শিক্ষাঙ্গন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠান সূচির সময় পরিবর্তন।

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি প্রতিনিধিঃ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠান সূচির সময় পরিবর্তন।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এবং ১৬২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামী ২০ অক্টোবর (মঙ্গলবার)।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারীতে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন, ভার্চ্যুয়াল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি একমাত্র ছাত্রী হলের উদ্বোধন।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) উপাচার্যের মহোদয়ের আদেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামানের স্বাক্ষরিত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিবর্তিত সময়সূচি প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ২০ অক্টোবর, ২০২০ (৪ কার্তিক) মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-২০২০ তথা ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মহামারী করোনা কারণে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অনিবার্য কারণবশত: অনুষ্ঠান সূচির সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে শহীদ মিনার চত্বরে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনা (৯ টা ১০), বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন (৯ টা ১৫), জবির একমাত্র হল প্রাঙ্গণে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শুভ উদ্বোধন (৯ টা ৩০) করবেন অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান (মাননীয় উপাচার্য)।

সকাল ১০ টা ৩০ থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত ভার্চ্যুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ও সভাপতিত্ব করবেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। এরপর বেলা ১২ টা ৩০ থেকে বেলা ২ টা ৩০ পর্যন্ত সঙ্গীত বিভাগের আয়োজনে রয়েছে ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

করোনাকালীন সময়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা না গেলেও এবারের প্রধান আকর্ষন থাকছে জবি একমাত্র হল উদ্বোধন। দীর্ঘ ১০ বছর পর জবির একমাত্র ছাত্রী হলটি উদ্বোধনের পথে। এ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত।

দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ ছিলো ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এরপর অতিরিক্ত সময়ে শেষ হয় নির্মান কাজ। ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১৬ তলা ভবনের হলটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩৬ মাস।

প্রকল্প বাস্তবায়নের ভার দেয়া হয়েছিল শিক্ষা প্রকৌশল দফতরের ওপর। ১১১টি কক্ষবিশিষ্ট হলটিতে একটি লাইব্রেরি, একটি ক্যান্টিন, একটি ডাইনিং, প্রতি তলায় সাতটি করে টয়লেট, আটটি গোসলখানা, ছাত্রীদের ওঠা নামার জন্য চারটি লিফট স্থাপন করা হয়েছে। হলটিতে এক হাজার ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এম.পি. বাংলাবাজারে অবস্থিত ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর ৯ম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ড. এ. কে. আজাদ চৌধুরী।

২০০৯ ও ২০১১ সালের হল উদ্ধার ও নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনে নামে জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। হলের দাবিতে প্রথম আন্দোলন হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। সে সময় ২৯ দিন বন্ধ ছিল জবি ক্যাম্পাস। পরবর্তীতে আবারো আন্দোলন হয় ২০১৪ সালে। এরপর আন্দোলন হয় ২০১৬ সালে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৮৭২ সালে নাম বদলে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজের রূপ পায়।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুরু হলে তৎকালিন জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম সাথে আই.এ, আই.এসসি, বি.এ (পাস) শ্রেণী ছাড়াও ইংরেজি, দর্শন ও সংস্কৃতি অনার্স এবং ইংরেজিতে মাস্টার্স চালু বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে আবার কলেজেটিতে স্নাতক পাঠ্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে এটিকে সরকারিকরণ করা হয়। কিন্তু পরের বছরেই আবার এটি বেসরকারি মর্যাদা লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পূর্ববর্তী-পরবর্তী সময়ে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button