পাইকগাছায় উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনে নৌকাপ্রার্থী মন্টু’র জয়লাভ; ধানেরশীষ প্রার্থী মজিদের প্রত্যাখ্যান।
এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা)
পাইকগাছায় উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনে নৌকাপ্রার্থী মন্টু’র জয়লাভ; ধানেরশীষ প্রার্থী মজিদের প্রত্যাখ্যান।
পাইকগাছা উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচন দুএকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৭৯টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার ইকবাল মন্টু উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী ডাঃ আব্দুল মজিদ। তিনি বিকাল পৌনে ৫টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনিয়মের অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখান করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান। নির্বাচনে কোথাও কোন সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার দাবি করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে ২জন প্রার্থী মুলত প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টু এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক ডাঃ মোঃ আব্দুল মজিদ।
নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষথেকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষনিক নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার। স্থানীয় সরকার উপ-নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকায় ভোটদিতে কোন ভোগান্তি হয়নি বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।
গোপালপুর গ্রামের চা বিক্রেতা আব্দুল হামিদ গোলদার বাবু জানান, নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দোকান রেখে ভোট দিতে গিয়েছি। আলমতলা গ্রামের কুলসুম বেগম জানান, কোন বাঁধা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে ভোট দিয়েছি। প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু জানান, ভোটারদের উপস্থিতি একটু কম ছিল তবে ভোটদিতে কোন ভোগান্তি হয়নি। নির্বাচনে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী ৭৬হাজার ৪৫ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার ইকবাল মন্টু বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ মোঃ আব্দুল মজিদকে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বেসরকারী ভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মজিদ পেয়েছেন ২হাজার ৯শ ৫২ ভোট।
এদিকে বিকাল পৌনে ৫টায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখান করেন বিএনপির প্রার্থী ডাঃ আব্দুল মজিদ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ধানের শীষ প্রতীকের এ প্রার্থী নিজেই ভোট দেয়নি এবং কোন কেন্দ্র পরিদর্শন করেননি বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, নির্বাচনে কোথাও কোন সংঘাত কিংবা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। ভোটার উপস্থিতি একটু কম ছিল, আমি নিজেই বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি কোন প্রার্থী তাদের কর্মী সমর্থক এমনকি ভোটারাও কোন অভিযোগ করেনি। সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে।
বিজয়ী প্রার্থী আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান এনির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখান করেছে। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আকতারুজ্জামান বাবু’র আশির্বাদ ছিল। দলীয় সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে, আর সাধারণ মানুষ ভালোবেসে ভোট দিয়েছেন এজন্য বিশাল ব্যবধানের জয় হয়েছে। এবিজয় শুধু আমার একার নয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এবিজয় জনগনের, এবিজয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের। বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী করার জন্য এলাকাবাসী দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আনোয়ার ইকবাল মন্টু।
এদিকে জাল ভোট প্রদানকালে হাতেনাতে ৪জনকে আটক করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পলিং এজেন্ট থাকলেও ৭০ টি কেন্দ্রে ধানের শীষের পলিং এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি’র প্রার্থী আব্দুল মজিদ।
জানাগেছে, উপজেলার সলুয়া-রামনাথপুর কেন্দ্রে ভোট প্রদানকালে নৌকা প্রতীকের পলিং এজেন্ট সুধীর কুমার দাশ ও সাহাদাৎ হোসেন এবং পৌরসভার টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানকালে মধু বাছাড় ও প্রসেনজিত ঢালীকে পুলিশ আটক করে থানা হেফাজতে রেখেছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজাজ শফী জানান, ধৃতদের ব্যাপারে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, জাল ভোট প্রদানকালে আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।