জেলার খবর

শার্শায় অপ্রাপ্ত বয়সী ছাত্রীকে ফুসলিয়ে বিয়েঃ শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীর অভিযোগ।

এসএম স্বপন, জেলা প্রতিনিধি- (যশোর)

শার্শায় অপ্রাপ্ত বয়সী ছাত্রীকে ফুসলিয়ে বিয়েঃ শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীর অভিযোগ।

যশোরের শার্শা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আফসানা মিম (১৬) নামে এক ছাত্রীকে ফুসলিয়ে বিয়ে করায় ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক রাসেল আহম্মেদের (৩৬) বিরুদ্ধে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অভিযোগ দায়ের করেছেন তার প্রথম স্ত্রী শাহনাজ পারভীন লিজা (২৭)।

অভিযুক্ত শিক্ষক রাসেল আহম্মেদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কুল্লা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষক (বিজ্ঞান) হিসাবে কর্মরত আছেন। তার ঘরে স্ত্রী রয়েছে। রাসেল আহম্মেদ আশরা তাসফিয়া হৃদিতা (০৯) নামে এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। এই ঘটনায় ওই এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই শিক্ষক মিম নামের ওই ছাত্রীর ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি তাকে প্রাইভেটও পড়াতেন। সেই সুযোগে এই সুযোগ সন্ধানী শিক্ষক রাসেল ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভনে তার সাথে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এবং পরে লোক চক্ষুর অন্তরালে কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে গোপনে গত ১৭-০৩-২০২০ ছাত্রী মিমকে বিয়ে করেন।

মিমের চাচা আরিফুর রহমান জানান, রাসেল নামের ওই শিক্ষকের চরিত্র খুব একটা ভালো না। সে প্রায়ই বিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরকে উত্ত্যক্ত করত। ওই শিক্ষক তার অপ্রাপ্ত ভাতিজীকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছে বলে আরিফুর রহমান দাবি করেন।
তার ভাতিজীর বয়স কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৬ বছর ১০ মাস ১৮ দিন।

এবিষয়ে রাসেলের প্রথম স্ত্রী লিজা বলেন, গত ২০০৬ সালে রাসেল তাকে ভালবেসে বিয়ে করে। তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তান আছে। তাদের বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত রাসেল ও তার পরিবার। এমতাবস্থায় শার্শা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রাসেলের চাকরি হয়। এবং আস্তে আস্তে রাসেল বিদ্যালয়ের অনেক মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে রাসেলকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে আমাকে একাধিকবার মেয়ের সামনে শারীরিক নির্যাতন করতো বলে দাবি করেন লিজা।

তিনি বলেন, আমাকে গ্রামে রেখে রাসেল নাভারনে ঘর ভাড়া করে সেখানে মিম নামের মেয়ের সাথে থাকত। বিষয়টি জানাজানি হলে সংসারে অশান্তির ভয়ে আমাকে সেই বাসায় তোলে। এবং সেখানেও একাধিক মেয়েকে পড়ানোর নামে নিয়ে আসত। এই সমস্ত বিষয় তার পরিবার জানা স্বত্তেও এবং বারবার বলা স্বত্তেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি, বরং অভিযোগ করলে আমাকে নির্যাতন করত। তার এই অনৈতিক কর্মকান্ডে সবসময় সাহস জুগিয়েছে রাসেলের খালা একই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার ও তার পরিবার। এবং তাসলিমা আক্তার এই সমস্ত বিষয়ে অবগত এবং তার সহযোগিতায় রাসেল এই অপকর্ম করে আসছে।

তিনি আরো জানান, কিছুদিন আগে রাসেল মোটর সাইকেলে এক্সিডেন্ট করলে, তার একটা পা ভেঙ্গে যায়। এই সুযোগে তার খালা তাসলিমা আক্তারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বুঝিয়ে বিদ্যালয়ের একটা রুমে ২৪ ঘন্টা থেকে প্রাইভেট ও ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এনিয়ে এলাকায় কানাঘুষা চলতো মিম সেখানে তার সাথে রাতে থাকত। অথচ এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি কেউ। নানা অযুহাতে আমাকে গ্রামে অথবা বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মিমের সাথে রাত কাটাতো সে। আমার একটা মেয়ে এই অবস্থায় আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।
তিনি নারীলোভী রাসেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

স্থানীয় অভিভাবকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠায় সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে ভাল মানুষ হওয়ার জন্য। যেখানে এমন একজন শিক্ষক থাকে, সেখানে মেয়েদের কোন নিরাপত্তা নেই। আমরা এর আগেও তার নামে একাধিক মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে শুনেছি। এইরকম শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার জন্য এলাকাবাসী জোর দাবি জানান।

এবিষয়ে শার্শা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জাহান-ই-গুলশান জানান, লিজার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আর ব্যাপারে শিক্ষক রাসেল নিজের দোষ স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়েছেন ও ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম খান জানান, এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে, যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button