বাঁশখালীতে ৩৪ জলদস্যুর আত্মসমর্পন, আগামীতে আগ্রহী হচ্ছে অন্য দস্যুরাও।
এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)
বাঁশখালীতে ৩৪ জলদস্যুর আত্মসমর্পন, আগামীতে আগ্রহী হচ্ছে অন্য দস্যুরাও।
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় ১২ নভেম্বর’২০ ইং বৃহস্পতিবার পৌরসভা সদরের জলদী পাইলট হাই স্কুল এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বাঁশখালী, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ৩৪ জন জলদস্যু গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পনের পর থেকে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সর্বত্র ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে।
হাট-বাজারের চায়ের আড্ডায়, মসজিদের পুকুর ঘাটে, খেলার মাঠ ও পাড়ার আড্ডায়ও আলোচনা হচ্ছে জলদস্যুদের আত্মসমর্পন নিয়ে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন অজুহাতে যেসব চিহ্ণিত জলদস্যু, বনদস্যু এবং ডাকাত- সরকার প্রদত্ত এ সুযোগকে যথাযথ উপলব্দি করতে না পেরে আত্মসমর্পন করার সাহস করেনি, তাদের অনেকেই অনুশোচনা ও অনুতাপের আগুনে পুড়ছে।
এমনকি দস্যুবাহীনির সদস্যদের মধ্যেও এ নিয়ে দ্বন্ধ ও বিরোধ সৃষ্ঠি হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা ও পুর্বে পাহাড়কেন্দ্রিক যত জলদস্যু নিয়মিত খুন-জখম ও লুটতরাজের মাধ্যমে সাগরের মৎস্যজীবিদের জিবন অতিষ্ট করে তুলেছে এবং যেসব বনদস্যুরা নির্বিচারে গাছ কেটে সবুজ বনাঞ্চলকে উজাড় করছে, পাশাপাশি লোকালয়ে ঘর-বাড়ি ডাকাতি, খুন, ধর্ষনে জনজিবনকে অনিশ্চিত করে তোলেছে, প্রায় সব ডাকাতদের পুর্নাঙ্গ তালিকা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হাতে রয়েছে বলে বৃহস্পতিবারের আত্মসমর্পন অনুষ্টানের প্রধান অতিথি স্বরাস্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল স্পষ্ঠত ঘোষনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাছিনা সকল সামাজিক অপরাধীদের স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসতে সুযোগ দেওয়ায় বিশ্বাষী।
শুধু তাই নয়, দস্যুতার মত হীন পেশায় জড়িতরা যাতে তাদের ভূল ও পরিনাম বুঝতে পারে সেলক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কৌশলে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তাদেরকে বুঝানোর প্রচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও যদি তারা তাদের ভুল ও ভয়াবহ পরিনাম উপলব্দি করতে না পারে এবং আত্মসমর্পনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসার সুযোগকে এড়িয়ে চলে তাহলে তাদের জিবনের ভয়ঙ্কর পরিসমাপ্তি ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।
কেননা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাছিনা ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষনা করেছে, চলমান প্রক্রিয়ায় অচিরেই সমগ্র উপকুলকে যে কোন মুল্যে দস্যুমুক্ত এলাকায় পরিনত করতে বদ্ধপরিকর।
যেসব জলদস্যু, বনদস্যু আত্মসমর্পন করেনি, তারা প্রশাসনের নজরদারীর নেটওয়ার্কের জালে বন্দি হয়ে আছে। সাময়িক পালিয়ে বেড়াতে পারবে, কিন্তু কোথাও অবস্থান করতে পারবেনা বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারন করে বলেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরো বহুবার আত্মসমর্পনের সুযোগ দেওয়া হবে, পালিয়ে বেড়ানো দস্যুদের উচিৎ হবে, সরকারের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে এসে তাদের স্বজনদের সাথে আনন্দে জিবন কাটানো।
