খেলাধুলা

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

ঢাকায় দুই ম্যাচে দুই জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। এরপর তারা পড়লো পাঁচদিনের বিরতিতে। যা কাজে লাগিয়ে শীর্ষস্থান দখলে নিয়ে নেয় স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেই চট্টগ্রামকে হারিয়ে শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বাধীন কুমিল্লা।
চট্টগ্রামের বিপক্ষে ম্যাচটিতে লিটন দাস, ফাফ ডু প্লেসি ও ক্যামেরন ডেলপোর্টের ব্যাটে ভর করে ১৮৩ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করেছে কুমিল্লা। জবাবে উইল জ্যাকস ছাড়া চট্টগ্রামের পক্ষে আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। ফলে স্বাগতিক দলের ইনিংস থেমে গেছে ১৩১ রানেই, কুমিল্লা পেয়েছে ৫২ রানের ব্যবধানে সহজ জয়।

তিন ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জিতে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে কুমিল্লা। তাদের সমান তিন জয় রয়েছে চট্টগ্রামেরও। তবে ছয় ম্যাচের অন্য তিনটি হেরেছে চট্টগ্রাম, যা কমিয়েছে তাদের নেট রানরেট। আর জয়ের হ্যাটট্রিক করে নেট রানরেটের স্পষ্ট ব্যবধানে এক নম্বর স্থান দখল করেছে কুমিল্লা।
কুমিল্লার করা ১৮৩ রানের বিপরীতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান চট্টগ্রামের ক্যারিবীয় ওপেনার কেনার লুইস। তবে পরের বলেই তাকে লং অনে ক্যাচে পরিণত করেন কুমিল্লার আগের দুই ম্যাচের জয়ের নায়ক নাহিদুল ইসলাম। সেই যে শুরু! এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি চট্টগ্রাম, হারিয়েছে একের পর এক উইকেট।
আরও একবার হতাশ করে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শিকারে পরিণত হন ৪ রান করা আফিফ হোসেন ধ্রুব। চার নম্বরে নামা সাব্বির রোমানকে প্রথম বলেই লেগ বিফোর আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। এডিআরএস নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান সাব্বির। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তিনি। নাহিদুলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে আউট হন মাত্র ৫ রান করে।
টপঅর্ডারের ব্যর্থতার ভিড়ে ইংলিশ ওপেনার উইল জ্যাকস একাই লড়তে থাকেন। পাঁচ নম্বরে নেমে একটি করে চার-ছয়ের মারে আশা দেখান মেহেদি হাসান মিরাজও। যার ফলে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ৩ উইকেট হারালেও ৫০ রান করে ফেলে চট্টগ্রাম। কিন্তু সপ্তম ওভারেই নাহিদুলের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ১০ রান করা মিরাজ।

আগের ম্যাচেই কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা নাহিদুল, এই ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় নিয়ে নেন ৩টি উইকেট। চট্টগ্রামের বিপদ আরও বাড়ে ইনিংসের দশ ওভারের মধ্যেই অধিনায়ক নাইম ইসলাম (৫ বলে 8) ও তারকা অলরাউন্ডার বেনি হাওয়েল (৬ বলে ২) অল্পেই আউট হয়ে গেলে।
তবু আশার প্রদীপ হয়ে উইকেটে টিকে ছিলেন জ্যাকস। আসরে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন এ ডানহাতি ওপেনার। সপ্তম উইকেট জুটিতে জ্যাকসের সঙ্গে ২৫ রান যোগ করেন মৃত্যুঞ্জয়। ইনিংসের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে দুই অঙ্ক ছুঁয়ে মৃত্যুঞ্জয় আউট হন ১৩ রান করে।
দলীয় শতরানের আগেই ৭ উইকেট পড়লেও দমে যাননি জ্যাকস। বরং পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন তিনি। শহিদুল ইসলামের করা ১৫তম ওভারের শেষ তিন বলে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সমীকরণটা ৩০ বলে ৭০ রানে নামিয়ে আনেন তিনি। পরের ওভারে তানভির ইসলামের বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে হাঁকান ছকা।
একই শট আবার খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন জ্যাকস, সোজা স্ট্যাম্পে আঘাত হানেন বাঁহাতি স্পিনার তানভির। ফলে সমাপ্তি ঘটে জ্যাকসের ৭ চার ও ৩ ছয়ের মারে খেলা ৪২ বলে ৬৯ রানের ইনিংসের। একইসঙ্গে লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ফল। শেষ পর্যন্ত ১৫ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয় চট্টগ্রাম, ম্যাচ জিতে নেয় কুমিল্লা।

কুমিল্লার পক্ষে নাহিদুল ১৭ রানে ৩, মোস্তাফিজ ২৬ রানে ২, তানভির ৩৩ রানে ২ ও শহিদুল ৩৪ রান খরচায় নেন ২ উইকেট।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এর আগে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম। আগে বোলিং করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই দলকে সাফল্য এনে দেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম। তার করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কভার দিয়ে আলগা শট করে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন ১ রান করা কুমিল্লার তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ইনিংসের গতিপথ ঠিক করে দেন লিটন দাস ও ফাফ ডু প্লেসি। এ দুজন মিলে ৫৫ বলে যোগ করেন ৮০ রান। লিটনের দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সোজা ব্যাটে দারুণ কিছু শট খেলেন ডু প্লেসি। তাদের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ৫২ রান পায় কুমিল্লা।
প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা এই জুটিও ভাঙেন প্রথম উইকেট নেওয়া নাসুম। ফিফটির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া লিটন লং অফ বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন সাব্বিরের হাতে। ফলে সমাপ্তি ঘটে তার ৫ চার ও ১ ছয়ের মারে খেলা ৪৭ রানের ইনিংস। এরপর হতাশ করেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। বেনি হাওয়েলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১ রান করেন তিনি।
অল্প সময়ের ব্যবধানে লিটন-ইমরুল ফিরলেও কুমিল্লার ইনিংসে আর বিপদ বাড়তে দেননি ডু প্লেসি ও ডেলপোর্ট। এ দুজন মিলে শেষের ৮.৫ ওভারে গড়েন ৯৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। দুই তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ও মৃত্যুঞ্জয়ের ওপর দিয়েই বেশি যায় ডু প্লেসি-ডেলপোর্টের ঝড়। এ দুজনের করা শেষ তিন ওভার থেকেই আসে ৫২ রান।
শরিফুলের করা ১৮তম ওভারে একটি করে চার-ছয়ের মারে খরচ হয় ১৫ রান, পরের ওভারে মৃত্যুঞ্জয়ও হজম করেন একটি করে চার-ছয়। ইনিংসের ১৯ ওভার শেষে ডু প্লেসির রান ছিল ৮৩, সম্ভাবনা ছিল সেঞ্চুরির। তবে শেষ ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন ডেলপোর্ট, এক বলও খেলার সুযোগ পাননি ডু প্লেসি।
শরিফুলের সেই ওভারে চারটি চার ও এক ছয়ের মারে একাই ২৩ রান করেন তিনি। যার সুবাদে মাত্র ২২ বলে পূরণ হয় ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ২৩ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন ডেলপোর্ট আর ডু প্লেসি খেলেন ৫৫ বলে ৮৩ রানের ইনিংস।
চট্টগ্রামের পক্ষে আরও একবার হাইস্কোরিং ইনিংসে কিপটে বোলিং করে ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান খরচায় ২ উইকেট নেন নাসুম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button