জেলার খবর

সরকারী রাস্তা জমি হালট খাল ও নদী দখল করে আমান গ্রুপের স্থাপনা, ব্যবস্থা নিচ্ছে না ইউএনও ডিসি।

সাহাদাৎ হোসেন শাহীন, জেলা প্রতিনিধি-(নারায়ণগঞ্জ)

সরকারী রাস্তা জমি হালট খাল ও নদী দখল করে আমান গ্রুপের স্থাপনা, ব্যবস্থা নিচ্ছে না ইউএনও ডিসি।

সোনারগাঁ থানার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নের হিন্দুদের জমি দখল, গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা, নদীতে গোসল করার জায়গা বন্ধ করে নদী দখলের অভিযোগ উঠেছে আমান গ্রুপের বিরোদ্ধে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সোনারগাঁয়ের ইউএনও আতিকুল ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন। সরকারি খাল ভরাট, পাকিস্তান আমলের রাস্তা দিয়ে হাড়িয়া ও গামতলিবাসী হেটে পাকিস্তান বাজার ও বৈদ্যের বাজার যাতায়ত করত বলে সুত্রে জানা যায়। এলাকাবাসী আরো জানায়,“ভুয়া লোক দিয়ে জাল দলিল বানিয়ে দালাল চক্রের মাধ্যমে অনেক জমি হাতিয়ে নিয়েছে আমান গ্রুপ। গ্রামের প্রভাবশালী কিছু লোক সিন্ডিকেট করে আমান গ্রুপের কাছে জালিয়াতির মাধ্যমে নদী গর্বের খাস জমি বিক্রি করেছে”।

সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নে অবস্থিত আমান ইকোনোমিক জোন গড়ে উঠেছে সরকারী রাস্তা, হালট, খাল ও নদী দখল করে। আমান গ্রুপের ম্যানেজার রবিউল হোসেন ও অপর কর্মকর্তা ডিজিএম নাদিরুজামান এর বিরুদ্ধে অন্যের জমি জবর দখলের অভিযোগ করেছে হারিয়া বৈদ্যপাড়া এলাকার সুমন হাসান। আমান গ্রুপের ঐ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী সুমন হাসান। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে হারিয়া বৈদ্যপাড়া এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে সুমন হাসান তার মা নারগিছ বেগমের ২২ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি আমান গ্রুপের লোকজন শক্তি প্রয়োগ করে দখলে নিয়ে রেখেছে। সেখানে মাটি ভরাট করে নিজেদের স্থাপনা করে জবর দখলে আছে। তার মায়ের প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তি উদ্ধার করতে গেলে নানারকম ভয়ভিতির স্বীকার ভুক্তভোগী সুমন হাসান। গত ৩ বছর ধরে তাদের অফিসে ঘুরে ঘুরে কোন প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে থানায় অভিযোগ করে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

আনন্দ বাজারের পাশে সোনমুহী এলাকায় আমান গ্রুপের বিশাল সিমেন্ট কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে মেঘনার তীর ঘেঁষে। অনেক দূর থেকেই তাদের নদী দখলের বিষয়টি চোখে পড়ে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, “আমান গ্রুপ প্রথম দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিনে সেখানে সাইনবোর্ড লাগায়। এরপর নির্বিচারে নদীর জমি দখল করে সেখানে মাটি ফেলে। একই সঙ্গে অনেকের ধানি জমি দখল করে নেয় তারা। ভুক্তভোগীরা প্রশাসন ও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে ঘুরেও প্রতিকার পাচ্ছে না।

স্থানীয় কৃষক হাসান মাতবর জানান, “নদীর তীরে তাঁর মতো আরো অনেকের জমি আমান গ্রুপ দখল করে নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে নদীর খাসজমি। তাদের কারখানার জন্য প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশিই নদীর খাসজমি। প্রশাসন নদী রক্ষার চেয়ে দখলদারদের পক্ষেই বেশি কাজ করছে। স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ হলেও প্রভাবশালীদের কাছে সবাই অসহায়”।

