সেনবাগে এক এতিম প্রতিবন্ধীকে কবরস্থানে গণধর্ষণ,গ্রেফতার ৩
মোঃ ফখর উদ্দিন,নোয়াখালী প্রতিনিধি-ঃ
সেনবাগে এক এতিম প্রতিবন্ধীকে কবরস্থানে গণধর্ষণ,গ্রেফতার ৩
নোয়াখালীর সেনবাগের অর্জুনতলা ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুরে এক এতিম বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী (২০) গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মো: শাহজাহান শেখ সেনবাগ থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধার তত্ত্বাবধানে সেনবাগ থানার এসআই সাইফুল ইসলাম,এসআই সৌরজিৎ ও এসআই গৌর সাহার নেতৃত্বে ৩ টি টিম অভিযান চালিয়ে ফারুক ( ২৭) ফাহিম(১৯) ও আজকে আরো একটি অভিযানে রিয়াদ নামের আরো এক ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার দুপুরে সেনবাগ থানা পুলিশ তাদেরকে নোয়াখালীর বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। প্রতিবন্ধী ভিকটিম(২০)কে উদ্ধার করে পুলিশী হেফাজতে তার চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। সেনবাগে আলোচিত গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ১০ জনকে আসামী করে ভিকটিমের মা হোসনেয়ারা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(৩)/৩০ তৎসহ ৩৭৯ দ:বি: মামলা নং ৫ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, গত ৬ জুন সকালে ভিকটিম উত্তর মানিকপুর থেকে হাটিরপাড়ে নিজ বাড়ী যাবার পথে শাওন, একরাম,সোহেল ও ফারুক নামের বখাটেরা ভিকটিমকে জোরপূর্বক চোখ মুখ বেঁধে আলী হোসেন হুক্কার অটোতে তুলে নেয়। এরপর আসামী ফারুকদের বাঁশঝাড় ঘেরা কবরস্থানে নিয়ে যায়।সেখানে বিকৃত মানসিকতার বখাটেরা সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত একের পর এক ১০ নরপশু জোরকরে অসহায় মেয়েটির সর্বস্ব কেড়ে নেয়। এক পর্যায়ে দুপুরে মেয়েটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ধর্ষণকারীরা পালিয়ে যায়। দীর্ঘ সময়পর তার জ্ঞান ফিরলে সে কবরস্হান থেকে বিপর্যস্ত অবস্হায় পার্শ্ববর্তী সড়কে এসে পড়ে যায়। এ সময় স্হানীয় লোকজন তার করুন অবস্হা দেখে তাকে হাটিরপাড়ের বাড়ীতে পৌঁছে দেন। পিতৃহীন মেয়েটির শারীরিক অসুস্হতা ও নরপশুদের পাশবিক অত্যাচারের বিষয়টির করুন বর্ণনা শুনে মা হোসনেয়ারা হতভম্ভ হয়ে মূর্চ্ছা যান। পরে সহায়সম্বলহীন হতদরিদ্র বিধবা হোসনেয়ারা গ্রাম্য চিকিৎসকের সহায়তায় মেয়েটির প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। গত ৬ জুন ঘটে যাওয়া পাশবিকতার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য বখাটেরা অব্যাহত হুমকিতে রাখেন পরিবারটিকে।
ভিকটিম হাটিরপাড় মিজি বাড়ীর মৃত আবুল কালামের কন্যা। ভিকটিমের মা জানান, অভাবী সংসার। পরিবারে দুটি সন্তানই প্রতিবন্ধী। ঘটনার দিন বাসাবাড়িতে কাজের সন্ধানে গিয়ে মেয়েটি পার্শ্ববর্তী উত্তর মানিকপুর থেকে বাড়ী আসার পথে ১০ নরপশু দীর্ঘ তিন ঘন্টাব্যাপী দানবীয় তান্ডব চালিয়ে মোবাইলফোনে নগ্ন ভিডিও ধারন করে।
ভিকটিমের মা ও এজাহার সূত্রে জানা যায়,উত্তর মানিকপুরের গফুরের বখাটে পুত্র শাওন (২৬), মসজিদ ওয়ালা বাড়ীর গফুরের পুত্র আকরাম(২৫), হাজি বাড়ির আবু তাহের হাবিলদারের ছেলে ফারুক(২৭),ভুট্টুর ছেলে সোহেল (২৬),টোকন আলীর পুত্র আলী হোসেন প্রকাশ হুক্কা(২৭),ভাসানীর পুত্র মাহফুজ(২১),হারুনের পুত্র রিয়াদ (২৮),সৈয়দ আহাম্মদের পুত্র খলিল (২৫),মোস্তফার পুত্র ইয়াকুব(২৪),জলিলের পুত্র ফাহিম (১৯) ঘটনার মুল নায়ক।
একটি চক্র থানায় অভিযোগ না দিয়ে ভিকটিমের মাকে দিয়ে অর্জুনতলা ইউপি চেয়ারম্যান আ: ওহাব বিএসসির কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করান। এতে স্হানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র এক সপ্তাহ ধরে বিষয়টি ভিন্নভাবে সমাধান করার আশ্বাসে ভিকটিমের পরিবার কে ঘুরাতে থাকেন। স্হানীয় একাধিক সূত্র জানান, ধর্ষণে জড়িত অপরাধীদের প্রতিজন থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ৫ লাখ টাকা নিয়ে চক্রটি আলোচিত ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে তৎপর ছিলেন। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শাহজাহান শেখ জানান, জড়িত বাকী ৮ ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। মামলার আইও সেনবাগ থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,পুলিশের কয়েকটি টিম ধর্ষণকারীদের ধরতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অচিরেই তাদেরকে আইনের কাটগড়ায় দাঁড় করাবো।