জাতীয়

সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টঃ

মরহুম রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। কোরআনখানিসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৬টায় এরশাদের সমাধিস্থল ও জাতীয় পার্টি কার্যালয়কসহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে কোরআন খানির মাধ্যমে শুরু হবে দিনটির কার্যক্রম। সোয়া ৬টায় রংপুর সেন্ট্রাল রোডের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিবের নেতৃত্বে জাতীয় নেতৃবৃন্দ সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পন করবেন এবং তার কবর জেয়ারত করবেন। এরপর তারা আলোচনায় অংশ নিবেন।
জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন জানান, এরশাদ স্যার ছিলেন সার্বজনীন। তিনি চেয়েছিলেন শিক্ষাঙ্গন হবে শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। সন্ত্রাস, রক্তপাত, টেন্ডার ও অসামাজিক কার্যকলাপ থাকবে না। কিন্তু এখন শিক্ষাঙ্গনগুলোতে এসবের রাজত্ব। তিনি ছাত্র সমাজের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়ন করতে চাই। সে লক্ষেই তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা শপথ নিতে চাই।

জাতীয় পার্টির তরুণ মহিলা নেত্রী জুঁই জানান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্যার দেশে প্রথম মহিলা অধিদপ্তর করেছিলেন। তিনি উপবৃত্তি ও মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষার গোড়াপত্তন করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নারীরা ভারসম্যপুর্ণ অবদান রাখবে। তিনি নারীদের খুব সম্মান করতেন। নারীদের নিয়ে তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, তা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নারীর কাছে আমরা পৌঁছে দেয়ার লক্ষে কাজ করছি।

যুব সংহতির রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি শাহিন হোসেন জাকির বলেন, যুবকদের জন্য সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্যার। তার স্বপ্ন ছিল যুবকরা মাদকাসক্ত হবে না। স্বাবলম্বী হবে। দেশ বিনির্মাণে কাজ করবে। আমরা যুব সংহতির নেতৃত্বে দেশের সমস্ত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানে উজ্জীবিত করার জন্য কাজ করার মাধ্যমে স্যারের স্বপ্নকে পূরণ করতে চাই।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির থিংকট্যাংক জাহিদ হোসেন লুসিড জানান, স্যারের যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ছিল, সেসব বিষয়ে আজকের তরুণ প্রজন্মরা জানে না। আমরা প্রযুক্তির পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে সেসব কথা তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক শাফিউল ইসলাম শাফি বলেন, স্যার দুর্নীতি ও শোষনহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও পরমতসহিষ্ণু রাজনীতির ধারা তৈরি করেছিলেন। তিনি নেই। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তার আদর্শ ও কর্ম বাস্তবায়ন করতে আমরা অঙ্গিকারাবদ্ধ।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্যার চেয়েছিলেন দেশের মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসম্য আনতে। তিনি চেয়েছিলেন উন্নয়নের মূল স্রোত দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে। ধনী-গরীবের বৈষম্য দূর করার জন্য তিনি নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা স্যারের সেসব উদ্যোগ দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য কাজ করছি।

যুগ্ম মহাসচিব এসএম ইয়াসির বলেন, এরশাদ স্যার ছিলেন একজন মানবিক মানুষ। তিনি একটি মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর বলেন, জীবন্ত এরশাদের চেয়ে মৃত এরশাদ অনেক শক্তিশালী। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজকাঠামো, রাষ্ট্রীয় কাঠামোসহ একটি দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছিলেন এরশাদ। আমরা তার সেই আদর্শ ও কর্ম সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, স্যারের স্বপ্ন ছিল একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ। সেজন্য তিনি উপজেলা পরিষদ গঠন করেছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল শুধু ঢাকা সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হবে না। সেকারণে তিনি সারাদেশকে সাতটি প্রদেশে বিভক্ত করার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। আমরা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা স্যারের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তাকে স্মরণে রাখতে চাই। সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, স্যারের হাত ধরেই বাংলাদেশে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সূচনা হয়েছিল। সেই ধারা বাস্তবায়ন করতে সারা বাংলাদেশে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করতে চাই। স্যারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, যারা বলেছিলেন এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ এরশাদ ছিলেন একজন কিংবদন্তি রাজনৈতিক নেতা। তার আদর্শ ও কর্মের স্পিড তার মৃত্যুর পরে রাষ্ট্রকাঠামোসহ সকল ধারার রাজনীতিবীদরা স্বীকার করে নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এরশাদের আদর্শ ও কর্ম বাস্তবায়ন করে একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তার প্রথম ‍মৃত্যু বার্ষিকীতে মৃ তার রুহের মাগফেরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছি।

সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ জুলাই তার অছিয়ত অনুযায়ী রংপুর মহানগরীর দর্শনার পল্লী নিবাসের লিচু তলায় তাকে সমাহিত করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button