জাতীয়

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ৩ দিনের সরকারি ছুটির দাবিতে হিন্দু মহাজোটের উদ্যোগে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টারঃ

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ৩ দিনের সরকারি ছুটির দাবিতে হিন্দু মহাজোটের উদ্যোগে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাকজোট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির উদ্যোগে “ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাঙালি সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শারদীয়া দূর্গা পূজায় তিন (৩) দিনের সরকারি ছুটি দাবির স্বপক্ষে ৮ অক্টোবর, ২০২০ ইং রোজ বৃহস্পতিবার, সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর চোউধুরী হলে এক মত বিনিময় ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ডঃ সোনালী দাসের সভাপতিত্বে, সংগঠনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন দে’র সঞ্চালনায় আলোচনার মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়।

সম্মানিত অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট রানা দাস গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ; বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (অবঃ), বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব; বরুন ভৌমিক নয়ন, দপ্তর সম্পাদক বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও উপদেষ্টা বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট; শ্যামল সরকার, ট্রাস্টি হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্ট, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট; অরুনা বিশ্বাস জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয় চলচিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য।

অতিথি আলোচকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, সভাপতি, বাংলাদেশ হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি; রঘুপতি সেন, সাধারণ সম্পাদক ভোলাগিরি আশ্রম ও ট্রাস্ট; সঙ্গীতানন্দ মহারাজ, অধ্যক্ষ প্রনব মঠ, ঢাকা মিশন; লিটন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক, শারদাঞ্জলী ফোরাম; শংকর সরকার সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ; চান মোহন রবিদাস, সভাপতি বাংলাদেশ রবিদাস ফোরাম (বিআরএফ)।

উক্ত মত বিনিময় ও আলোচনা সভায় আলোচকগণ বলেন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক দাবী “শারদীয়া দুর্গা পূজায় সরকারী ভাবে ৩(তিন) দিনের ছুটি ঘোষনা”। এখন শরতকাল। কিছুদিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপুজা। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর তাবৎ বাংলাভাষাভাষি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শারদীয়া দুর্গা পুজা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে সর্বত্র পারিবারিক কিংবা সার্বজনীন দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণত ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন তথা পুজা শুরু হয় এবং দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পুজা শেষ হয়। দুর্গা পুজোয় ষষ্ঠী থেকে দশমী – এই পাঁচ দিনের পুজা অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের হিন্দুরা সরকারী ছুটি পাচ্ছেন শুধু মাত্র ১দিন তথা বিজয়া দশমীর দিন।

দুর্গাপুজায় মাত্র এক (১) দিনের সরকারী ছুটির কারণে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন যাবত দুর্গা পুজোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার বাসনায় সারা বছর শারদীয় পুজোর এই দিনগুলোর জন্য অপেক্ষায় থাকে।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, দুর্গা পূজায় ৫ দিনের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও সরকারিভাবে মাত্র এক (১) দিনের ছুটি কার্যকর থাকার ফলে কারো পক্ষেই পরিবার পরিজনের সাথে ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে না। বিজয়া দশমীতে বাবা-মা, গুরুজন ও প্রতিবেশীদের প্রণাম করা ও আর্শীবাদ গ্রহণ একটি ধর্মীয় সামাজিক রীতি। কিন্তু একদিন ছুটি থাকায় চাকরিজীবী কারও পক্ষেই গ্রামে গিয়ে বাবা-মা বা গুরুজনদের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ থাকে না।

ফলে পূজার দিনগুলো বাবা-মা সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মানসিক কষ্টের মধ্যেই কাটাতে হয়।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক (অবঃ) বলেন ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃসংশভাবে হত্যার পর ৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতিকে পরবর্তী সরকারগুলো ধংস করে দিয়েছে। তিনি প্রত্যাশা করেন হিন্দু মহাজোটের যৌক্তিক দাবি “দুর্গা পুজায় তিনি (৩) দিনের সরকারি ছুটি” স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা মেনে নেবেন। এ ছাড়াও তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশে পাকিস্থানের অকৃত্রিম বন্ধু চায়ানার আগ্রাসী মনোভাবকে সন্দেহের চোখে দেখেন বলে মনে করেন।

