নিত্যপণ্যের লাগাম ছাড়া দামে বিপাকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত
চাল থেকে ডাল, ভোজ্য তেল থেকে জ্বালানি। প্রায় সব নিত্যপণ্যের লাগামছাড়া দামে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। আয়ের চেয়ে ব্যয়ের ব্যবধান রোজ বাড়তে থাকায় ক্রমেই দুঃসহ হয়ে উঠছে জীবন। বেশি দামের চাপে মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাপা কষ্টগুলো রোজকার সঙ্গী।
এমন অবস্থায় সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার ও পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। সেইসঙ্গে কমেছে ডিমের দাম। তবে সবজির দামে মিশ্র প্রবণতা রয়েছে। কিছু সবজির দাম বেড়েছে এবং কিছু সবজির দাম কমেছে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে দামে খুব একটা হেরফের না হলেও সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
আজ (শুক্রবার, ৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহে আগে ছিল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ২০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি কমেছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবে লেয়ার মুরগি আগের মতো ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দাম কমার বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী খায়রুল হোসেন বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির আমদানি (সরবরাহ) বেড়েছে। খামারেও প্রচুর ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। এ কারণে এখন ব্রয়লার মুরগির দাম পড়তি। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কমায় সোনালি মুরগির দামও কমেছে। অস্বাভাবিক কিছু না হলে সামনে মুরগির দাম আরো কমবে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, বন্যা এবং খামারে উৎপাদন কম হওয়ায় মুরগির দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে মুরগির দাম আবার কমে আসছে। তবে তেলের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহনের যে ধর্মঘট চলছে তা অব্যাহত থাকলে মুরগির দাম আবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মুরগির পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দামও কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিম এখন ১১০ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর পেঁয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা আগের মতোই সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর ও টমেটো। মান ভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে নতুন করে দাম বেড়েছে শিম, ঢেঁড়সের। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম বেড়ে এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে পটল, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এক পিস ফুলকপির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে একই থাকলেও এখন আগের তুলনায় বেশ বড় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে মিরপুর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী জুনাইয়েদ বলেন, আগে যে ফুলকপি ৫০ টাকা পিস বিক্রি করেছি, এখন প্রায় তার তিনগুণ বড় ফুলকপি ৫০ টাকা পিস বিক্রি করছি। এ হিসাবে ফুলকপির দাম কমেছে। শুধু ফুলকপি না নতুন আসা বেশিরভাগ সবজির দাম এখন কমতির দিকে। তবে পুরাতন সবজির দাম বাড়তি। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে ঢেঁড়সের দাম। সিজন শেষ হয়ে আসার কারণে ঢেঁড়সের এমন দাম বেড়েছে।
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাক বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন আসা পালন শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আলিম মোল্লাহ্ বলেন, দিন যত যাচ্ছে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। সুতরাং সামনে সবজির দাম কমে আসবে। তবে ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে এখন পরিবহন খরচ বেড়ে যেতে পারে। ফলে সহসা সবজির দাম খুব একটা কমবে বলে মনে হয় না। বরং পরিবহন ধর্মঘট চলমান থাকলে দাম আরো বাড়তে পারে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছ। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি।
মাছের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রহিম উদ্দীন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশ মাছের দাম একটু বেশি। তবে কিছুদিন আগের তুলনায় এখন ইলিশ মাছ কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ আমরা ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
বাজারটির আরেক এক ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম নতুন করে বাড়েনি। আগে থেকেই মাছ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। সহসা মাছের দাম কমবে বলেও মনে হচ্ছে না।