জেলার খবর

কি অপরাধ ছিল কিউট নবজাতকটির! বাঁশখালীতে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য

এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)

কি অপরাধ ছিল কিউট নবজাতকটির! বাঁশখালীতে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য

কি অপরাধ ছিল ফুটফুটে এ নবজাতকের(!) কেনইবা ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে নাড়িছেঁড়া কলিজার ধনকে হাসপাতালের শয্যায় একা ফেলে চুপে চুপে পালিয়ে গেল জন্মদাত্রী মা-জননী? অবুঝ মাছুম নবজাতকটি সদ্য ভূমিস্ট হয়ে পৃথিবীর আলো দেখার আনন্দে মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য যখন ওঁয়া ওঁয়া করে কেঁদে উঠল তখন কি রাতের আঁধারে পালিয়ে যাওয়া মায়ের কলিজাও কেঁপে উঠেনি? নাড়িকাটা সন্তানের মায়ায় সে সন্তান প্রসব করা মা কি হোঁছট খেয়ে পড়ে যায়নি? এমনতর অনেক মানবিক প্রশ্নের অজানা উত্তর আজ নির্মম বেদনা হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে-বাতাসে।

১ আগস্ট’২১ ইং বুধবার, রাত প্রায় সাড়ে ৯ টা। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হল এক সন্তান সম্ভবা মা। কর্তব্যরত ডাক্তাররা মায়ের পরিস্থিতি দেখে নাম ঠিকানা তথ্যানুসন্ধানের ছেয়ে জরুরী মনে করলেন নিরাপদ ডেলিভারীর ব্যবস্থা করার। সংক্ষেপে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রেজিস্টারে রেকর্ড করলেন রোগীর পরিচয়।

অর্চনা বড়ুয়া, স্বামি সুবোধ বড়ুয়া, বাঁশখালী জলদী পৌরসভা। যথারীতি কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে জন্ম নিল ফুটফুটে মায়াবী কিউট এক নবজাতক। সন্তান জন্ম দেওয়ার কিছুক্ষন পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত নার্স ভিজিটে এসে দেখে বিছানায় সদ্য ভূমিস্ট নবজাতক সন্তানটি বড্ডো একা একা অসহায় হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে।

নবজাতক অবুঝ সন্তানের ব্যাথাতুর হৃদয়ে তখনিই হয়ত জানা হয়ে গেছে দির্ঘ সাড়ে ৯ মাস বা ১০ মাস তাকে যে মা পেটে বহন করে হৃৎপিন্ড থেকে রক্ত সরবরাহ করেছে, ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করেছে সে ভালবাসার মাটি মুহুর্তেই অমানুষ হয়ে রাতের আঁধারে চুপি চুপি পালিয়েছে, সাথে হয়তো তার সেই জন্মদাতা পিতাও। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাল্পনিক মিথ্যা ও ভূঁয়া ঠিকানা রেজিস্টারে রেকর্ডকারী সেই মা অর্চনা বড়ূয়া এবং বাবা সুবোধ বড়ূয়াকে সবদিকে খুঁজাখুজি শুরু হল, নাহ কোথাও পাওয়া গেলনা কছিুক্ষন আগেই সন্তান প্রসব করা সেই মাকে।

যেভাবেই হউক যে মা’টি প্র্যােগনেন্ট হয়েছিল সে গর্ভের সন্তানকে দেখাতে হবে পৃথিবীর আলোর মূখ। তাই সন্তান জম্ম দেওয়ার পরেই উধাও সন্তানের কথিত পরিচয় দানকারী নবজাতক ছেলের বাবা মা। এমন চাঞ্চল্যকর, হৃদয়বিদারক ও বাস্তব নাটকের দৃশ্যের অবতারণা ঘটনা ঘটেছে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদারের কাঁছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মিথ্যা ও ভূল তথ্য দিয়ে গতকাল রাত সাড়ে ৯ টার সময় হাসপাতালে প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে ভর্তি হয় এক যুবতি। ভর্তির পরপরই একটি ছেলে সন্তানের জম্মদেয় ঐ যুবতি। সন্তান জম্ম দেওয়ার ঠিক আধা ঘন্টা পরেই হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যায় নবজাতকের মা বাবা। রোগীর পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতাল রেজিস্টারে তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লিখায় তাদের পুর্নাঙ্গ ঠিকানা জানা যায়নি।

বর্তমান ওই নবজাতক হাসপাতালের হেফাজতে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে ইতিমধ্যে বাঁশখালী থানায় একটি জিডি করা করা হয়েছে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় উপজেলা সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে নবজাতকটিকে থানায় হস্তান্তর করা হবে।হাসপাতালের রেজিষ্টারে নির্দিষ্ট ঠিকানা লিপিবদ্ধ না করার কারণ জানতে চাইলে জনাব মজুমদার বলেন প্রসব ব্যাথা ও যন্ত্রনা নিয়ে আসা একজন রোগীর তাৎক্ষনিক পূর্নাঙ্গ ঠিকানা লিপিবদ্ধ করার চেয়ে চিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করাই ছিল গুরুত্বপুর্ন।

এ ঘটনায় পুরো বাঁশখালীতে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরপর নিঃসন্তান অনেক দম্পতি ওই নবজাতককে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সকাল থেকেই বাচ্চাটি নেওয়ার জন্য অনেকেই ভীড় জমায় হাসপাতাল এলাকায়।

পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তপন বড়ুয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে নবজাতকের পিতা-মাতার সঠিক সন্ধানে পুলিশ ও পৌর প্রশাসনের লোকজন অনেক অনুসন্ধান চালিয়েছে। উল্লেখিত নামে আমার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়া এলাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি।

সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মাতা-পিতা। তদ্রুপ মা-বাবার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সুসন্তান পার্থিব জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। ধন-সম্পদ প্রাণ রক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশ রক্ষার মাধ্যম।সন্তানের প্রতি মা-বাবার রয়েছে অসংখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। জম্মের পর সন্তান তাঁর বাবা মা’র সন্ধান না পাওয়া এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে নীতি-নৈতিকতাহীন সমাজ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে দেখছেন সুশীল সমাজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button