প্রভাবশালীদের দখলে পরিবহন সেক্টর মালিক সমিতি পরিবহন।
সাহাদাৎ হোসেন শাহীন, জেলা প্রতিনিধি-(নারায়ণগঞ্জ)
প্রভাবশালীদের দখলে পরিবহন সেক্টর মালিক সমিতি পরিবহন।
মালিক সমিতি আর পরিবহন ব্যানার দুটোই এখন টাকার খনি। তাই প্রভাবশালী দলের নেতাদের প্রথম টার্গেট পরিবহন সেক্টর। সূত্র বলছে, পরিবহন ব্যবসা এখন পুরোপুরি রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের দখলে। বেশ কয়েকজন সাংসদ-রাজনীতিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত। কিছু রাজনীতিবিদ পরিবহন ব্যবসা না করেও মালিক সমিতি কিংবা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা বনে এই খাত নিয়ন্ত্রণ করছেন। আবার মালিক হয়ে এমনকি মালিক সমিতির নেতা হয়েও তিনি শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ পদ দখল করে আছেন। সচেতন মহলের মতে, শ্রমিক সংগঠনের নেতা হলেই মালিক সমিতির নাম বিক্রি করে অল্পদিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাশীন দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাই ঘুরেফিরে পরিবহন খাতের নীতি-মালা ঠিক করেন। আবার তাঁরাই পরিবহন ব্যবসা করেন ও এই খাতের শ্রমিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এছাড়াও সড়কে ও বাস টার্মিনালে বিভিন্ন মালিক সমিতির নামে সারা বছর শুধু টাকা নেয়া হয়। তবে কোন প্রকার বিপদে পাশে দাড়াঁয় না এসব মালিক সমিতি অথবা সংগঠনের কেউই।
নারায়ণগঞ্জ রুট থেকে বিভিন্ন রুটে বেসরকারি ভাবে প্রায় ১৪টি কোম্পনীর নামে পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়। এর মধ্যে বন্ধন, উৎসব, শীতল, হিমাচল, গ্রীন অনাবিল, মৌমিতা, বাঁধন, লেগুনা, বন্ধু, দুরন্ত, শীতলক্ষ্যা, আনন্দ ও বোরাক সহ বিভিন্ন পরিবহন। এসব পরিবহনের মধ্যে উন্নত মানের বন্ধন, উৎসব, শীতল, হিমাচল ও শীতলক্ষ্যা পরিবহন রয়েছে। তবে দেখা গেছে, এসব পরিবহনের ব্যানার অথবা পরিচালনায় ঘুরেফিরে প্রভাবশালী দলের কয়েকজন নেতাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রুটে চলাচল করা প্রায় প্রতিটি ছোট বড় কোম্পানীর নাম অথবা ব্যানার সাধারণ মালিকদের গাড়িতে ব্যবহার করতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয়। এর মধ্যে বন্ধন, উৎসব, হিমাচল, বন্ধু সহ বেশ কিছু বড় কোম্পানীতে নিজের গাড়ি প্রবেশ করাতে ৩ থেকে ৮ লক্ষ টাকা প্রথমেই ব্যয় করতে হয়। এটাকে পরিবহন সেক্টরের ভাষায় বলা হয় ভর্তি ফি। তবে শুধু মাত্র ভর্তি ফি দিয়েই শেষ নয়।
বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদা দিয়ে নিজের পরিবহন সরকারি রাস্তায় চালাতে হয়। তবে এতো ভর্তি ফি ও নগদ চাঁদার টাকা ব্যয় করেও অনেকের কপালে বড় কোনো কোম্পানীর নাম জুটে না। কারন এসব বড় কোম্পানীতো ক্ষমতাশীন দলের নেতাদের দখলে। তাদের দলীয় অনুমতি ছাড়া কোনোভাবেই এসব কোম্পানীতে প্রবেশ করানো সম্ভব নয়।
এছাড়াও বাঁধন, লেগুনা, দুরন্ত, শীতলক্ষ্যা, আনন্দ সহ বিভিন্ন ছোট কোম্পানীর নাম ব্যবহার করতে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ভর্তি ফি দিতে হয়। আর রাস্তায় বিভিন্ন মালিক সমিতির নামে চাঁদা আদায় তো রয়েছেই। এসব ছোট পরিবহন থেকেই শ্রমিক নেতা ও মালিক সমিতির নাম ব্যবহার করে বছরে কোটি কোটি টাকা খুব সহজেই পকেটে ঢুকাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন শহরের চাষাঢা থেকে বিভিন্ন রুটে প্রায় ৩শ’ ৫০টি লেগুনা চলাচল করে। এদের মধ্যে পরিচালকদের কথা বলে চাষাঢা থেকে সাইনবোড চলাচল করা প্রতিটি পরিবহন থেকে (আগে ছিলো ২৭০ টাকা তবে করোনার পরিস্থিতিতে ১০০ টাকা) ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া চাষাঢা থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত চলাচল করা প্রতিটি লেগুনা থেকে (আগে ছিলো ৩০০ টাকা, এখন ২০০) ২০০ টাকা করে মালিক সমিতির নামে আদায় করা হয়। এছাড়াও চাষাঢা থেকে চিটাগাংরোডে চলাচল করা প্রতিটি লেগুনা থেকে ১০০ টাকা করে নেয়া হয়। দিন শেষে শুধু মাত্র লেগুনা থেকে হাজার হাজার টাকা মালিক সমিতি ও বিভিন্ন নেতাদের নামে উত্তোলন করা হচ্ছে। এমনি ভাবে প্রতিটি মিনিবাস থেকে প্রতিনিয়তই চাঁদাবাজি চলছে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ রুট থেকে সোঁনারগাও রোডে চলাচল করা একমাত্র বাঁধন পরিবহন থেকে ৪ জায়গায় মোট ৩০০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়।
জানা গেছে, চাঁকা ঘুরলেই টাকা। তবে এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারার মধ্যে গাড়ির মালিক পায় এক ভাগ ও শ্রমিকরা পায় এক ভাগ। আর বাকি অংশ যায় বিভিন্ন মালিক সমিতি ও পরিবহন ব্যানারের নামে। এছাড়াও সড়ক-মহাসড়কের প্রতিটি রাস্তায় বিভিন্ন কথিত নেতাদের চাঁদাবাজির বিষয় তো অনেক পুরোনো কথা।
সূত্র বলছে, শুধু মাত্র মালিক সমিতি আর ব্যানারের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। আর এই টাকার উৎস নারায়নগঞ্জ রুটে চালাচল করা প্রতিটি পরিবহন। তবে এই টাকা সাধারণ মালিক অথবা শ্রমিকদের কোনো উপকারে আসে না। যারা সারা বছর রাস্তায় পরিশ্রম করে নেতাদের কোটি কোটি টাকার মালিক বানাচ্ছেন তাদের ছোট খাটো বিপদেও পাশে থাকেনা এসব সুবিধাভোগীরা। উল্টো চাঁদার টাকা দিতে একটু দেরি করলেই বিভিন্ন ভাবে সাধারন মালিক ও শ্রমিকদের লাঞ্চিত করা হয়।