পিয়নরাও টাকার পাহাড় গড়েছে এড,তৈমুর
দীর্ঘদিন যাবৎ শুনা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশী অনেকের টাকাই সুইস ব্যাংকে,অনেকের বিলাশবহুল বাড়ী ঘর রয়েছে,আমেরিকায়,লন্ডনের বাঙ্গালী পাড়ায় আষ্ট্রেলিয়ায় বেগম পাড়ায়,মালোয়শিয়ায় সাহেব পাড়ায় বিদেশে কাদের বিলাসবহুল বাড়ীঘর রয়েছে,এর একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনের নিকট হাইকোর্ট তলব করেছে।
জানামতে,দুদক এখনো সে তালিকা হাই কোর্টে পেশ করতে পারে নাই,যদি তা অতি সংগোপনে করে থাকে তা হলো ভিন্ন কথা,তবে সে তালিকায় কাদের নাম রয়েছে তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।
সুইজারল্যান্ডে বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকার পাহাড় জমা হয়ে আছে। ২০২০ ইং সালে এ অর্থের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৫৬ কোটি ২৯ লক্ষ ফ্রাংক বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমান৫ হাজার ২৯১ কোটি টাকা যা বাংলাদেশের কমপক্ষে ১২টি বেসরকারী পরিশোধিত মূলধনের সমান। নিম্নে সুইজারল্যান্ডে ২৫৬টি ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমাকৃত আমানতের বাৎসর ওয়ারী একটি হিসাব নিম্নে প্রদান করা হ’ল “২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানতের স্থিতি ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে যা ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৮ সালে ৬১কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ৮ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক।২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক। তবে স্বর্ণালঙ্কার, শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র জমা রাখলে তার আর্থিক মূল্যবান হিসাব করে আমানতে যোগ হয় না।
এছাড়াও ২০১০ সালে ছিল ২৩ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৯ সালে ১৪ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৮ সারে ১০ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৮ সালে ২৪ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৬ সালে ১২ কোটি ৪০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৫ সালে ৯ কোটি ৭০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৪ সালে ৪ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৩ সালে ৩ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক এবং ২০০২ সালে ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক।
২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের প্রায় সমান একক বছর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা সুইজাল্যান্ডে পাচার হয়েছে। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৪টি পদ্দা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ডিজিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এ অর্থ পাচার হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশী দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং),হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা”(সূত্র: জাতীয় পত্রিকা,তাং-১৯/৬/২০২১ ইং)।
অর্থনীতিবিদদের মতে বিনিয়োগ না হওয়ায় পূজি বিদেশে পাচার অর্থাৎ মানি লন্ডারিং হচ্ছে।পূজি দেশে বিনিয়োগ না হওয়ার কারণ বাংলাদেশের আইন এবং দ্বীমূখিভাবে আইনের প্রয়োগ। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার তাবেদার তারা পুজি বিনিয়োগে সরকারের যে আনুকূল্য পায়,ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য তা একেবারে উল্টো। সরকারী দলের লোকেরাও বিদেশে মানি লন্ডারিং বেশী করছে,ক্ষমতা হারালে ভবিষ্যতে যাতে দুদকের মামলার আসামী হতে না হয়।
দেশের মানুষ ইনকাম ট্যাক্স দিতে চায়,কিন্তু উক্ত অফিসের কর্মচারী/কর্মকর্তারাই ট্যাক্স আদায়ে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। কারণ ইনকামট্যাক্স অফিসের পিয়ন, কেরানী থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা ইনকামট্যাক্সের দালালী করে। সরকারের ঘরে যে ট্যাক্স জমা না পড়ে তার চেয়ে বেশী টাকা জমা পরে দূর্নীতিবাজ ইনকামট্যাক্স অফিসের কর্মচারী কর্মকর্তাদের পকেটে।
অনেক কর্মচারী কর্মকর্তা চাকুরীরত অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে চেম্বার খুলে ইনকামট্যাক্স প্যাকটিস করছে, যা আইনসম্মত নহে। দায়িত্ব নিয়েই একথা বলছি। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে। যে ছিল একশত বিঘার জমির মালিক সে হয়েছে ৫০০-১০০০ বিঘার জমির মালিক, পক্ষান্তরে যে ছিল ৫/১০ বিঘা সম্পত্তির মালিক সংসারের ঘানি টানতে টানতে সে নি:স্ব হয়ে ঢাকার বস্তিতে অবস্থান নিয়ে রিক্সা চালায় বা দিন মজুরের কাজ করছে।
দেশের বিত্তশালী মানুষগুলি হচ্ছে অঠেল বিত্ত বৈভারের মালিক এবং মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যে বিত্তরা দিন দিন নি:স্ব হয়ে পড়ছে। বিত্তশালীরা আরো ধনকুবের পরিনত হওয়ায় সকল ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে। বাংলাদেশের ২২টি রাষ্ট্রীয়করণ জুট মিলস্কে সরকার প্রথমে বিরাষ্ট্রীয়করন করে। তখন সরকার থেকে বলা হয়েছিল যে, জুটমিলস্গুলি লাভ করতে পারছে না। এটা অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা।
সরকার ব্যর্থতা ঘুচানোর পরিবর্তে এখন ধনীদের আরো ধনী করার একটা সূযোগ করে দিয়েছে। সরকার ১৭টি জুট মিল ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার জন্য আবেদন পত্র আহবান করেছে। জানা যায় যে,তন্মধ্যে ১৪টি জুট মিল লিজ নেয়ার জন্য ৫১টি আবেদন জমা পড়েছে। কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ এখন ব্যক্তি মালিকানায় চলে যাওয়ার সূযোগ সরকার নিজেই করে দিল।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ পানির দরে এখন হস্তান্তর হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে যাদের টাকা নাই তাদের জন্য দুনিয়া অন্ধকার,হ্যাঁ ভাতে দিন কাটাচ্ছে, সুচিকিৎসার অভাবে হাসপাতালের বারান্দায় কাতরাচ্ছে,সুশিক্ষার অভাবে সন্তানরা হচ্ছে বেকার ও বখাটে, অন্যদিকে যাদের টাকা আছে সূখে শান্তিতে আমোদ ফুর্তিতে দিন কাটিয়েও টাকা যখন উপচে পড়ছে তখন তারা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে গড়ে উঠা রিক্রিয়েশন ক্লাবগুলিতে মদ,জুয়া ও নারী বাজীতে ব্যস্ত।
এ সব ক্লাবগুলিতে ভর্তি হতে মোটা অংকের লক্ষ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। পত্রিকায় দেখেছি যে,অন্যতম রিক্রিয়েশন ক্লাব ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য হতে ৬০ লক্ষ টাকা ভর্তি ফিস লাগে। মনভরা কষ্ট নিয়ে আমাদের এ কথাও শুনতে হয় যে,উক্ত বোট ক্লাবের সভাপতি পদে রয়েছেন বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান যিনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন,মাদক প্রতিরোধ প্রভৃতি বেআইনী কর্মকান্ড প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের প্রধান কর্মকর্তা। অথচ সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে মদ,জুয়া,গনিকা বৃত্তিসহ অনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে,সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে।