রাজনীতি

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু: দীর্ঘদিন পর যা জানালেন মেয়ে সামীরা

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় আত্মগোপনে থেকে একদম চুপিসারে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন একসময়ের দাপুটে ও আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ হারিছ চৌধুরী। তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তিকাল করেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার কন্যা সামীরা তানজীন চৌধুরী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তাকে রাজধানীর একটি কবরস্থানে অনেকটা গোপনে দাফন করা হয়। হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর কথা ইঙ্গিত করেন কিন্তু সরাসরি কিছু বলেননি। তখন থেকেই এ বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেছেন। এর ফলে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তৈরী হয় ধোয়াশা। একটি অনলাইন নিউজ এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী মুন্নু বিষয়টি খোলাসা করেন। তিনি জানান, তার বাবা ঢাকাতেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

এর আগে এই রাজনীতিবীদের অবস্থান নিয়ে নানা রকমের গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছিল। অবশেষে সবার ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন হারিছ চৌধুরী। স্বদেশেই থেকেছেন। তবে কখনো তাবলিগ জামাতের হয়ে দ্বীনের দাওয়াতে আবার কখনো করেছেন মসজিদে ইমামতি।

সামীরা বলেন, “সিলেটের কানাইঘাটে পারিবারিক কবরস্থানে দাদুর কবরের পাশে বাবাকে দাফন করার কথা ছিল। কিন্তু আশিক চাচা (আশিক চৌধুরী) সাহস করলেন না।”

হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামীরা বলেন, আত্মগোপনকালে বাবা আমাদের পরিবারের সাথে খুব যোগাযোগ করতেন। “বাবা চাইতেন, যা হয় তার উপর দিয়ে যাক। সন্তান হিসেবে আমাদের, আত্নীয়-স্বজন এমনকি তিনি যে রাজনীতি করতেন সেই রাজনৈতিক নেতৃত্বও যাতে তার কারণে কোনো বিপদে না পড়ে সে জন্য কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতেন না। মাঝে মধ্যে তিনি ফোনে সবার খোঁজ নিতেন। সর্বশেষ তিনি যখন আমাকে কাছে চাইলেন, তখন সব শেষ।”

এসময় সামীরা বলেন, “আমি কয়েক ঘণ্টার নোটিশে সব ছেড়েছুঁড়ে ২৭ আগস্ট ঢাকা পৌঁছাই। ততোক্ষণে বাবা লাইফ সাপোর্টে চলে গিয়েছেন। করোনা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। বাঁচাতে পারলাম না বাবাকে। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতে চাইনি। সবসময় তার পাশে বসেছিলাম। ভয় আর শঙ্কা আমাদের সব তছনছ করে দিলো।

হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে সামীরা বলেন, “এর সবটাই রাজনৈতিক। আমার বাবা হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসেননি। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন, সিলেট জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে যুবকদের সংগঠিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মতো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সাথে নিবিড় ভাবে কাজ করেছেন। সবকিছুকে ছাপিয়ে আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। যিনি অস্ত্র হাতে দেশের জন্য লড়েছেন। তার সন্তান হিসেবে অবশ্যই আমি গৌরব বোধ করি।”

তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, “এসব অভিযোগ কোন্ শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে আসেনি, বলেন! এগুলোর ভিত্তিও আমাদের কারও অজানা নয়। পারিবারিকভাবে চৌধুরী পরিবার অসচ্ছল নয়। জন্মের আগে থেকে ট্রলারের ব্যবসা আর ছোট বেলা থেকে আমাদের গাড়ির শো-রুম দেখে আসতেছি। ঢাকা এবং সিলেটে ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের পরিবার ঐতিহ্যমণ্ডিত। ক্ষমতায় থাকাকালীন গুলশানে একটি বাড়ি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রাজউক থেকে কিনেছিলেন যা সরকার পরবর্তীতে বাতিল করে ফেরত নিয়েছে। আর কী এমন আছে! আমার দাদা সিও (সার্কেল) অফিসার ছিলেন, এমএলএ ইলেকশনও করেছেন। তার সবছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আমার বাবা নটরডেম থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং লোক প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আমাদেরকেও সুশিক্ষিত করে গড়েছেন। আমি আইন পাশ করে ব্রিটিশ গর্ভনমেন্ট লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আইনজীবী হিসাবে কাজ করেছি। আমার ছোট ভাই নায়েম চৌধুরী (জনি) লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস থেকে মাস্টার্স করে সিনিয়র এনার্জি ট্রেডার হিসাবে জুরিখে কাজ করছে।”

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে তার মেয়ে সামীরা চৌধুরী মুন্নু বলেন, “আমি ২২ বছর থেকে দেশের বাইরে। পরপর দুই চাচা, ফুফু মারা গেলেন। এর বাইরে আমি তেমন কাউকে চিনি না। আশিক চাচাই বাবার সাথে যোগাযোগ রেখে সব করতেন বলে জানি। দাদার নামে বাবার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, মাদ্রাসা সব তিনিই দেখাশোনা করেন। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে সহায়তা দেই। আমরা আশিক চাচার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। চাচাই মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন।”

লন্ডনে মারা গিয়েছেন বলে আশিক চৌধুরীর মন্তব্য প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, “হয়তো কোনো চাপে বা পরিস্থিতির কারণে তিনি এমনটা বলে থাকতে পারেন। যে কারণে তিনি বলেছিলেন সিলেটে দাফন করা নিরাপদ হবে না। আমার সাথে এ বিষয়ে তার কোনো কথা হয়নি। আমার বাবার মতো একজন বিশাল ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হোক সেটা সন্তান হিসেবে আমার কাম্য হতে পারে না।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button