স্থানীয়দের অভিযোগ, “বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন দুই বিঘা জমি কেনে, সঙ্গে আরো ১০ বিঘা খাস জমি দখল করে নেয়। এ জন্য স্থানীয় একটি দালাল শ্রেণি গড়ে উঠেছে। যারা জমি কেনা, খাসজমি দখল এবং নদীর জমি কেনার বানোয়াট দলিল-পর্চা তৈরি করে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করে”।

বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাহবুব সরকার বলেন, “বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পর এখন মেঘনাও হুমকির মুখে। প্রতিদিনই নদী দখল-ভরাট চলছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এর সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় একটি দালালচক্র এদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। তারা সাধারণ মানুষকে ফুসলিয়ে, হুমকি দিয়ে নদীর তীরবর্তী ধানিজমি কম টাকায় কিনে নিচ্ছে। কেউ না বেচলে তার জমি জোর করে দখলে নিচ্ছে”।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, “বৈদ্যের বাজারের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী আবু তালেবের নেতৃত্বে সেখানে একটি প্রভাবশালী চক্র সৃষ্টি হয়েছে। আবুল ফয়েজ শিপন, হাজী শহীদুল্লাহ, ডাঃ আব্দুর রউফসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ে গাজী তালেব নদী ও সাধারণ মানুষের জমি দখলে সহযোগিতা করেছে। চক্রটি বর্তমানে নদীর জমি শিল্প পতিদের হাতে তুলে দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক। কেবল নদী নয়, তাদের কাছে এলাকার সাধারণ ভূমি মালিকরাও অসহায়”।

তবে গাজী আবু তালেব ও আবুল ফয়েজ শিপন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নদীর জমি নয়, আমরা বৈধ মালিকদের জমি বেচা-কেনায় সহযোগিতা করছি।’

ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষে সরকারি খাসজমি রক্ষার দায়িত্ব সোনারগাঁ এসি ল্যান্ড অফিসের। তালিকা করে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তাদের। কেউ সরকারি জমির ওপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে তা উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। তবে মেঘনার জমি দখলের বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ এসি ল্যান্ড অফিসে গিয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত নদীর কী পরিমাণ জমি দখল হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য এসি ল্যান্ড অফিসের কেউ জানাতে পারেননি।

এসি ল্যান্ড বলেন, ‘শিগগিরই মেঘনা নদী দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। তবে আমি শুনেছি, মেঘনা নদীর মেঘনা ঘাট ও বৈদ্যের বাজার আনন্দ বাজার এলাকায় সবচেয়ে বেশি নদী দখল হয়েছে।’ কানুনগো বলেন, ‘মুখে মুখে মেঘনা নদী দখলের কথা জানলেও এসি ল্যান্ড অফিসে এ-সংক্রান্ত কোনো ফাইল নেই।’

পরিবেশ কর্মী এবং সোনারগাঁ সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি এ টি এম কামাল বলেন, ‘মেঘনা দখলের যে মহোৎসব চলছে তা বন্ধ করতে পারে একমাত্র প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের অনেকেই এই দখলের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দখলদারদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দখলদারদের যোগসাজশ থাকায় সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করছে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, সরকারি নদী কিংবা খাসজমি রক্ষার দায়িত্ব তহসিল কিংবা এসি ল্যান্ড অফিসের। কিন্তু তাদের সে ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। তারা জমির নামজারি ও মিস কেস নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকে। এর মধ্যে ইউনিয়ন তহসিলদাররা নদী দখলদারদের প্রধান সহযোগী। মূলত তাঁরাই নদীর খাসজমি দখলের পথ বাতলে দেন। বৈদ্যের বাজারে হযরত আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ‘নদী রক্ষায় কোনো টাকা নেই। নামজারি ও মিস কেসে টাকার ছড়াছড়ি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button