গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও বন্ধ হয়না অবৈধ ইটভাটা
মোঃ আজাহার সরকার, জেলা প্রতিনিধি-(গাজীপুর)
গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও বন্ধ হয়না অবৈধ ইটভাটা
গাজীপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানের পরও চলছে অবৈধ ইটভাটা। ভাঙ্গা গড়ার খেলায় কে লাভবান হচ্ছে তা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় তিনশত পঞ্চাশটি ইটভাটা রয়েছে এসব উপজেলায় বৈধ ইটভাটার পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছেনা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন ইটভাটা এতে করে বৈধ ইটভাটা মালিকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে ইট প্রস্তুত করার উপযুক্ত এসময় এসময় ইটভাটা গুলো ইট তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। ইটভাটা গুলো ইট পোড়ানোর ধারণ ক্ষমতা সর্বনিম্ন ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ পর্যন্ত রয়েছে যা প্রতিমাসে একবার এক রাউন্ড পুড়ে শেষ করতে পারে।
পুরো সিজনে ছোট ভাটা গুলো ৪২ লাখ বড় ভাটা গুলো ৫৬ লাখ পিছ ইটপোড়াতে সক্ষম হয়। একটি ইট তৈরিরতে সর্বোচ্চ খরচ হয় তিন থেকে চার টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা মালিক জানান যে পরিমাণ ইট পড়ানো হয় একটি ভাটাতে অভিযানে দুই বা ছয় লাখ টাকা জরিমানা দিতে কোন অসুবিধা হয়না। সম্পূর্ণ ধংশ করা হলে অবৈধ ইটভাটা গুলো পূনরায় চাল করতে সুযোগ পেতনা। অভিযানে আংশিক ভেঙে জরিমানা আদায়ের পর সাথে সাথেই আবার চালু হচ্ছে এসব ইটভাটা এতে লাভবান কারা হচ্ছে তা বুঝাই যাচ্ছে।
২০১৯ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় উচ্চ আদালতের নিদর্শননা অনুযায়ী ১৭৪ ইটভাটা ভেঙ্গে গুড়িহয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।বর্তমানে সেখানে চারপাশে ফসলের মাঠ।
২০২০ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিহীন অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। ঐবছর ০৭ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ পৌর এলাকায় ০৮টি ইটভাটা ভেঙ্গে ৬২ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর।
৩১ ডিসেম্বর গাজীপুর সদর উপজেলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর এসময় ১১টি ইটভাটার আংশিক ভেঙে মোট ৬৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করলেও পরবর্তীতে সেগুল সংস্কার করে বহালতবিয়তে আবারও চলছে ১১টি ইটভাটা।
এবছর ১২ জানুয়ারী কাপাসিয়া উপজেলার আড়াল বাজার ও ধানদিয়া এলাকায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর এসময় অবৈধ ০৭ ইটভাটা মালিকদের মোট ৩৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। বাস্তবতা ভিন্নচিত্র বহালতবিয়তে চলছে অভিযান চালানো সাতটি ইটভাটা।
গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের লতিফপুুর এলাকার লতিফপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, এই এলাকায় এবছর ০৫টি ইট ভাটা চালু রয়েছে। ইটভাটার কারণে স্কুলগামী শিশুদের শ্বাসকষ্ট হয়। ১৯৭০ সালে স্কুলটি স্থাপিত হয়। ইটভাটা হয় গত দশ বছর ধরে। পরিবেশ অধিদপ্তর গত বছর এসে আংশিক ভাঙ্গে আবার পুনরায় চলে ইটভাটা। কিভাবে চলে তা বুঝিনা।
লতিফপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম দৈনিক আমার সময়কে বলেন,ইটভাটার কারণে আমাদের ফসল হয়না,ইটভাটা ধোয়া থেকে কালি পড়ে ফসলের উপর।ফুল কপি,বাধা কপিসহ অন্যান্য ফসল কালো হয়ে যায়, যার ফলে,ফসলের সঠিক মূল্য পাওয়া যায় না।
লতিফপুর গ্রামের আরেক কৃষক হাসান আলী শেখ তিনি দৈনিক আমার সময়কে বলেন,আমারা কৃষিনির্ভর মানুষ। কৃষি আবাদ করেই চলে আমাদের জীবন জীবিকা। আধাবেলা ফসলের মাঠে কাজ করলে মাথার চুলে ভেতর আঙ্গুল ঢুকেনা,ইটভাটার কালোধোঁয়া থেকে কালি পড়ে মাথার চুল আঠালো হয়ে যায়।
গত ২৪ জানুয়ারী কালিয়াকৈর উপজেলার একইভাবে অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর। এসময় পরিবেশ ছাড়পত্র বিহীন অবৈধ ০৬ ইটভাটা মালিকদেরও মোট ৩২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
স্থানীয়রা বলছেন গোয়ালবাথান এলাকার বুলবুল আহম্মেদের জেবিবি ব্রিকস মতো অবৈধ ভাটা ধংশ করলে অবৈধ ইটভাটা গুলো সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যেত।
এবিষয়ে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার মোঃ আশরাফ উদ্দিন জানান,জনবল বল পর্যাপ্ত না থাকায় টানা অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে আগামী মাসে সিডিউল বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। আর যে সকল ইটভাটায় অভিযানের পর পূনরায় চালু করেছে তাদের বিরুদ্ধে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও অভিযানে আর কতদিন পর অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধ হবে তা এখন সমেয়ের অপেক্ষা।