খোলাবাজারে ক্রাশিং পাথর বিক্রির চেষ্টা ছাতকস্থ লাফার্জ হোলসিম’র বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে ব্যবসায়ী ও পাথর শ্রমিক।
আব্দুছ ছালাম শাকিল, জেলা প্রতিনিধি-(সুনামগঞ্জ)
খোলাবাজারে ক্রাশিং পাথর বিক্রির চেষ্টা
ছাতকস্থ লাফার্জ হোলসিম’র বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে
ব্যবসায়ী ও পাথর শ্রমিক।
সুনামগঞ্জ ছাতকস্থ লাফার্জ হোলসিম কারখানার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে পাথর ও চুনা পাথর ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা।
কারখানা কর্তৃক ক্রাশিং পাথর-চুনা পাথর খোলাবাজারে বিক্রির পায়তারার বিরুদ্ধে পাথর-চুনাপাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। লাফার্জ হোলসিমের ক্রাশিং পাথর-চুনা পাথর খোলাবাজারে বিক্রির পরিকল্পনা বন্ধ করতে অস্থিত্ব রক্ষায় ব্যবসায়ী-শ্রমিক এখন একাট্টা। ছাতকে লাফার্জ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন কার্যক্রমে কারখানাটি বিতর্কে সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
পরিবেশ দূষনের পাশাপাশি শ্রমিকদের বিভিন্ন বিষয়ে চরম অসন্তোষ রয়েছে কারখানার বিরদ্ধে। বিগত দিনে অধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ কর্মরত শ্রমিকরা কয়েকদফা কর্মবিরতীও পালন করতে দেখা গেছে। শ্রমিকদের মতে তুচ্ছ ঘটনায় চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে প্রায় ২৮ জন পরিবহন শ্রমিককে। চাকুরীচ্যুত পরিবহন শ্রমিকরা মামলাও টুকে দিয়েছে কারখানার বিরুদ্ধে।
বর্তমানে শিল্পনগরী ছাতকের ব্যবসায়ীদের পথে বসাতে লাফার্জ নিয়েছে দুঃসাহসিক পরিকল্পনা। খোলাবাজারে ক্রাশিং পাথর-চুনা পাথর বিক্রির পরিকল্পনা গ্রহন করায় কারখানার বিরুদ্ধে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের মাঝে। মঙ্গলবার এহেন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে ছাতক লাইমষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপ এবং ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে যৌথভাবে লাফার্জ হোলসিমের প্লান্ট ম্যানেজার বরাবরে একটি লিখিত আবেদন দেয়া হয়।
এসময় ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী জয়নাল মিয়া চৌধুরী, ছাতক লাইষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র ভুমি মন্ত্রনালয় কমিটির চেয়ারম্যান আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহতাব মিয়া, জেনারেল সেক্রেটারী অরুন দাস, পাথর সমিতির সাবেক সেক্রেটারী আবুল হাসান, ব্যবসায়ী হাজী আলী আজগর সোহাগ, কামাল হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ছাতকের সুরমা নদীর তীরে ক্লিংকার ও সিমেন্ট উৎপাদন ও বিপনন করার চুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় লাফার্জ সিমেন্ট কারখানা। উৎপাদমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ায় জন্মলগ্ন থেকেই অপেক্ষকৃত কম রাজস্ব দিয়ে এবং ন্যুনতম পরিবহন খরচে চুনাপাথর আমদানী করতে পারছে লাফার্জ। পক্ষান্তরে বানিজ্যিকভাবে আমদানীর কারনে উচ্চ হারে সরকারকে ভ্যাট এবং অধিক পরিবহন খরচ দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
যে কারনে লাফার্জ খোলা বাজারে বর্তমান রেটের চেয় কম মূল্যে ক্রাশিং চুনা পাথর বিক্রি করতে পারবে। ফলে এখানের চুনা পাথর আমদানীকারক ও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ক্ষেত্রে পড়বে চরম হুমকির মুখে। প্রতিযোগিতার বাজারে সম্পূর্ন পরাস্থ হবে এ অঞ্চলের চুনা পাথর ব্যবসায়ীরা। বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়বে হাজার-হাজার পাথর শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। জনরোষের সৃষ্টি হবে লাফার্জের বিরুদ্ধে। অস্থিত্ব রক্ষায় রাজপথে নেমে আসবে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক-জনতা। তখন সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে আনা কঠিন হয়ে পড়বে। ক্ষোভের আগুন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চুনাপাথর ব্যসায়ীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন এখানের ব্যবসায়ীরা।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা কেন্দ্র ছাতকের চুনা পাথর ব্যবসা প্রতিযোগিতার বাজারে ঠিকে রাখতে লাফার্জের খোলাবাজারে ক্রাশিং চুনা পাথর বিক্রি থেকে বিরত থাকা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। লাফার্জ হোলসিমের প্লান্ট ম্যানেজার বরাবরে দেয়া আবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ খোলাবাজারে চুনা পাথর বিক্রির পায়তারা করলে, লাইমষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপ এবং ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতি, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সর্বস্থরের মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠে। তখন এহেন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয় লাফার্জ কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকান্ড না করার শর্তে কর্তৃপক্ষ অঙ্গিকার নামাও করেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
২০১৮ সালের ১৮ জুলাই লাফার্জের ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডাইরেক্টর মিঃ ইয়ং রয় এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল লাইমষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপ এবং ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতি কার্যালয়ে গ্রুপ ও সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে পৃথক বৈঠক করে ক্রাশিং চুনা পাথর খোলাবাজারে বিক্রির ইচ্ছে প্রকাশ করে মতামত জানতে চায়। এসময় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃবৃন্দ এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।
এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৫ নভেম্বর একই অনুরোধ জানিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে লাফার্জ হোলসিমকে একটি চিঠি দেয়া হয়। ব্যবসা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক পরিকল্পনা পরিহার করে খোলাবাজারে ক্রাশিং পাথর-চুনাপাথর বিক্রির পায়তারা বন্ধ রেখে এখানের ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ লাফার্জের প্রতি অনুরোধ জানান। ছাতক লাইষ্টোন ইম্পোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র ভুমি মন্ত্রনালয় কমিটির চেয়ারম্যান আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী জানান, লাফার্জ হোলসিম বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাচ্ছে।
উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুযোগ নিয়ে বেআইনীভাবে কাশিং পাথর খোলাবাজারে বিক্রির চেষ্টা করছে। যা লাফার্জ প্রতিষ্ঠার চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। স্বীয় স্বার্থ পরিহার করে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করার জন্য তিনি লাফার্জ হোলসিম কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।