জাতীয়

আজ বাংলা বর্ণপরিচয়ের জনক,বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০১তম জন্মবার্ষিকী।

রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টারঃ

আজ বাংলা বর্ণপরিচয়ের জনক,বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০১তম জন্মবার্ষিকী।

আজ ২৬শে সেপ্টেম্বর শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক, লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক ও ব্যাখ্যাকারী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন।

হাতেখড়ির পরেই বাঙালির হাতে প্রথম যে বইটি উঠে আসে, সেটা ‘বর্ণপরিচয়’। তাঁর বর্ণপরিচয়ের হাত ধরেই বাংলা দেখেছিলো শিক্ষার নবজাগরণ।আজ সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০১তম জন্মদিন।

বাংলা গদ্যকে সরল ও আধুনিক করার ক্ষেত্রে তার অবদান অতুলনীয়। তিনি প্রকৃত অর্থে বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক তিনি রচনা করেছিলেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : ‘বর্ণপরিচয়’, ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’, ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’, ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ প্রভৃতি। এছাড়া তিনি অনুবাদ করেন ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’ (হিন্দি থেকে), ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’ (শেকসপিয়ারের কমেডি অব এরস)।

বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, নারী শিক্ষা ইত্যাদি কাজে বিদ্যাসাগর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। দ্বিশত এক জন্মশতবর্ষে —
উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার।

তাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন।
সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও অপরবোধ্য করে তোলেন।

বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা।

অন্যদিকে বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারকও। বিধবা বিবাহ ও স্ত্রীশিক্ষার প্রচলন, বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তাঁর অক্লান্ত সংগ্রাম আজও স্মরিত হয় যথোচিত শ্রদ্ধার সঙ্গে।

বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত কখনই তাঁর দ্বার থেকে শূন্য হাতে ফিরে যেত না। এমনকি নিজের চরম অর্থসংকটের সময়ও তিনি ঋণ নিয়ে পরোপকার করেছেন।

তাঁর পিতামাতার প্রতি তাঁর ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল বাংলায় প্রবাদপ্রতিম।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মশক্তি ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।
বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তাঁর স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তাঁরই নামে উৎসর্গিত।
আজ এই মহা মানবের জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button