লালমোহনে ভাবিকে হাত-পা বেঁধে প্রখর রোদে ফেলে নির্যাতনের অভিযোগ দেবর ডিস ফরিদের বিরুদ্ধে
এ .এইচ. রিপন, জেলা প্রতিনিধি-(ভোলা)
লালমোহনে ভাবিকে হাত-পা বেঁধে প্রখর রোদে ফেলে নির্যাতনের অভিযোগ দেবর ডিস ফরিদের বিরুদ্ধে
ভোলার লালমোহন উপজেলার সদর ইউনিয়নে পরকিয়ার নাটক সাজিয়ে ভাবিকে হাত-পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে দেবর ডিস ফরিদের বিরুদ্ধে।
গত ২৪ এপ্রিল (শনিবার) ওই ইউনিয়নের ফুলবাগিচা বাজার ৫নং ওয়ার্ড পন্ডিত বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ভূক্তভোগী লিমা বেগম ওই বাড়ির প্রবাসী কবির পন্ডিতের স্ত্রী, তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী কবির স্ত্রী লিমা বেগমের জন্য ফুলবাগিচা বাজারের দোকানদার ও পার্শ্ববর্তী বাড়ির সোহাগের বিকাশের মাধ্যমে খরচের টাকা পাঠাতেন। তাই সােহাগের কাছে টাকা উত্তোলনের জন্য যেতেন লিমা। এছাড়াও অতীব প্রয়োজনে প্রায়ই সোহাগের কাছ থেকে ধার করতেন তিনি।
এদিকে লিমার দেবর ডিস ফরিদের সাথে সােহাগের ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তাই ভাবিকে সােহাগের সাথে কথা বলতে দেখে উভয়কে ফাঁসাতে ফন্দি আঁটে ফরিদ। সেই নাটকের ধারাবাহিকতায় গত ২৩ এপ্রিল রাতে হঠাৎই ঘরে অন্য লোক ঢুকেছে বলে লিমার শ্বশুর ডাক চিৎকার দিয়ে উঠে। তবে কাউকে দেখা বা আটক করতে পারেননি তারা। তবুও দােকানদার সোহাগ লিমার ঘরে ঢুকেছে বলে অপবাদ দিয়ে দেবর ফরিদ, শশুর ও শাশুড়ি মিলে লিমাকে মারধর করে।
পরদিন সকালবেলা লিমাকে ঘর থেকে চুলে ধরে টেনে উঠোনে এনে হাতে পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে প্রখর রোদে ফেলে রাখে দেবর ফরিদ। অমানবিক নির্যাতনের পর্ব শেষে লিমাকে ফরিদের মামা সিরাজ মাস্টারের বাড়িতে নিয়ে যায় ফরিদ ও তার পরিবার।
ভূক্তভোগী লিমা জানান, সোহাগের সাথে আমার কোন অনৈতিক সম্পর্ক হয়নি। তবুও আমার মামা শ্বশুর সিরাজ মাস্টার আমাকে স্বামীর সংসার টিকাতে হলে দায় মেনে নিয়ে সোহাগকে ফাঁসাতে বলে। এসময় আমি তার কথা মেনে নিলে সিরাজ মাস্টার নিজের হাতে চেয়ারম্যান বরাবর একটি দরখাস্ত লিখেন এবং আমার স্বাক্ষর নেন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়ে আসেন। তবে ততক্ষণেও আমার কোন চিকিৎসা করানো হয়নি। পরে চেয়ারম্যানের বাসায় এসে লিখিত অভিযোগ চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেয় সিরাজ মাস্টার।
এদিকে স্বামী সংসার টিকানোর জন্য সিরাজ মাস্টারের কথা মেনে নেয়ার সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে আমাকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়ানোর পায়তারা করে দেবর ফরিদ, তার পরিবার ও সিরাজ মাস্টার। আমাকে শিখিয়ে দেয়া কথাগুলো দিয়ে আমাকেই অভিযুক্ত করে বাবার বাড়ি পাঠাতে উদ্যত হয় এবং চেয়ারম্যান সাহেবের বাসায় ফেলে রেখে চলে যায় তারা।
পরে চেয়ারম্যান সাহেবের স্ত্রী আমার নির্যাতনের বর্ণনা শুনে ও চিত্র দেখে আমার চিকিৎসার জন্য বাবাকে খবর পাঠালেও দেবর ও তার পরিবারের দেয়া অপবাদ ও গালিগালাজের লজ্জায় বাবা ভাই কেউ আসেননি।
চাচা ফরিদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ভুক্তভোগী লিমার ৫বছরের কন্যা শিশুটি জানায়, ফরিদ কাকা আমার মাকে মেরেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে দেবর ডিস ফরিদ বলেন, ঘটনার দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না, তবে শুনেছি তাকে (ভাবীকে) বাবার বাড়ি পাঠানোর জন্য রিকসায় উঠাতে গেলে জোর জবরদস্তি করায় এক মহিলা তাকে (ভাবিকে) চর থাপ্পড় মারে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে সিরাজ মাস্টার বলেন, ফােনে লিমা বেগমের শশুরের দেয়া সংবাদ পাই। পরে চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় লিমা। এসময় লিমার অভিযোগ নিজ হাতে লিখেছেন বলে স্বীকার করেন সিরাজ মাস্টার। তবে লিমাকে হাত পা বেঁধে নির্যাতনের বিষয়টি পরে চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর কাছ থেকে শুনেছেন বলে জানান তিনি।
লালমোহন সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজান মিয়া বলেন, প্রবাসী কবিরের স্ত্রী ও সোহাগ কে অনৈতিক কাজের সময় হাতেনাতে ধরার অভিযোগ নিয়ে এসেছিল সিরাজ মাস্টার। পরে মেয়েটিকে আমার বাড়িতে ফেলে রেখে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে সটকে পরে তারা।
লিমার উপর করা অমানবিক নির্যাতনের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমার স্ত্রী অভিযুক্ত লিমা বেগমের বক্তব্য শুনে তার শরিরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পেয়ে আমাকে জানায়। পরে মেয়েটির বাবাকে খবর দিয়ে এনে তাকে চিকিৎসা করাতে বলি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালমোহন থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, আমরা এমন ঘটনার কোন অভিযোগ পাইনি। তবে গতকাল (মঙ্গলবার) গৃহবধূর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযােগ এনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে তার শশুর।