৩৫ বছর পর এলো গ্রীনকার্ড, ছুঁয়ে দেখা হলো না দরবারের।
দরবার হোসেন প্রবাসী বাংলাদেশি। ১৯৮৫ সালে এসেছিলেন স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। জীবনের জন্য করেছিলেন কঠিন সংগ্রাম। নিউইয়র্কে করেছেন কনস্ট্রাকশণসহ নানা কাজ।
তার দুই ছেলে রয়েছে আমেরিকায়। তারা দু’জনই আইটি বিশেষজ্ঞ। তাদের একজন কাজ করেন ওহাইয়োতে অন্যজন মিশিগান রাজ্যে। দরবার হোসেন বাস করতেন নিউইয়র্কের জ্যামাইকায়। তার দেশের বাড়ি ঠাকুরগাঁয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে ছিল না তার কোন বৈধ কাগজপত্র। রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন এখানে। বৈধ হয়ে দেশে ফেরার আকুতি ছিল তার। ৩৫ বছর পর, সম্প্রতি তার গ্রীনকার্ড এসেছে।
আর তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শুনেছেন গ্রীনকার্ড হয়েছে তার। তবে স্বপ্নের সেই গ্রিনকার্ড ছুঁয়ে দেখারও ভাগ্য হয়নি তার।
ল’ অফিস অব এহসানের সহকারি আইন বিশেষজ্ঞ ড. রফিক আহমেদ জানান, বৈধ কাগজ করার জন্য অনেকের কাছেই গিয়েছিলেন।
অনেক অর্থও ব্যয় করেছিলেন, চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি। আমাদের ল’ফার্ম থেকে আমরা তার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলাম।
তার ইন্টারভিউর সময় আমি সাথে গিয়েছিলাম। করোনাকালে তার গ্রীনকার্ড আমাদের কাছে এসেছে। আমি তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। গ্রীনকার্ডের কথা শুনে ভেজায় খুশি হয়েছিলেন দরবার হোসেন। বলেছিলেন করোনা দুর্যোগ শেষ হলে তিনি অফিস এসে তার গ্রীনকার্ড নিয়ে যাবেন।
কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস- দরবার হোসেন গত ১৬ মে তার জ্যামাইকাস্থ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।(ইন্না লিল্লাহিৃ রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৪ বছর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, হার্ট এ্যাটাক না করোনায় মারা গেছেন তা আমি সঠিকভাবে জানি না।
তিনি বলেন, তার ছেলেরা আসছে তারাই ভাল বলতে পারবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে দু:খজনক বিষয় হলো- যে কার্ডের জন্য ৩৫ বছর অপেক্ষা সেই কার্ড আসল ঠিকই; দরবার হোসেন কার্ডটি হাতে নিয়ে ধরেও দেখার সুযোগ পেলেন না।
এই ৩৫ বছরে তিনি যে আর কি হারিয়েছেন তা তিনিই জানেন। কিন্তু গ্রীনকার্ডের স্বপ্ন যখন দরবার হোসেনের পূরণ হলো- তখনই পরপারে চলে যাবার সময়ও হলো। এটাই হলো নিয়তি।