ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মৃত্যু এবং ধর্ষণের নানা গল্প ছড়ানো হচ্ছে: মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন অভিযোগ করেছেন যে, সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা সম্পর্কে কিছু অতি উৎসাহী গণমাধ্যম বানোয়াট গল্প রটাচ্ছে। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত মাত্র ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের চার জন মুসলিম এবং দুজন হিন্দু। তিনি আরও বলেন,এসব হামলার ঘটনার সময় কোন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হননি।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের হামলার ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন যখন বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, সেরকম এক প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিবৃতি দিলেন।
বৃহস্পতিবার এই বিবৃতিতে তিনি বলেন, ওই সহিংসতার ঘটনায় নিহত ৬ জনের মধ্যে ৪ জন মুসলমান এবং তারা হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
সহিংসতায় যে ২ জন হিন্দু মারা যান, তাদের মধ্যে ‘একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং অন্যজন পানিতে ডুবে মারা গিয়েছেন’ বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘কিছু অতি উৎসাহী গণমাধ্যম ও ব্যক্তিবর্গ’ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মৃত্যু এবং ধর্ষণের নানা গল্প ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, “কাউকে ধর্ষণ করা হয়নি এবং একটি মন্দিরেও অগ্নিসংযোগ বা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি।”
তবে কিছু দেবদেবীর মূর্তি বা প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। এর পেছনে জড়িত সব অপরাধীদের ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এখন তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
এই বিবৃতির বিষয়ে কথা বলতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর খবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ তথ্য নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়েছেন।
কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরান পাওয়া এবং সেটিকে কেন্দ্র করে সহিংসতার জের ধরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বেশ কয়েকটি মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সহিংসতায় যেসব বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে সেগুলো পুনর্র্নিমাণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
মূলত ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ শেখ হাসিনা সরকারকে বিব্রত করার জন্য এমনটা করা হচ্ছে বলে তিনি ওই বিবৃতিতে অভিযোগ করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে এমনকি মানুষের ঘরে ঘরে পূজা মণ্ডপের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন যে, সরকার প্রতিটি মণ্ডপ বাবদ অর্থ প্রদান করে থাকে।
কিন্তু সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা এই বিপুল সংখ্যক মণ্ডপ পর্যবেক্ষণে রাখার মতো যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ বাহিনী নেই।
এই ধরনের সহিংস ঘটনা এড়াতে, তাই পূজা মণ্ডপ আয়োজকদের উচিত তাদের মণ্ডপগুলো নজরের বাইরে না রাখা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি পূজা মণ্ডপে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি পবিত্র কোরানের একটি কপি মন্দিরে দেবতার মূর্তির পায়ের কাছে রেখে চলে যায়। সে সময় মন্দিরের ভেতরে কোন উপাসক বা আয়োজক কেউ ছিলেন না।
পরে অন্য আরেক ব্যক্তি মন্দিরে দেবতার পায়ে কোরানের ওই ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে আপলোড দেয়।
এ ঘটনাকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাঙচুর এবং লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটে।