করোনাকালীন আমেজ ছাড়াই কপিলমুনির কপোতাক্ষ কালীবাড়ী ঘাটে বারুণী স্নানোৎসব
এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা)
করোনাকালীন আমেজ ছাড়াই কপিলমুনির কপোতাক্ষ কালীবাড়ী ঘাটে বারুণী স্নানোৎসব
করোনা মহামারীতে এবারো বিশেষ আয়োজন ছাড়াই কপোতাক্ষের ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি কালীবাড়ী ঘাটে মহাবারুণীর স্নান করেছেন পুণ্যার্থীরা। প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধূকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কপিলমুনি কালী বাড়ি ঘাটে পালন করেন বারুণীর স্নান উৎসব।
তবে করোনাসহ নানা সংকটে এবারো কোন প্রকার মেলার আয়োজন ছাড়াই শুধুমাত্র স্নানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বারুণী স্নান।
বারুণী স্নান’র ইতিহাস থেকে জানাযায়, প্রায় ৪ শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে কপিল দেব নামে এক মুনি কপোতাক্ষের সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কালীবাড়ী ঘাটে তপধ্যানে মত্ত থেকে সিদ্ধিলাভ করেন। তার সিদ্ধিলাভের দিনেই সেই স্মরণাতীত কাল থেকে জনপদের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কালীবাড়ী ঘাটে বারুণী স্নান করে আসছেন।
কথিত আছে, কপিল দেবের এক ভাই জরাসন্ধ ১ শ’ নৃপতিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নরমেধ যজ্ঞ শুরু করেন। এলক্ষে অনেক তিনি হত্যাকান্ড শুরু করলে তার বৈমাত্রেয় ভাই কপিল তাকে প্রশমনে ইশ্বরের সাহায্য প্রার্থনায় সিদ্ধিলাভের আশায় বিভিন্ন স্থানে তপধ্যান শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি কপিলমুনির কালীবাড়ী ঘাটের এই স্নানঘাট সংলগ্ন বটবৃক্ষের মূলে বসে তপধ্যান শুরু করেন এবং সিদ্ধি লাভ করেন। ঐসময় তিনি যে সকল স্থানে তপধ্যান করেছিলেন, সেই সকল স্থানে প্রতি বছর মধূকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে সনাতনীরা বারুণী স্নানোৎসব পালন করেন।
তাদের বিশ্বাস, এই তিথিতে গঙ্গার জল এই স্থানে প্রবাহিত হয়। এবং গঙ্গার জলে স্নান করলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়। আর সেই লক্ষে জনপদের সনাতনীরা স্মরণাতীত কাল থেকে কালীবাড়ী ঘাটে স্নানোৎসব পালন করে আসছেন।
তবে অনেকে মনে করেন, বরুণ জলের দেবতা, আর বারুণী তার স্ত্রী। তাকে তুষ্ট করতেই সনাতনীরা বারুণী স্নান করে থাকেন। তবে মতান্তর থাকলেও স্মরণাতীতকাল থেকে কপিলমুনির কালীবাড়ী ঘাটে পালিত হয়ে আসছে বারুণী স্নানোৎসব।
এছাড়া স্নানোৎসবকে ঘিরে কপিলমুনিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বারুণী মেলা। মেলা উপলক্ষে এক সময় যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, মৃত্যুকূপসহ চিত্ত বিনোদনের নানা পসরার সাথে বসত বিভিন্ন খেলনা, কাঠের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পসরায় সাজানো হয় মেলা। তবে কয়েক বছর আগে থেকে স্থানীয়দের সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক অস্থীরতা, যায়গার অভাবসহ নানা সংকটে দীর্ঘ দিন কপিলমুনিতে বন্ধ রয়েছে বারুণী মেলা।
বারুণী মেলা চলত এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে পক্ষ কাল কিংবা ২০/২৫ দিন ১ মাস পর্যন্ত। বারুণী স্নান সনাতনীরা করলেও বাঙালি সংষ্কৃতির সাথে মিলে-মিশে মেলা উদযাপন করতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদের সকল ধর্ম বর্ণর মানুষরা। তবে বেশ ক’ বছর ধরে মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বারুণী মেলা।
এব্যাপারে কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়াদ্দার বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে সরকারী নির্দেশানা মেনেই সকাল ৭ টা থেকে কপিলমুনির কপোতাক্ষ কালীবাড়ী ঘাটে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বারুণী স্নান উৎসব পালন করেছেন। এসময় তিনি কালীবাড়ী ঘাটে পুন্যার্থীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
পাইকগাছা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস বলেন, করোনা মহামারীতে এক প্রকার অনাড়ম্বর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বারুণী স্নান উৎসব পালন করেছেন।
তবে মহামারী পরবর্তী আগামী বছর থেকে ঐতিহ্যবাহী মেলাটিকে আগের ন্যায় ফিরিয়ে আনতে সনাতন ধর্মাবলম্বী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।