বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ না হলে ১০০টিরও অধিক দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে
রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ না হলে ১০০টিরও অধিক দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে
বৃহষ্পতিবার (১২ আগস্ট-২০২১) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বাংলাদেশ কর্তৃক খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে মৌলবাদী সন্ত্রাসী হামলায় মন্দির, ঘরবাড়ী ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শ্রী সহদেব চন্দ্র বৈদ্যর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী কপিল কৃষ্ণ মন্ডল।
অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি শ্রী সুবীর কান্তি সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্রী দেবব্রত নাথ জুয়েল, সেবা প্রমুখ শ্রী সমেন কুমার সাহা, কোষাধ্যক্ষ সাধন কুমার দাশ, দপ্তর সম্পাদক শ্রী বাদল সাহা, কার্যকরী সদস্য রবিন লাল, বিশিষ্ট সমাজসেবক শ্রী সোমনাথ দে, দৈনিক ভোরের ডাকের সিনিয়র রিপোর্টার ও হেড লাইন ত্রিপুরার ব্যুরো চীফ সুজন দে, পোস্তগোলা জাতীয় মহা শ্মশান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডিকে সমীর, লিটন কৃষ্ণ দাশ প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রী কপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন বিগত ৭ আগস্ট শনিবার দুপুর ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত খুলনা জেলার রুপসা উপজেলায় শিয়ালি গ্রামে শতাধিক মৌলবাদী সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৪ টি বড় মন্দির সহ ১০ টি মন্দির, ৫৭টি বাড়িঘর ও ৭ টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় গবাদি পশু ও শব সমাধির পুষ্পরথও লুটে নিয়ে যায়।
অশ্রাব্য গালাগালি সহ দেশত্যাগ ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয় এবং নারীদের শ্লীলতা হানিরও চেষ্টা করে। জানা যায় শিয়ালি বাজারের মসজিদের ইমামের প্ররোচনায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পাশের আনন্দনগর, চাঁদপুর, বামনডঙ্গা গ্রাম হতে মৌলবাদি সন্ত্রাসীরা একত্রিত হয়ে এ হামলা চালায়। সেখানকার হিন্দুরা আর্তনাদ করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দেশ ত্যাগের অনুমতি প্রার্থনা করছে যা খুবই মর্মস্পর্শী ঘটনা।
তিনি আরো বলেন, গত ৬ আগষ্ট বরগুণার আমতলী উপজেলার গুলশাখালী গ্রামে আব্দুল বারেক কর্তৃক মাধব চন্দ্র হাওলাদারের বাড়িঘর ভাংচুর, মালামাল ক্যাশ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট, ৩১ জুলাই ফরিদপুরের কৃষ্ণনগর গ্রামে সার্বজনীন কালী মন্দিরে হামলা, ২৫ জুলাই নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মন্দির বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুর ও লুট, ২১ জুলাই ঈদের দিন গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ায় হামলা, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সংখ্যালঘু জমি জোরপূর্বক দখল, ১৯ জুন সিরাজগঞ্জের রায়পুর হাওলাদার পাড়া কালী মন্দিরে হামলা, চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলা সোনাকানিয়া কর্মকার পাড়ায় শিব মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর, চট্টগ্রামের কালুরঘাটের স্বপন কুমার দাশের সীমানা প্রাচীর ভেঙে জায়গা দখল, রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার মালোপাড়ার লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে হামলা, বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম কর্তৃক অসীম চন্দ্র শীলের পরিবার সহ একাধিক হিন্দু পরিবারকে দেশত্যাগের হুমকি, অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে হত্যার পর তার দেহ ৬ টুকরো করে মাটিতে পুঁতে রাখাসহ বহু ঘটনা এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে।
বহুল আলোচিত বাঁশখালীর ১১ জনকে পুরিয়ে মারার মামলা ১৮ বছরেও নিষ্পত্তি না হওয়া, ভিডিও ফুটেজের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বজিৎ হত্যার আসামীদের ফাঁসী না দিয়ে বরং খালাস দেয়া সহ অতীতের বহু ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার পরিস্থিতি মনে করে দেয় এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আইনের শাসন নেই। অথচ অর্পিত সম্পত্তি আইন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন, হিন্দু পারিবারিক আইন, হিন্দু সম্পত্তি বণ্টন আইন তথা বিভিন্ন হিন্দু বিরোধী আইন প্রণয়ন করে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে প্রতিনিয়ত।
অতীতের কোনো ঘটনার বিচার না হওয়া, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার নিশ্চয়তার প্রতি সরকারের উদাসীনতা ও অপরাধীদের প্রোৎসাহিত করার কারণে এ সকল ঘটনা পুনঃ সংঘটিত হচ্ছে বারংবার। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এ সকল মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাসমূহ ইতিমধ্যে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপিয়ান কমিশনে প্রেরণ করেছে এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিকট এদেশের সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের তথ্য প্রেরণ করবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা সরকার, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার নিকট দাবী জানাই, খুলনার শিয়ালি গ্রামের ঘটনা সহ উল্লেখিত ঘটনা সমূহ তদন্তপূর্বক দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তদের দ্রুত সহায়তা ও নিরাপত্তার পাশাপাশি সারাদেশের সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।
হিন্দু আইন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন সহ হিন্দু বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করা যাবে না। উক্ত দাবিসমূহ পুরণ না করলে এবং হিন্দু নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি ঘটলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিশ্বের ১০০টিরও অধিক দেশে একযোগে ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করবে।