প্রবাসে বাংলা

স্মৃতির পাতায় আবু জাহের।

মোঃ রুস্তম খাঁন, রিয়াদ প্রতিনিধি-(সৌদিআরব)

স্মৃতির পাতায় আবু জাহের।

বিশিষ্ট নাট্যকার ও আলেমে দ্বীন বরিশালের কৃতিসন্তান আবু জাহের ভাই। গত চার বৎসর আগে প্রবাসের বুকে তাহার সাথে আমার নাটক জগতে সহকর্মী হিসাবে শেষ অভিনয়। তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের নিবেদিত প্রাণ।

আমার ভুল না হলে প্রায় তিন চার বৎসর আমাদের শিল্পী গোষ্ঠীর কোন কিছুর সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও শিল্পীদের বাসা হতে নিয়ে আসা,আবার দিয়ে আসা, রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নিয়ে আসা,চা তৈরী করে দেওয়া সহ বিভিন্ন কার্যক্রম ধৈর্যের সঙ্গে সবার বয়সে বড় হয়েও মুক্ত মনে করে গিয়েছিলেন। তিনি একজন বড় মাপের আলেম ছিলেন।আচার-আচরণে কোন ভাবে বুঝার উপায় ছিল না যে তার জীবন যাত্রার মান।

আমার রিয়াদের বাথা সুক ওজিরে দোকান থাকাকালীন সময়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার হলেও দেখা করতেন। সময় থাকলে চা- বিস্কুট নিজে থেকে বানিয়ে আমাকে দিতেন নিজেও নিতেন।

কথা খুব কম বলতেন। তবে সবসময় হাসি দিয়ে কথা বলতেন।দুই দিন হয় আমার সাথে কথা ও যোগাযোগ নেই। হঠাৎ মাগরিবের নামাজের পর একজন ফোন করে বললেন,জাহের ভাই বাতা স্টিল ব্রিজের নীচে মাথা ঘুড়িয়ে পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাদের সাথে যোগাযোগ করার দরকার ছিল সবার সাথে কথা হলো।সবাই যার যার অবস্থান থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

শেষ রাতে খবর এলো জাহের ভাই ইহজগতে আর নেই।আমাদের সবাইকে ছেড়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। স্ট্রোক করেছিলেন।

নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। অনেক ক্ষণ কাঁদলাম। কখনো কখনো হাও মাও করেও কাঁদলাম। আমার স্ত্রী ও মেয়ে বাসায় আমার দেখা দেখি তারাও কেঁদেছিল।
কোন রক্তের বাঁধন নেই।নেই কোন আত্মীয়ের সম্পর্ক। শুধুমাত্র আমারা দ্বীনি ভাই।

ইকামার মেয়াদ না থাকার কারণে শত চেষ্ঠা করেও দেশে লাশ পাঠানো যায়নি। বাধ্য হয়ে সৌদি আরবের সকল আইন কানুন মেনে রিয়াদের ১৫নং এক্সিটের আল রাজি মসজিদে জানাজা শেষে নাসিম কবরস্থানে সমাধিত করি।
যখন তার কবরে মাটি দিচ্ছিলাম তখন শুধু কেঁদেছিলাম। চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছিল। কোন এক মুরব্বি সৌদি আমার হাত হতে বেলছা টা নিয়ে ধাক্কা দিয়ে কবর থেকে সড়িয়ে দিয়েছিলেন।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু চোখের পানি মূছে যাচ্ছিলাম। কস্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। দেশে যাবে কত স্বপ্ন ছিল। আর যাওয়া হলো না। তাহার পরিবারের সকল বিষয়ে আমার সাথে শেয়ার করতেন। কত চাহিদা অপূর্ণতা রেখে চলে যেতে হয়েছে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধার।

আলহামদুলিল্লাহ। তার রেখে যাওয়া কিছু ঋণ ছিল। আমারা বন্ধু বান্ধব সবাই মিলে মুক্ত করি এবং পরিবার স্বচ্ছল ছিল না বিধায় কিছু সহায়তা দেশেও পাঠানো হয়েছিল।
বাতায় ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে শেষের দিকে প্রাইভেট গাড়ী দিয়ে মিশোয়ার করে কোন রকমে চলছিলেন।

আমাদের কারোই এখন আর আবু জাহের ভাইয়ের কথা মনে নেই। মনে নেই হয়তো তার কৃতকর্মের কথা। ফেইজবুক আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। কোন একটা অনুষ্ঠানের ছবি দিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম। সেই পোস্টের স্মৃতি চারণে এসেছে। ছবি টা দেখে বুকটা কেঁপে উঠল। ছবিটা দেখতে দেখতে কখন যেনো চোখের কোণে পানি এসেগেল।

আল্লাহ! আমাদের আবু জাহের ভাইের সকল ভুল ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button