আত্মসমর্পন অনুষ্টানে র্যাবের সাবেক ডিজি এবং বর্তমান পুলিশের আইজিপি ড: বেনজির আহামদও একই হুঁশিয়ারী উচ্চারন করে বঙ্গোপসাগর উপকুল, বনাঞ্চল ও লোকালয়ের সকল ডাকাতদেরকে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসার তাগিদ দেন এবং অন্যতায় জিবনের ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর পরিনতির কথা স্মরন করিয়ে দেন।
বৃহস্পতিবারের আত্মসমর্পন অনুষ্টানে আত্মসমর্পনকারী ডাকাতদের অন্যতম বাঁশখালী ছনুয়ার বাইশ্যা ডাকাত(সাবেক), ইউনুচ সহ আরো অনেক আত্মসমর্পনকারী ডাকাত(সাবেক) তাদের অতীতের ভুল বুঝতে পেরে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সবার সম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “ আমরা যারা দির্ঘদিন সাগরে, বনে ডাকাতী করে জিবন অতিবাহিত করেছি, আমরা কেউ ডাকাত হতে চাইনি।
আমরা কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়ে ডাকাত হয়েছি, কেউ সঙ্গদোষে ডাকাত হয়েছি আবার কেউ কেউ শখের বশে ডাকাত হয়েছি। আমরা আমাদের পরিবার ও স্বজনদের কাঁছ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কত নরক যন্ত্রনার সময় কাটিয়েছি তা শুধু আমরাই জানি।
আমরা আমাদের জিবন শেষ করার পাশাপাশি আমাদের সন্তানদের জিবনও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছি। জননেত্রী শেখ হাছিনার সরকার আমাদেরকে সম্মানজনক ভাবে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়ায় আমরা ও আমাদের পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা আজিবন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাঁছে কৃতজ্ঞ থাকব।
ডাকাতী ও দস্যুতা পেশার সাথে জড়িত আমাদের সকল ভাই-বন্ধুদের অনুরোধ করব, আপনারাও সাহস করে আমাদের মত আত্মসমর্পন করে সম্মানিত হউন।” এরপর থেকে খ্যাত-অখ্যাত অনেক ডাকাত তাদের ভবিষ্যত পরিনতি বুঝতে পেরে আগামীতে যেকোন সময় আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসবে বলে তাদের পরিবার ও স্বজনদের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
যা সমাজ ও রাস্ট্রের জন্য নি:সন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। এ ব্যাপারে স্ব-স্ব এলাকার স্থানিয় প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও পেশাজীবিরাও নিয়মিত ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য: সুন্দরবন, কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীর বিস্তির্ন অঞ্চলের জনজিবনকে নিশ্চিত নিরাপদ করতে র্যাব-৭, র্যাব-৬ ও র্যাব-৮ জলদস্যুদের দমাতে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে সক্রিয় ও শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহন করে অবিরাম টহল ও লাগাতার সাঁড়াশী অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ২৪৮ জন কুখ্যাত জলদস্যুকে আটক, ৭৯৭ টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও ৮,৮৪২ টি গোলা-বারুদ উদ্ধার করে।
এরপর থেকে কার্যত জলদস্যু, বনদস্যু ও ডাকাতরা কোনঠাশা হয়ে পড়ে এবং আত্মসমর্পনের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়ে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসার জন্য সরকার প্রদত্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৪৩ জন এবং ১২ নভেম্বর ২০২০ বাঁশখালীতে ৩৪ জন জলদস্যু ৯০ টি বিভিন্ন ক্যাটাগরীর অস্ত্র ২০৫৬ রাউন্ড গোলা-বারুদ সহ আত্মসমর্পন করে পুনর্বাসনের আশ্বস্থ হওয়ার পর এসব অঞ্চলের অন্যান্য জলদস্যু, বনদস্যু ও ডাকাতরাও আগামীতে আত্মসমর্পনের সুযোগে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।