বেনাপোল বন্দরে ৬৫টি পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে বন্দি জীবন-যাপন করছে।
এসএম স্বপন, যশোর প্রতিনিধিঃ
বেনাপোল বন্দরে ৬৫টি পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে বন্দি জীবন-যাপন করছে।
বন্দি জীবন দশা থেকে রক্ষা পেতে চাই বেনাপোল বন্দরের টিটিআই (ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল) এর পশ্চিম পার্শ্বে বসবাসরত প্রায় ৬৫টি পরিবারের ৫ শতাধিক জনগন। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে তারা জীবন যাপন করছে।
২০০৭ সালের ১১ই নভেম্বরের আগে এই জায়গাটি ছিলো উন্মুক্ত। পরে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরকে সু-রক্ষিত রাখার জন্য গ্রামের পাশ দিয়ে নির্মান করে প্রাচীর। আটকা পড়ে এ সব বসবাসকারীরা। পরে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের বাঁধার মুখেও নিজেদের বন্দি দশা থেকে বাঁচতে নির্মিত প্রাচীর কয়েক জায়গায় গোলাকারে ভেঙে যাতয়াত করে থাকে। সে ক্ষেত্রে অসুস্থ্য রোগী ও ছোট শিশুদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
তাছাড়া রাত হলেই শুরু হয় ভারত থেকে আমদানীকৃত লোহা ও লৌহ জাতীয় পণ্যের আনলোডের বিকট শব্দ। যে শব্দের কম্পন শুরু হয় সারা এলাকা জুড়ে । স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ও ছোট শিশুরা থাকে আতংকে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী কয়েকবার বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিক ভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়ে মানবিক আবেদন করলেও অদ্যবধি কোন কাজ হয়নি।
তাছাড়া তাদের আশু সমাধান ও প্রাচীর সরাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী কয়েকবার। এ ব্যাপারে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বন্দি বসবাসকারীদের পক্ষে তাদের আশু সমাধান চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করলেও তার কার্যকারিতার ধীরগতি ভাবিয়ে তুলেছে বসবাসকারীদের। কবে নাগাদ এর সমাধান হবে তারা তা নিশ্চিত জানেন না।
তাছাড়া বন্দরের পার্শ্ববতি বসবাসকারী ইসরাইল সর্দারের বাড়ীর সামনেই বসানো হয়েছে আমদানী-রপ্তানী পন্য পরীক্ষার স্ক্যানিং মেশিন। যে মেশিন থেকে বের হয় দূষিত বায়ু। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া আমদানী পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকের ইঞ্জিনের কালো ধুয়ায় বায়ু দূষন তো নিত্য দিনের ঘটনা। এ দিকে বন্দরে ভারী জাতীয় মালামাল ও লৌহজাত পণ্য সামগ্রী লোড আনলোডের ফলে বসবাসকারীদের বাড়ী ঘরে প্রচন্ড ঝাঁকুনিসহ উচ্চ শব্দের সৃষ্টি হয়। যা বসবাসকারীদের জন্য অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে বলে জানান বন্দরের পার্শ্ববর্তী বসবাসকারীরা।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী বসবাসকারী ইসরাইল সর্দার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক লিটন জানান, এলাকার কোন বাড়ীতে এখন আর ভাড়াটিয়ারা থাকতে চাই না। অনেক বাড়ী ভাড়াটিয়ার অভাবে ভুতুড়ে অন্ধকারে পড়ে আছে। তবে জনস্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে ও বন্দরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই এলাকাটি অধিগ্রহন করলে সকল সমস্যার সমাধান হবে নিশ্চিত।
শার্শা উপজেলা (নাভারন) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহম্মাদ ইউসুফ আলী জানান, বন্দরের পার্শ্ববতী সমস্যা কবলিত এলাকায় বসবাসরত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে বায়ু দূষন ও কম্পন চলতে থাকলে ক্ষতিগ্রস্থ্য হবে তারা।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, বন্দি বসবাসকারী জনগন এবং ঐ এলাকায় পরিবেশ দূষন হচ্ছে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ইতিমধ্যে একটি তদন্ত টিমের কাজ ও চলছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, এলাকাবাসীর সমস্যা ও অভিযোগ আমরা ইতিমধ্যে আবেদনের মাধ্যমে পেয়েছি এবং বন্দর কতৃপর্ক্ষকে জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমাধানের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী জানান, বন্দরের (টিটিআই) পশ্চিম পার্শ্বে ৬৫টি পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিত মানুষের সমস্যার কথা আমরা জেনেছি। বন্দরের প্রাচীর নির্মানের ফলে তারা আটকা পড়েছে। তাছাড়া এলাকাটি বন্দর এলাকায় হওয়ায় বায়ু দূষন সহ বসবাসে নানা সমস্যাও আছে। এ এলাকাটির সমস্যা সমধান নিয়ে আমাদের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী তাদের বন্দি জীবনের মুক্তি চেয়ে ও আশু সমস্যার সমাধান চেয়ে প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।