তিনি যুক্ত করেন “বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় চায়না বাংলাদেশের বিপক্ষ শক্তিকে কেবল সহযোগিতাই করেনি স্বাধীনতার পর এই দেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু হত্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। লক্ষ লক্ষ উইঘর মুসলিম তথা ঐ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জোর করে জেলে বন্ধি করে রেখেছে। তাদেরকে অনুসরন কিংবা তাদের ফাঁদে পা দেওয়ার আগে আমাদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন “বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃস্টান সকলে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও আসীম ত্যাগ স্বীকার করে এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। তাই ধর্মীয় কারণে কোন জাতী গোষ্ঠির উপর বৈষম্য কাম্য নয়। দুর্গা পুজা বাঙ্গালির উৎসব, এই সময় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুশ এই উতসবে মিলিত হয় তাই হিন্দু মহাজোটের দাবির সাথে তিনি একমত পোষন করেন এবং প্রত্যাশা করেন এ বিষয়ে সরকার সদয় বিবেচনা করবেন।”

হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত হিন্দু মহাজোটের যৌক্তিক দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন “বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের প্রথমভাগের ২(ক) তে রাষ্ট্রধর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে – “[২ক। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন]” বাংলাদেশ সংবিধানের উপরোক্ত বক্তব্য মতে সকলে ধর্ম পালনে রাষ্ট্রের সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চত করার কথা থাকলেও ৫ দিনের দুর্গা পুজায় মাত্র এক (১) দিনের সরকারী ছুটি ঘোষনার ফলে সংবিধানের সু্স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে তিনি মনেকরেন।

এবং এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ অন্দোলনে তিনি ও তাঁর সংগঠন কাজ করে যাবেন।
বাংলাদেশ হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন “যেখানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের দু’টি ধর্মীয় উৎসবে প্রতিটিতে ৩দিন করে সর্বমোট ৬ দিনের সরকারি ছুটি ভোগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে, সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫ দিনের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাত্র ১ দিনের ছুটি – এটি বৈষম্য হিসাবে আমরা দেখছি।”

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর দপ্তর সম্পাদক ও হিন্দু মহাজোটের অন্যতম উপদেষ্টা বরুন ভৌমিক নয়ন বলেন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি শ্রী শ্রী দুর্গা পূজায় তিন (৩) দিনের ছুটি। তিনি প্রত্যাশা করেন, আসন্ন দুর্গা পূজার আগেই মননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাহী আদেশে তিন (৩) দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকবেন।

এছাড়াও উক্ত মত বিনিময় ও আলোচনা সভার আলোচক হিসেবে মতামত ব্যক্ত করেন হিন্দু মহাজোট কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি সাধন মন্ডল, সহ সভাপতি মিঠু রঞ্জন দেব, সহ-সভাপতি চিন্ময় মজুমদার, সিনিয়র যুগ্ম সাধাররণ সম্পাদক উত্তম কুমার দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তারক চন্দ্র রায়, ডাঃ হেমন্ত দাস, সুশীল কুমার মিত্র, সঞ্জয় ফলিয়া, তাপস কুমার বিশ্বাস, সঞ্জয় রায়, সহ-আন্ততর্জাতিক বিজন সানা, প্রচার সম্পাদক গৌতম হালদার প্রান্ত, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্রতিমা দে, ঢাকা মহানগর হিন্দু মহাজোটের আহবায়ক সুব্রত ঘোষ সুমন ও ঢাকা মহানগর হিন্দু মহাজোটের অন্যতম সংগঠক ও নবগ্রাম জনকল্যাণ সেবাশ্রম ট্রাস্টের পরিচালক প্রবীন হালদার কার্যকরী সদস্য মাধুরী রানী রায়, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হরিপদ বিশ্বাস, সুমন দাস, সুমন হালদার, প্রদীপ রায়, এডভোকেট রাজিব রাজ, দীপঙ্কর বেপারী, আশোক সাহা, অম্লান কুমার কার্তিক, সুখময় বাবু।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব ও ছাত্র মহাজোটের ডাঃ সমীত রায়, বিপ্লব চন্দ্র ভৌমিক, জীবন রায়, সুমন অধিকারী, মুকুল বল রনি অধিকারী সহ অন্যান্য সনাতন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের কার্যকতাগণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button