মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক সমিতির পদত্যাগের দাবি জবি নীলদলের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষক সমিতি ২০২০- র পদত্যাগ দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল (একাংশ)। তারা আর কোনভাবেই শিক্ষকদের প্রতিনিধি নয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক সমিতিকে কোন প্রকার স্বীকৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি বিনীত আহ্বান জানিয়েছে জবির নীলদল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের সভাপতি ড. মো. আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
নীলদল বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সকল শিক্ষকের প্রত্যক্ষ সমর্থনের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি স্বাধীন সংগঠন। সমিতি সকল শিক্ষকের আশা-আকাঙ্খা, ন্যায্য দাবী-দাওয়া প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উন্নয়ন, শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং সকলের জন্য একাডেমিক ও অন্যান্য সুবিধাদি নিশ্চিত করতে সমিতি দায়বদ্ধ। কিন্তু শিক্ষক সমিতি ২০২০ এর নেতৃবৃন্দ শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে বেশী আন্তরিক ও তৎপর।
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতি ২০২০ এর বৈধতা হারানোর চারটি কারণ উল্লেখ করেছে জবি নীলদল। শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে তাদের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা। কিন্তু এই সমিতি শিক্ষকদের প্রতি দায়বদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে এবং সমিতির সর্বসম্মত গঠনতন্ত্রকে অবমাননা করে অবৈধভাবে ০২ (দুই) বছর পদ আঁকড়ে ধরে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত। যথাসময়ে নির্বাচন কমিশন গঠন না করে তারা শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র লংঘন করেছেন। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের জাতীয় পর্যায়ের বহু সংগঠনে ইতিমধ্যে নির্বাচন হয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষক সমিতি এবারের ভর্তি পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে গোষ্ঠী স্বার্থকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। সমিতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক সহকর্মীর চাকুরীচ্যুতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে সমিতির গত ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সাধারণ সভার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। চাকুরি স্থায়ীকরণে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নিরব থাকলেও প্রশাসনিক বিভিন্ন পদ পদবীর আশায় সমিতির বার্গেনিং চরিত্রটিকে দুর্বলতর অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন।
নীলদলের বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, শিক্ষক সমিতি ২০২০ এর এহেন কর্মকান্ডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের মর্যাদাহানি হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষক সমিতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আইনগত এবং নৈতিক কোন অধিকার নেই। সুতরাং তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। একই সাথে এই মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক সমিতিকে কোন প্রকার স্বীকৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ তারা আর কোনভাবেই শিক্ষকদের প্রতিনিধি নয়।
এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের সভাপতি ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, জবিশিস-২০২০ সাধারণ শিক্ষকদের ম্যান্ডেট নিয়ে শিক্ষকদের কল্যাণে বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল যার মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২০- এ শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও সাধারণ শিক্ষকদের মতামতকে উপেক্ষা করে এ সমিতি প্রায় দুই বছর যাবত দায়িত্ব পালন করে আসছে যা সমিতির গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। সমিতির গঠনতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সাধারণ শিক্ষকদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে জবিশিস -২০২০ থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। তারা যেনো পরিচয় দিয়ে প্রোগ্রাম না করে কেননা তাদের পদ ব্যবহারের একতিয়ার নেই। শিক্ষক সমিতিকে বলতে হবে সাবেক।
ড. মো. আবুল হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জবিশিস) ২০২০- র কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বুধবার রাতে শিক্ষক সমিতির পদ থেকে অব্যাহতি চান এবং পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর পরপরই জবি নীলদলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানান।
এদিকে ড. মো. আবুল হোসেনের পদত্যাগ ও জবি নীলদলের পক্ষ থেকে শিক্ষক সমিতির পদত্যাগের দাবি জানানোর পর পরই সামনে আসে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন কমিশন গঠনের খবর। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের ২৩ তম সভার সিদ্ধান্ত ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন ২০২২ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনীত করে নিম্নরূপ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন -২০২২, ২৫ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা ১০ অক্টোবর শিক্ষক সমিতির প্যাডে প্রকাশ করা হয়।
এদিকে ক্যাম্পাস খুলার পর পরই শিক্ষক সমিতির ব্যানার ও পদ পরিচয়ে নিজেরা প্রোগ্রাম করেন ও অন্য প্রোগ্রামেও অংশ নেয় বর্তমান নেতারা। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জবি নীল দল।
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতি নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, এজিএম এর (সাধারণ সভা) মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তর না করা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি বহাল থাকবে। তবে এ সময় সমিতি সীমিত আকারে তাদের কার্যাবলী পরিচালনা করবে। কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা আয়োজন করতে পারবে। দায়িত্ব হস্তান্তর ব্যতীত কোন সাধারন সভার আয়োজন করা যাবে না। ড. আবুল হোসেন যখন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন শিক্ষক সমিতি কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচিত হওয়ার পরেও পিকনিকের আয়োজন করেছিলেন। গত শিক্ষক সমিতিও ইলেকশন কমিশন গঠনের পরে পিকনিকের আয়োজন করেছিল।
এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. সুরঞ্জন কুমার বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালিত হবে। তফসিল ঘোষণার কাজ আজ থেকে শুরু হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির গণতন্ত্রের ধারা ৫ এর ৩ উপধারায় কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদের বিষয়ে লিখা আছে যে, “কার্যনির্বাহী পরিষদের মেয়াদ হবে বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান পরিষদ দায়িত্ব পালন করবে।”
তবে এ ব্যাপারে জবি নীলদলের নেতাদের বক্তব্য এক বছরের কমিটি দুই বছর ধরে চলছে। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর তো রুটিন দায়িত্ব। তাই বলে নেতৃত্ব ধরে রাখবে তা কোনো ভাবেই মেনে নিতে রাজি নয় নীলদলের শিক্ষক নেতারা।
এর আগে গত বছরের ২৫ নভেম্বর শিক্ষক সমিতির বর্তমান কমিটির দ্বিতীয় সাধারণ সভার ৫ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক (সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা প্রদানের এক মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থাকরণ। সে সময় পর্যন্ত বর্তমান শিক্ষক সমিতি দায়িত্ব পালন করবে।) করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর একটি সাধারণ সভা আয়োজন করে সভার মতামতের প্রেক্ষিতে কার্যনির্বাহী পরিষদ কর্তৃক নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় জবিশিস।