দেশের শীর্ষস্থানীয় শির্প গ্রূপ এস আলম কো: লি;’র সম্মানিত চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই এস আলম গ্রূপ ও এনআর বি গ্লোব্যাল ব্যাংক লি:’র পরিচালক দেশের অসংখ্য শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থানের স্বপ্নপুরুষ দক্ষিন চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান মোরশেদুলমোরশেদুল আলম (৬২) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।
গত ২২মে, শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি হাসপাতালের আইসিইউ-তে শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন। প্রতিবেদককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব।
ডা. রব বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোরশেদুল আলমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। তিনি আগে থেকেই হার্টের রোগী ছিলেন। তাঁর হার্টে রিং পড়ানো ছিল বলেও জানান ডা. আব্দুর রব। তিনি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
এস আলম পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে পরিবারের সবাই বাসাতেই ছিলেন। বাইরে যাননি কেউ। এরপরও শরীরে হালকা জ্বর দেখা দিলে গত ১৬ মে পরিবারের বেশ কয়জনের নমুনা পাটানো হয় করোনা টেস্টের জন্য। ১৭ মে পাওয়া নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল আলম মাসুদের পাঁচ ভাইয়ের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে মোরশেদুল আলমও ছিলেন। প্রথমে তারা হোম আইসোলেশনে থাকলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় মোরশেদুল আলমকে জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান। করোনায় আক্রান্ত অপর চার ভাই বর্তমানে নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন।
মোরশেদুল আলমের মৃত্যুতে পুরো চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে, তাঁর মৃত্যুর পর পরই সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁর মৃত্যু সংবাদ মুহুর্তেই ভাইর্যাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র দেশের আনাছে-কানাছে। মরহুম মোরশেদুল আরমের মৃত্যুতে তাৎক্ষনিকভাবে শোক জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার বর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোরশেদুল আলমকে মৃত্যুর তিন ঘন্টার মধ্যে রাতেই দাফন করা হয়েছে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে। মোরশেদুল আলমকে সমাহিত হয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে শনিবার ২৩ মে রাতেই দাফন সম্পন্ন হয় তাঁর। জানাজায় এস আলম পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দেড় শতাধিক সদস্য অংশ নেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। মোজাহের আনোয়ার ও চেমন আরা বেগমের এই জ্যেষ্ঠ পুত্রের জানাজায় তার বাকি ছয় ভাইয়ের মধ্যে কেউই উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে মোরশেদুল আলমের দুই পুত্র মাহমুদুল আলম আকিব ও ফসিউল আলম, ভাগ্নে মোস্তান বিল্লাহ আদিল, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের পিএস আকিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন পিপিই পরিহিত অবস্থায় জানাজায় অংশ নেন। মেজ ভাই ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বর্তমানে পরিবারসহ সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। অপর চার ভাই মোরশেদুল আলমের সঙ্গেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। গত ১৭ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাবের পরীক্ষায় সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের এই সদস্যরা করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। এই চার ভাই হলেন, এস আলম গ্রুপের পরিচালক ৬০ বছর বয়সী রাশেদুল আলম, এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ৫৩ বছর বয়সী আবদুস সামাদ লাবু, ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল আলম এবং এস আলম গ্রুপের পরিচালক ৪৫ বছর বয়সী ওসমান গণি। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ওই পরিবারের ৩৬ বছর বয়সী এক নারীও। বর্তমানে তাদের সবাই চট্টগ্রাম নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে নিজ বাসভবনেই আইসোলেসনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মোরশেদুল আলম তার অন্য চার ভাইয়ের সঙ্গে নগরীর সুগন্ধার বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২১ মে) বিকেলে মোরশেদুল আলমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
সেখানে আইসিইউ ওয়ার্ডে আগে থেকেই এস আলম পরিবারের আরেক সদস্য রাশেদুল আলম চিকিৎসাধীন ছিলেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডের দশটি শয্যার সবকটিই পূর্ণ থাকায় সেখানে গুরুতর অসুস্থ মোরশেদুল আলমকে ভর্তি করা যাচ্ছিল না। তবে অপর ভাই রাশেদুল আলমের শারীরিক অবস্থার তুলনামূলক উন্নতি হওয়ায় তাকে আইসিইউ ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে সেখানে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের বড় ভাই মোরশেদুল আলমকে ভর্তি করা হয়।