বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এডভোকেট সামসুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনি।
সাহাদাৎ হোসেন শাহীন, জেলা প্রতিনিধি-(নারায়ণগঞ্জ)
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এডভোকেট সামসুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বিগত ৩ এপ্রিল ১৯৪৯ সনে সোনার গাঁ এর নিজ পৈত্রিক বাড়িতে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৬৪সালে ঐতিহ্যবাহী বারদি হাইস্কুল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৬ সালে তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তোলারাম কলেজ বিজ্ঞান পরিষদের জিএস নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐতিহাসিক ১১ দফা ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে সকগ্র ঢাকা জেলায় তৎকালীন জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীর জয়লাভের পক্ষে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন।
১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধু কত্রিক ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ভাষণের এলাকায় বঙ্গবন্ধুর নৈকট্যে থেকে ছাত্রলিগের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ধাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে ছাত্র ও যুব সমাজকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ স্বাধিনবাংলার জাতীয় পতাকা গ্রাম-গঞ্জে পৌঁছে দেয়া ও বিভিন্নস্থানে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে তথায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসাবে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু কত্রিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের লক্ষে এপ্রিলের শেষদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আগরতলা মুক্তিযোদ্ধা প্রশক্ষণ কেন্দ্র ‘‘গোকুল নগর ইয়থ ক্যাম্প’’ এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে প্রায় ৮০ হাজার যুবকের মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং প্রদান করেন।
তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ছাত্রলীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।তিনি ১৯৮৭ সালে সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সোনারগাঁ সমিতি, সোনারগাঁ আইনজীবী সমিতি ও সোনারগাঁ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্রাক্তন প্রচার সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, এডহক কমিটির সদস্য ও বর্তমানে কার্যকরী সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন করার সময় তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালীন সময় কারাবরণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে শাহাদাৎ বরণ করার সংবাদ প্রাপ্তির পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন বাংলাদেশে প্রথম জেলার ছাত্র সমাজকে নিয়ে উক্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় সর্বপ্রথম তৎকালীন সেনাবাহিনী কত্রিক গ্রেফতার এবং দীর্ঘদিন শারীরিক নির্যাতনের শিকার, স্ত্রী ও পরিবারের সকল সদস্যকে অমানবিক হয়রানি ও নির্যাতন ভোগ করতে হয়। একান্ত নিরুপায় হয়ে জনাব ভূঁইয়াকে স্ত্রিসহ অন্যান্য সদস্যদের অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া নারায়ণগঞ্জ টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান,রেডক্রিসেন্টের আজীবন সদস্য। ১৯৫০ সালে নিজপিতা কত্রিক প্রতিষ্ঠিত পরমেশ্বরদি সিনিয়র মাদ্রাসার তিঙই নির্বাচিত সভাপতি। নারায়ণগঞ্জ উত্তর চাষারা বড় মসজিদ ও মাদ্রাসা মসজিদ কমিতিরও তিনি নির্বাচিত সভাপতি।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু কত্রিক প্রতিষ্ঠিত ‘’বাংলার বানি’’ পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে বন্ধের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত পত্রিকার সাংবাদিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ঐ সময় প্র্য়াত নেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও জনাব শেখ ফজলুল হক মনির ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি দৈনিক আজকের জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদকন্ডলির সদস্য, দৈনিক প্রভাত পত্রিকার স্টাফ রিপোরটার, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও বজ্রকন্ঠ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
১৯৭২ সন থেকে ১৯৭৫ সন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য এ,কে,এম শামসুজ্জোহার একান্ত সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও স্নেহের কর্মী হিসাবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সান্নিধ্যে আসা একত্রে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা এবং ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর নিকট সু-পরিচিত ছিলেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কত্রিক বিশেষ প্রশিক্ষণের জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হন।তিনি নারায়ণগঞ্জের সাবেক সরকারী ও ভিপি কৌসুলি এবং অগ্রণী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের লিগ্যাল এডভাইজার।
২০০৩ সালে তিনি স্ব-পরিবারে পবিত্র হজব্রত পালন করার সময় (তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রি) বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌভাগ্যক্রমে মদিনার কাছাকাছি একটি হোটেলে গিয়ে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ হয়। সেখানে সদ্য প্রয়াত ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। একই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে লিফটে নেমে পায়ে হেঁটে তাঁকে মসজিদ-এ-নববিতে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন।সাংবাদিক হিসাবে তিনি শ্রিলংকা, সিংগাপুর, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সফর করেন।
সামসুল ইসলাম ভূঁইয়ার পিতার নাম আলহাজ তোরাব আলী ভূঁইয়া সোনারগাঁ উপজেলাধীন নোয়াগাও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে প্রায় ১২ বছর অতি সুনামের দাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার সহ-ধর্মিণী অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ শিরিন বেগম বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য। তাছাড়া তার প্রতিষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।