জেলার খবর

নারায়ণগঞ্জের আশা ভরসা মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

সাহাদাৎ হোসেন শাহীন, জেলা প্রতিনিধি-(নারায়ণগঞ্জ)

নারায়ণগঞ্জের আশা ভরসা মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

সময়টা এপ্রিলের মাঝামাঝি।সারা পৃথিবী কার্যত বন্দী।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ রোগকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা দিয়েছে বেশ আগেই।পুরো পৃথিবী জুড়ে আতঙ্ক। আমাদের দেশেও লকডাউন চলছিলো।সবার আগে বড় পরিসরে আক্রান্ত হলো নারায়ণগঞ্জ জেলা।ঠিকঠাক কিছু বুঝে উঠার আগেই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে লাগলো।প্রাণ গেল বেশ কিছু মানুষের। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো।চিকিৎসার একটা জায়গা হলো।কিন্তু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাগার! আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা না গেলে কিভাবে আইসোলেশন করা যাবে, কিভাবে চিকিৎসা করা হবে! কিভাবেই বা আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে সংক্রমন প্রতিরোধ করা যাবে! তখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে কোভিড-১৯ নির্ণয়ের জন্য কোন ল্যাব নেই।ঢাকার অল্প কিছু সরকারি ল্যাবের উপর নির্ভরতা ছাড়া উপায় ছিল না।আর সেখান থেকে রিপোর্ট পেতে ৬/৭ দিন লেগে যেতো! সারা পৃথিবীতে তখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের একমাত্র নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা পদ্ধতি রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ পিসিআর(আরটি-পিসিআর) পদ্ধতি।যেটা যথেষ্ট জটিল একটি প্রক্রিয়া এবং এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি আর সঠিক বায়োসেইফটি নিশ্চিত করা মলিউকুলার ল্যাব। নারায়নগঞ্জবাসীর এমন ভয়ানক দূরবস্থায় এগিয়ে এলেন নারায়ণগঞ্জ-১ তথা রূপগঞ্জের মাননীয় সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক এবং গাজী গ্রূপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা।উদ্যোগ নিলেন এক প্রচন্ড চ্যালেঞ্জিং পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার।সাথে এগিয়ে এলো ইউ এস বাংলা মেডিকেল কলেজ এবং সেই কলেজেরই অসম্ভব উদ্দ্যমী একজন ভাইরোলজিস্ট এসোসিয়েট প্রফেসর ডা. রুকসানা রায়হান। তার সাথে যুক্ত হলেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজের প্রভাষক রূপগঞ্জেরই ছেলে ডা. তানজিল হাসান এবং পরবর্তীতে আরেকজন ভাইরোলজিস্ট এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. নুসরাত মান্নান।গাজী গোলাম মর্তুজার অসম্ভব কর্মতৎপরতায় ল্যাবের অনুমোদন নেয়া হলো দ্রুততম সময়ে। ল্যাবের সকল প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে আনা হলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে।আর এসবই হলো মাননীয় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক- এর সামগ্রীক পরিকল্পনা এবং গাজী গোলাম মর্তুজার নিজস্ব অর্থায়নে।ডা. রুকসানা রায়হানের নির্দেশনা এবং প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে দুই সপ্তাহের মধ্যেই দাঁড়িয়ে গেলো আন্তর্জাতিক মানের বায়োসেইফটি লেভেল-২ স্ট্যান্ডার্ড পিসিআর ল্যাব। যেটা কিনা প্রতিষ্ঠিত হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সকল নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ করে।ল্যাব ইনচার্জ ভাইরোলজিস্ট ডা. রুকসানা রায়হান, ল্যাব কনসালট্যান্ট ভাইরোলজিস্ট ডা. নুসরাত মান্নান, এসিসট্যান্ট ল্যাব ইনচার্জ ডা. তানজিল হাসান এবং আরো দুই জন সদ্য পাশ করা নবীন চিকিৎসক সহ কয়েকজন নিবেদিত প্রাণ তরুণ মাইক্রোবায়োলজিস্টদের নিয়ে ০১/০৫/২০২০ তারিখ থেকে অফিসিয়ালি কাজ শুরু করেছিলো দেশের প্রথম করোনা শনাক্তকারী বেসরকারী ল্যাব ‘গাজী কোভিড-১৯ পিসিআর ল্যাব’। নারায়ণগঞ্জ জেলার সকল উপজেলা এবং রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতে থাকা স্যাম্পল টেস্ট হচ্ছে গাজী ল্যাবে।সেই শুরু থেকেই প্রতিদিন ৪৫০ এর বেশি স্যাম্পল টেস্ট করে ১ দিনের মধ্যেই নির্ভরযোগ্য রেজাল্ট দিয়ে এগিয়ে আছে গাজী ল্যাব।ইতিমধ্যেই এই ল্যাব ২০ হাজার স্যাম্পল টেস্টের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।প্রথমদিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং পরবর্তীতে সরকার নির্ধারিত স্যাম্পল প্রতি ২০০ টাকা ফি তে টেস্ট করে যাচ্ছে গাজী ল্যাব।বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিগণ এই ল্যাব পরিদর্শনে এসে ল্যাবের কাজের উচ্চমান এবং চমৎকার ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন।ভালো কাজের এই চক্র অব্যাহত থাকুক এটাই প্রত্যাশা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button