সাভারের নীলা রায়ের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টারঃ
সাভারের নীলা রায়ের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সাভারে বখাটে মিজানের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীলা রায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সাভারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, নিহত নীলার পরিবার ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রবিবার (২০শে সেপ্টেম্বর) রাতে সাভারে দশম শ্রেণী ছাত্রী নীলা রায় ঘাতক মিজান কর্তৃক ছুরিকাঘাতে নির্মম ভাবে নিহত হওয়ায় বখাটে খুনি মিজান ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন নিহত নীলা রায়ের পরিবার ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সহ অন্যান্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সোমবার (২১শে সেপ্টেম্বর) ) বিকালে নিহত নীলা রায়ের পরিবার কে উপযুক্ত বিচার যাতে পায় তার আশ্বাস দিতে সাভার আসেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান মহিলা ঐক্য পরিষদ সাধারন সম্পাদক দীপালী চক্রবর্তী।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সাভার পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আঃ গণি,৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরে আলম সিদ্দিকী নিউটন, ঢাকা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সাধারন সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক স্মরন সাহা,মহিলা সম্পাদিকা ইতি সরকার,দপ্তর সম্পাদক তেজেন্দ্র নাথ রায়, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি বাদল সাহা সাধারন সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম, সাভার উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা কালু দত্ত, সুবীর সাহা মনা,পিযূষ গোস্বামী , মধু সূদন সাহা, ছাত্র লীগ নেতা অমিত দত্ত সহ নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ সাভার থানায় গিয়ে এডিশনাল এস পি মোঃ সাইদুর রহমান, ইন্সপেক্টর তদন্ত মোঃ সাইফুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর নির্মল বাবুর সহিত মামলায় দোষী ব্যাক্তি যাতে উপযুক্ত সাজা পায় তার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্হা গ্রহণ করার জন্য আহবান জানান।
প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক গ্রামের শ্রী নারায়ণ রায়ের মেয়ে শ্রীমতি লীলা রায়। সে সাভার পৌর এলাকায় কাজি মুকমাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে বাস করত। সে স্থানীয় অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। পরিবার ও পুলিশের ভাষ্যমতে, এক বছর ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল কাজি মুকমাপাড়ার পাশের এলাকা ব্যাংক কলোনীর আব্দুর রহমানের ছেলে কলেজছাত্র মোঃ মিজান। রোববার (২০-০৯-২০) সন্ধ্যায় মেয়েটি অসুস্থতার কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তার বড় ভাই অলক তাকে রিক্সায় করে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছিল।
বাসা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পরে পথমধ্যে মোঃ মিজান তাদের রিক্সা গতিরোধ করে। এবং অস্ত্রের মুখে রিকশা থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে সাভারের দক্ষিণপাড়া নিজেদের পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গলায়, পেটে, মুখে ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
মেয়েটির চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে থানা রোডের প্রাইম হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে নয়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে তার হত্যাকারী হিসেবে মোঃ মিজানের নাম উল্লেখ করে গেছে।
নীলার বড় ভাই অলক রায়ের ভাষ্য, বাসা থেকে বের হয়ে তারা মোঃ মিজান কে দেখতে পায়। তখন মোঃ মিজান তোদেরকে কিছু বলেনি। রিক্সা নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর মোঃ মিজান পিছন থেকে এসে তাদের রিক্সার গতিরোধরোধ করে। তখন তার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো ছুরি ছিল। তখন মিজান তার ভাই অলক কে বলে তোর বোনের সাথে কথা আছে এবং তাকে রিকশা থেকে নামতে বলে। অলক বাধা দিলে মোঃ মিজান তাকে হত্যার হুমকি দেয়। তখন অলক ও তার বোন নীলা ভয়ে চিৎকার করতে পারে নি। তখন মোঃ মিজান নিলাকে নিয়ে পালপাড়ার গলিতে চলে যায়। অপর দিকে অলক বন্ধু বান্ধবকে ডাকতে যায়। এই ঘটনার মিনিট বিশেক পর অলক জানতে পায় তার বোন নীলাকে মোঃ মিজান ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য- মিজানের মা-বাবাকে বিষয়টি জানানোর পরও তারা কোন ব্যবস্হা নেননি বলে অভিযোগ করেন নীলার মা মুক্তি রায়।
তিনি আরো বলেন উল্টো মিজানের মা তাঁর মেয়েকে মিজানের সঙ্গে কথা বলতে ও ফেস বুকে চ্যাট করতে পরা পরামর্শ দিতেন। এসব কারণে গত মার্চ মাসে তাঁরা বাসা পাল্টে ব্যাংক কলোনির শীতল-শিথিল ভিলার পাঁচ তলায় বাসা নেন। এরপরও মিজান থামেননি। মিজানের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নীলা প্রায়ই মিজানের মাকে মোবাইল বলত আন্টি আমাকে বাঁচাতে দেন, আপনার ছেলেকে একটু বুঝান। এত কিছুর পরও নীলা বাঁচতে পারল না।
মিজানের অত্যাচারে গত মার্চ মাসে স্ত্রী ও সন্তানদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের বালিরটেকে পাঠিয়ে দেন নীলার বাবা নারায়ণ রায়।
তিনি বলেন- সাভার থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু মালামালও পাঠানো হয়েছিল কিন্তু গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে ছেলের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকায় তাঁরা সাভার ছাড়তে পারেননি। এরই মধ্যে লক ডাউন শুরু হয়ে যায়।
দক্ষিণ পাড়ার যে বাড়িটিতে হত্যার ঘটনা ঘটে। সেটি সেটি মিজানের বাবা আব্দুর রহমানের । তাঁর নামেই পৌরসভার হোল্ডিং নম্বর দেওয়া আছে। প্রাচীরঘেরা এ-৬১/৪ নম্বর বাড়িতে দুটি ছোট টিনের ঘর রয়েছে। সেখানে কেউ থাকেন না। মিজান ঐ পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, নেশা করতেন বলে স্হানীয়রা জানান।
নিহত নীলার মা-বাবা খুনি মিজান ও তার সহযোগীদের বিচার চায়। মিজানের ফাঁসি দাবি করেন।