জেলার খবর

ছাতক থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম পুরস্কৃত

আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)

ছাতক থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম পুরস্কৃত

সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম সোমবার সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইন অডিটরিয়ামে মাসিক কল্যান সভায় ছাতক থানার সেকেন্ড অফিসার হাবিবুর রহমান পিপিএমকে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেচ হত্যা সহ লাশ ঘুমের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করায় এবং হত্যার ঘটনায় জড়িত ৩ জন আসামীকে দ্রুত গ্রেফতার করায় এ পুরস্কার প্রদান করেন।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কুলাউড়া গ্রামের মৃত বাদল ড্রাইভারের ছেলে জনৈক অলিল মিয়া ওরফে অলি (৩৫) এর ভাবী রাবিয়া খাতুনের সহিত পরক্রিয়া সম্পর্ক হওয়ায় তাহার বড় ভাই আব্দুস শহিদের সহিত তাহার ভাবি রাবিয়া খাতুনের সহিত ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। অলিল মিয়া ওরফে অলি তাহার ভাবী রাবিয়া খাতুনকে বিবাহ করিবে বলিয়া উভয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।

রাবিয়া খাতুন তাহার দেবর অলিল মিয়ার সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও অলি মিযাকে বিবাহ না করে জুড়ি উপজেলা এলাকার জনৈক আয়নুল হক ওরফে মস্তান মিয়াকে গত ২৪/০২/২০২১ ইং তারিখ মৌলভীবাজার কোর্টে এফিডেভিট করে বিবাহ করে। এই আক্রোশে আসামী অলিল মিয়া ওরফে অলি রাবিয়া খাতুনের শিশু ছেলে সাব্বির হোসেন(১৩) কে গত ২৮/০২/২০২১ ইং তারিখ আখাউড়া এলাকায় থাকা তাহার আব্দুশ সহিদ এর বাসা হইতে কৌশলে শিশু সাব্বির হোসেনকে ছাতক থানাধীন দক্ষিন বাগবাড়ী লেবারপাড়া তাহার সহযোগী আসামী খসরু মিয়ার বাড়ীতে তাহার ভাড়া করা রুমে নিয়ে আসে।

একদিন সেখানে অবস্থান করার পর গত ০১/০৩/২০২১ ইং তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ১২.৩০ মিনিটের সময় ঘুমের মাঝে শিশু সাব্বির হোসেনকে গলায় গামছা দিয়ে পেচিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। লাশ রুমে রেখে পালিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনার পর হত্যাকারী অলিল মিয়া ওরফে অলিকে বাঁচানোর জন্য সহযোগী আসামী খসরু মিয়া ও তাহার স্ত্রী সুফিয়া বেগম তাহাদের সহযোগী আসামীদের সহযোগীতায় খুনের ঘটনাটি আড়াল করার জন্য এবং শিশু সাব্বিরের লাশটি যাহাতে কেহ চিনতে না পারে সেই লক্ষে লাশের মুখমন্ডল সহ শরীর বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা পোড়াইয়া লাশটি বিকৃত করে প্রথমে খসরু মিয়ার বসত ঘরের পিছনে কচু বনে নিয়ে কাঁথা ও কম্বল দিয়ে পেচিয়ে লুকিয়ে রাখে।

কিন্তু লাশ হইতে প্রচুর দুর্গন্ধ বাহির হওয়ায় গত ০৩/০৩/২০২১ইং তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ০৪/০৩/২০২১ ইং তারিখ গভীর রাত ০৩ টার সময় ছাতক থানাধীন লাফার্জঘাটের দক্ষিন পার্শ্বে দক্ষিন বাগবাড়ী হাওরে লাশটি লোক চক্ষুর আড়ালে ফেলে রাখে। স্থানীয় লোকজন গত ০৪/০৩/২০২১ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০টার সময় ছাতক থানাধীন দক্ষিন বাগবাড়ী সাকিনস্থ জনৈক হাজী বাবুল মিয়ার পতিত জমিতে বিকৃত অবস্থায় লাশটি স্থানীয় জনগন দেখতে পেয়ে ছাতক থানায় খবর দেন।

ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজিম উদ্দীন’র নির্দেশে ছাতক থানার এসআই মাসুদ রানা মৃত (লাশটির) সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের লক্ষে লাশ পোষ্ট মডেমের জন্য সুনামগঞ্জ হাসপাতালে প্রেরন করেন। মৃতের কোন পরিচয় , দাবিদার বা হত্যার কোন ক্লু না পাওয়ায় এসআই মাসুদ রানা নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মামলা করেন যার মামলা নং-০৬ তারিখ-০৪/০৩/২০২১ইং।

মামলাটি প্রথমে এসআই আসাদুজ্জামান তদন্ত করেন। পরবর্তীতের ছাতক থানার চৌকস সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম এর উপর অর্পন করা হয়। সু

নামগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম সহ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ছাতক সার্কেল বিল্লাল হোসেন, অফিসার ইনচার্জ শেখ নাজিম উদ্দিন’র দিক নির্দেশনায় ছাতক থানার চৌকস সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম দ্রুত সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সহ মৃত অজ্ঞাতনামা শিশুর পরিচয় সনাক্ত করিতে সক্ষম হন।

মামলার ঘটনায় জড়িত আসামী তাজুল মিয়া ওরফে খসরু মিয়ার বসতঘরেই শিশু সাব্বির হোসেনের হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হওয়ার পর আসামী খসরু মিয়া তাহার স্ত্রী সহ মৃত দেহ বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা পোড়াইয়া বিকৃত করা সহ লাশ ঘুম করার ঘটনায় জড়িত থাকায় ছাতক থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম’র নেতৃত্বে ছাতক থানা পুলিশ আসামী দোয়ারা বাজার উপজেলার নরশিংপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের পুত্র বর্তমানে ছাতক পৌর শহরের দক্ষিণ বাগবাড়ী (লেভারপাড়া) বাসিন্দা তাজুল মিযা ওরফে খসরু (৫৫) তাহার স্ত্রী আসামী সুফিয়া বেগম(৪৫) স্বামী- তাজুল মিয়া ওরফে খসরু, সাং- নরশিংপুর, থানা-দোয়ারাবাজার, জেলা- সুনামগঞ্জ দ্বয়কে গত ২৩/০৫/২০২১ইং তারিখ আসামীদের নিজ বাড়ী হইতে গ্রেফতার করিতে সক্ষম হন। গ্রেফতারকৃত আসামী দু’জন মামলার ঘটনায় জড়িত মর্মে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় সেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে এবং শিশু সাব্বির হোসেনকে মুল হত্যাকারী অলিল মিয়া ওরফে অলির নাম প্রকাশ করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তি মতে গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ছাতক সার্কেল বিল্লাল হোসেন নেতৃত্বে ছাতক থানার চৌকস সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান পিপিএম মামলার প্রধান আসামী অলিল মিয়া ওরফে অলিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ০৬.৩০ মিনিটের সময় সিলেট শাহপরান থানাধীন উপশহর তেররতন এলাকা হইতে গ্রেফতার করিতে সক্ষম হন।

চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সহ দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করায় সুনামগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিপিএম ছাতক থানার চৌকস সেকেন্ড অফিসার হাবিবুর রহমান পিপিএমকে পুরস্কৃত করেন। পুরস্কার প্রদান কালে সুনামগঞ্জ জেলার উর্ধতন সকল অফিসার, সুনামগঞ্জ জেলার সকল থানার অফিসার ইনচার্জবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button