স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতাদের আক্রান্তের হার ও মৃত্যুঝুঁকি কম

চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণকারী ও অগ্রহণকারী কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তুলনামূলক স্বাস্থ্যঝুঁকির মূল্যায়ন নিয়ে গবেষণা করেছে একদল গবেষক।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে গবেষকরা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দুমাস ধরে গবেষণা করেন।

আজ বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) গবেষণাটির ফল উল্লেখপূর্বক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণার নেতৃত্বে থাকা উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিভাসু ও চাঁদপুর কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে গত ২২ এপ্রিল থেকে ২২ জুন পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৯৩৬ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে দুই হাজার ১৩৭ (১৬.৫২%) জনের শরীরে সার্স-কোভ-২ বা করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। কন্টাক্ট ট্রেসিং এর মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৯৫ জনের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত সম্পূর্ণরূপে পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯৬৮ জন করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে, ৬৩ জন এমন ব্যক্তি পাওয়া যায়, যারা বিভিন্ন সময়ের মধ্যে নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ডের শুধুমাত্র প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। এছাড়া ৬৪ জন প্রথম ও দ্বিতীয়- উভয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেছিলেন। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর যারা দুই ডোজ নিয়েছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার দশমিক ৪৯ শতাংশ।

গবেষণার ফলে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে ১৩৭ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়েছে। যেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে যথাক্রমে সাত ও তিনজন রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। টিকা গ্রহণ করেননি হাসপাতালে ভর্তিকৃত এমন রোগীদের ৮৩ জনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট লক্ষ্য করা গেছে এবং তাদের মধ্যে ৭৯ জনের অতিরিক্ত অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়েছিল। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অক্সিজেন স্যাচুরেশনের মাত্রা সর্বনিম্ন ৭০ শতাংশ পরিলক্ষিত হয়েছে।

অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক (৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ) পাওয়া যায়। এছাড়া, টিকা নেননি হাসপাতালে ভর্তিকৃত এমন রোগীদের মধ্যে সাতজনের আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়েছে, অপরদিকে টিকা গ্রহণকারী রোগীদের আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়নি। টিকা নেননি এমন রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সময়কাল সর্বোচ্চ ২০ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।

গবেষণা নমুনায় যে সর্বমোট ১০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, তারা কেউই প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেননি। আক্রান্তদের মধ্যে যারা টিকা নেননি, তারা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় (কো-মরবিডিটি) ভুগছিলেন। তাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণের হার ছিল ৭৬ দশমিক সাত শতাংশ। এক্ষেত্রে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে এ হার ছিল ১২ শতাংশ।

গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রফেসর ড. শারমিন চৌধুরী, ডা. মোহাম্মদ খালেদ মোশাররফ হোসেন, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. তানভীর আহমদ নিজামী।

উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, গবেষণার ফল থেকে জনসাধারণের নিকট এ ইতিবাচক বার্তা উপস্থাপন করা যায় যে, সরকার বিনামূল্যে যে টিকা দিচ্ছে, সে টিকা নিলে পুনরায় করোনা আক্রান্তের হার কম। যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি কম।

তিনি আরও বলেন, টিকা না নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশেরই বয়স পঞ্চাশ বছরের বেশি ছিল। তাই দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের (সিনিয়র সিটিজেন) প্রাথমিকভাবে টিকার আওতায় আনা গেলে করোনার স্বাস্থ্য এবং মৃত্যুঝুঁকি অনেংকাংশে কমে আসবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button