত্রীগন দূর্ভোগে পড়েছেন, বিষয়টি ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

রেলওয়ে চট্রগ্রাম (পূর্ব) অঞ্চলের প্রধান পরিচালনা তত্তাবধায়ক এ এম সালাহ উদ্দীন বলেন, করোনাকালীন সময়ের কারনে এখনও অনেক লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পর্যায় ক্রমে দেশের সব ট্রেন চালু করা হচ্ছে। ছাতক-সিলেট রেলপথেও ট্রেন চালুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button