আজ পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা মহোৎসব।
রনজিত কুমার পাল বাবু ঢাকা জেলা প্রতিনিধি-ঃ
আজ পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা মহোৎসব।
আজ শুক্রবার (৫ই জুন) পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উৎসব।
মুলত স্নানযাত্রা হল হিন্দু পঞ্জিকাঅনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে আয়োজিত একটি উৎসব। হিন্দু দেবতা জগন্নাথের ভক্তদের কাছে এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনটিকে জগন্নাথের জন্মতিথি মনে করা হয়।
পুরীতে স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শনচক্র ও মদনমোহন বিগ্রহকে জগন্নাথ মন্দির থেকে স্নানবেদীতে বের করে আনা হয়। সেখানে তাদের প্রথাগতভাবে স্নান করানো হয় এবং ভক্তদের দর্শনের জন্য সুন্দর বেশভূষায় সজ্জিত করা হয়। এই প্রথা বাংলাদেশে ও পালিত হয় উৎসবমুখর পরিবেশে
প্রতি বছর সনাতনধর্মী ভক্তবৃন্দ সারাবিশ্বে বিভিন্ন স্হানে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের (পুরীতে) জনসংখ্যার দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ রথোৎসব ও রথের আকারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ধামরাই এর শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের ঐতিহাসিক রথোৎসব উপমহাদেশের খ্যাত রথোৎসব উদযাপন করার পূর্বে স্নানযাত্রা মহোৎসব পালন করা হয়।
জগন্নাথ কে ? স্নানযাত্রা কী ?কেন করা হয় ?
যেই গৌর, সেই কৃষ্ণ, সেই জগন্নাথ। ভগবান জগন্নাথদেব হলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর।
সংস্কৃতি ভাষায় জগত অর্থে বিশ্ব এবং নাথ অর্থে-ঈশ্বর বোঝায়। সুতরাং জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো জগতের ঈশ্বর বা জগদীশ্বর।
স্কন্ধ পুরানে রথযাত্রার মহিমা বর্ননা করে বলা হয়েছে- যিনি গুন্ডিচা মন্দিরে (জগন্নাথের মাসীর বাড়ী) ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন, তিনি সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন।
জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা/০৫ জুন ২০২০ জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা মহোৎসব
ভগবান জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ দেবের এক বিশেষ স্নান যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রার উৎসব শুরু। স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা হয় স্নান মণ্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদিতে উপবিষ্ট বিগ্রহ সমূহ অবলোকন করা যায়।
অনুষ্ঠানের দিন স্নান মণ্ডপকে ঐতিহ্যবাহী ফুল, বাগান ও গাছের চিত্রকল্প দ্বারা সজ্জিত করা হয়। তোরণ এবং পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এর পর বিগ্রহের উদ্দশ্যে ধুপ, ধুনা অর্পণ করা হয়।
পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক ধরনের কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জল তাদের মুখনিঃসৃত কোন কিছু দ্বারা এমনকি তাদের নিঃশ্বাস দ্বারা দূষিত না হয়।
স্নান মহোৎসবের পূর্বে জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে সিল্কের কাপড় দ্বারা আবৃত করা হয় এবং তারপর লাল এক ধরনের পাউডার দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র জল দ্বারা পূর্ণ থাকে।এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ,কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়।
এরপর জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়।