ছাতক পৌরসভা নির্বাচনে চলছে আওয়ামলীগ-বিএনপির মর্যাদার লড়াই।
আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)
ছাতক পৌরসভা নির্বাচনে চলছে আওয়ামলীগ-বিএনপির মর্যাদার লড়াই।
ছাতক পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ-বিএনপির ভোট লড়াই এখন উৎসবে পরিনত হয়েছে। পৌরসভার সর্বত্রই বইছে নির্বাচনী উত্তাপ।
সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরাও বিজয়ের লক্ষ্যে পরিবর্তন করছেন তাদের প্রচারনার কৌশল। মেয়র পদে দু’জন প্রার্থী হওয়ায় ভোটাররাও তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষনে মেতে উঠেছেন। দু’প্রার্থীর ক্ষেত্রে একদিকে সরকার দল ও বিরোধি দল অন্যদিকে নবীন-প্রবীন, নারী-পুরুষ এবং যোগ্য-অযোগ্যতার বিষয়টি এখন ভোটাদের মুখ্য বিবেচনায় চলে এসেছে।
আগামী ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য ছাতক পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশিদা আহমদ ন্যান্সির মধ্যে একটি জমজমাট ভোটযুদ্ধের প্রত্যাশা করছেন পৌরবাসী। দলীয় মতবিরোধ না থাকায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সি।
অপরদিকে দলীয় কোন্দলে আওয়ামীলীগের এমপি সমর্থীত পক্ষ নিরব থাকায় একটু পিছনে রয়েছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী। যে কারনে এখানের পৌর নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াইও মনে করছেন অনেকে। নির্বাচন ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাতক পৌরসভা ইতিমধ্যেই ৪টি নির্বাচনী কাল পার করে চলছে ৫ম বারের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা। ১৯৯৯ সালে এ পৌরসভায় প্রতিষ্ঠাকালিন নির্বাচনে পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু।
পরবর্তি ২০০৫, ২০১১ এবং ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী টানা বিজয় লাভ করেন। জন্মলগ্ন থেকেই এ পৌরসভার মেয়র পদ আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে। বিগত প্রতিটি নির্বাচনেই বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও সফল হতে পরেননি। যে কারনে ছাতক পৌর এলাকাকে আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসেবে অনেকেই মনে করে থাকেন। এ পৌরসভায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালে ৩০ ডিসেম্বর।
এ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১০ হাজার ৮২৬ ভোট পেয়ে হ্যাট্রিক বিজয় লাভ করেন আবুল কালাম চৌধুরী। আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু পান ৪ হাজার ৬৫১ ভোট এবং বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৩৫০ ভোট পেয়ে শামছুর রহমান শামছু ছিলেন ৩য় স্থানে। অবশ্য বিগত পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের পরাজয়ের মুল কারন হিসেবে দলীয় কোন্দলকেই দায়ী করছেন নেতা-কর্মীরা। বর্তমানে দলের উভয় বলয়ের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই রাশীদা আহমদ ন্যান্সিকে প্রার্থী হিসেবে চুড়ান্ত করেছে বিএনপি।
যে কারনে আগামী ১৬ জানুয়ারীর পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সির বিজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিজয়কে নিশ্চিত করতে বিএনপির উভয় বলয়ের নেতা-কর্মীরা ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ন্যান্সির পক্ষে প্রচারনায় মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রিয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ জেলা-উপজেলার বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
পৌরসভা নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে মেয়র পদ দখল নিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা চষে বেড়চ্ছে নির্বাচনী মাঠ। অন্য দিকে আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসেবে খ্যাত ছাতক পৌরসভায় মেয়র পদ ধরে রাখতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আবুল কালাম চৌধুরী ও তার কর্মী-সমর্থকরা। মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক নেতৃত্বাধীন এখানের আওয়ামীলীগ দু’টি বলয়ে বিভক্ত থাকায় এমপি বলয়ের কোন নেতা-কর্মীকে এখনো নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি। তবে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নূরুল হুদা মুকুটসহ নেতৃবৃন্দ নৌকার পক্ষে প্রচারনায় নেমেছেন। বিগত নির্বাচন গুলোতেও আওয়ামীলীগের একটি বলয় দলীয় প্রার্থীকে অসহযোগিতা করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনে নিজের বিজয়ের ব্যাপারে বিএনপি প্রার্থী রাশিদা আহমদ ন্যান্সি জানান, জনবিচ্ছিন্ন নয়, জনবান্ধব মেয়র হতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। পৌরবাসীর মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। বিগত ১৫ বছরের পৌরসভার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আবুল কালাম চৌধুরী জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ জুরে চলছে উন্নয়নের মহোৎসব।
তার প্রানপ্রিয় ছাতক পৌরসভায়ও উন্নয়নের মহোৎসব চলমান রয়েছে। এ ছাড়া পৌর এলাকাকে তিলক্তমা শহরে পরিনত করতে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। চলমান কাজ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে ছাতক পৌরসভা একটি আধুনিক মডেল পৌরসভা হিসেবে রূপ নেবে।
তার অসমাপ্ত ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ১৬ জানুয়ারী নৌকায় প্রতীকে ভোট প্রদানের জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানান তিনি। আসন্ন ১৬ জানুয়ারীর নির্বাচনে পৌরসভার ১৯টি কেন্দ্রে ৩০ হাজার ২৮০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মোট ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ২৭১ জন এবং নারী বোটার ১৫ হাজার ৯জন।