বোনের প্রতি বোনের ভালোবাসা
আম্মু, আম্মু, এই আম্মু তুমি কি শোনতে পাওনা ফাতিহা কান্না করছে।পাশের কক্ষ থেকে চিৎকার করে বলছে মারিয়াম। তার চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।তখন রাত ৩ঃ৩০থেকে ৪টা হবে।
পাশে থাকা ফাতিহা’র কান্নায় আমার ঘুম ভাঙ্গে নি। কিন্তু গভীর রজনীতে পাশের কক্ষে থাকা মারিয়ামের চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গলো। উঠে দেখি আসলে ফাতিহা চিৎকার করছে। ইতি মধ্যে মারিয়ামের আম্মু উঠেগেছে।
ফাতিহাকে সামলাচ্ছে।
ফাতিহা খানম দুনিয়াতে এসেছে ২০ জানুয়ারি ২০২১। দুনিয়ায় আসার পর থেকে পূরো দায়িত্ব যেন মারিয়াম খানম বড় বোন হিসাবে নিয়ে নিয়েছে।ফাতিহা’র দেখা-শোনা থেকে শুরু করে মা’য়ের দেখা শোনা পর্যন্ত করছে নিজ দায়িত্বে।যে নিজের গোসল করা ভেজা কাপড় ধৌত করতো না সে এখন মায়ের ঠান্ডা লাগবে বলে ছোট বোন ফাতিহা’র ময়লা করা কাপর ও কাঁথা পরিস্কার করে। তবে,প্রথম দিকে নাক-মূখ বাকা করে বাবা’র সহযোগিতা নিলেও এখন আর নেয় না।
আম্মু জুতা না পরে হাঁটছে নাকি তাও খেয়াল রাখে।
আম্মুকে বিছানা থেকে উঠানো, বাথ রুমে নিয়ে যাওয়া, সময় মতো খাবার ও ঔষধ-পত্য খাওয়ানো, ঘর গুছিয়ে রাখা থেকে শুরু করে পুরো সংসারের দায়িত্ব নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিয়েছে। ১২ বৎসরের মেয়েটি আম্মুর বকাঝকা না করলে খাবার খাওয়া, গোসল করা, এমনকি খাবারের পর প্লেটও ধৌত করতো না সে এই কয়দিনে পূরা সাংসারিক আলহামদুলিল্লাহ।
সাড়া টা দিন ছোট বোন ফাতিহাকে নিয়ে ব্যস্ত। তার সবকিছু সেই করে। তার আম্মু অনেকটা নিরাপদ। মারিয়াম এখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। অনলাইনে ক্লাস করে।ক্লাসের পূর্বে ফাতিহা’র সব কিছু প্রস্তুত করে রাখে। টলি তে সুন্দর করে ঘুছিয়ে, পরিপাটি করে, ফাতিহাকে ঘুম পারিয়ে সামনে রাখে।
কান্না কাটি করলে ক্লাসের মাঝে পা দিয়ে নাড়া-চাড়া করে শান্ত রাখার চেষ্টা করে।নচেৎ আম্মু কে ডেকে দুধ খাওয়ার জন্য ডেকে নেয়। সাড়া টা দিন- রাত বোন ফাতিহা কে নিয়ে পেরেশানি তে কাটায়।
আমি বাসায় থাকা অবস্থায় একপ্রকার জোর করে ঘুমাতে দেই। কি লাভ একটু পরপর ফাতিহা কি করে দেখতে আসবে।একটু এদিক সেদিক হলে বলবে,আপনারা কি করেন। দেখেন না ফাতিহা বাঁকা হয়ে আছে,ওর মূখে কাপড় এসেছে, ওর সাথে কথা বলেন না কেন, ওর সাথে খেলেন। মোবাইলটা ফেলে ওকে সময় দিন আরো কত কি। যেন আমার মা আমিরুন নেছা’র প্রতিচ্ছবি।
শুধুমাত্র বাসায় টিচারের নিকট প্রাইভেট পড়ার সময় টা দূরে থাকা।তারি মাঝে দু’তিন বার এসে দেখে যাবে।
ফাতিহা খানম কেও দেখছি মারিয়ামের কোলে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাদের মাঝে মহব্বত যেন আল্লাহ আরো বৃদ্ধি করে দেন।
আচ্ছা আব্বু। হুম। আমরা দুই বোন ব্যারিস্টার হলে সমস্যা আছে কি ? কেন সমস্যা হবে। তাহলে আমরা বড় হয়ে ব্যারিস্টার হবো ইনশাল্লাহ। আচ্ছা। মারিয়াম খানম বড় হয়ে ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আল্লাহ যেন তার মনের আশা পূরণ করেন।
মারিয়ামের এই দায়িত্বশীলতা দেখে আমরা স্বামী- স্ত্রী মহান প্রভুর নিকট হাজারো কুটি সেজদারত শুকরিয়া আদায় করি।
মহান রব যেন তাদের এই বন্ধন ও ভালোবাসা দৃঢ় করেন। আমৃত্যু বজায় রাখেন। দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত করেন।