গুজব ছড়ানো ও সহযোগিতার অপরাধে সিআইডির কর্তৃক গ্রেফতার জবি শিক্ষার্থী তিথী সরকার।
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি প্রতিনিধিঃ
গুজব ছড়ানো ও সহযোগিতার অপরাধে সিআইডির কর্তৃক গ্রেফতার জবি শিক্ষার্থী তিথী সরকার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িকভাবে বহিস্কৃত নিখোঁজ ছাত্রী তিথী সরকারকে গুজব ছড়ানো ও সহযোগিতার অপরাধে সিআইডির সাইবার পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর, ২০২০) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সিআইডি।
সাইবার মনিটরিং টিম জানায়, গত ৩১/১০/২০২০ তারিখে সিআইডির সাইবার মনিটরিং টিম লক্ষ্য করে, সামাজিক যোগাযোগ ‘ফেসবুকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে সিআইডির মালিবাগ অফিসের চারতলা থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার’ শীর্ষক একটি মিথ্যা পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।
এই সংবাদটি দ্রুত বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেইজ এ ভাইরাল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সিআইডির অভ্যন্তরে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। এ সকল গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যক্রম শুরু করে সাইবার পুলিশ, সিআইডি।
এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ০২/১১/২০২০ তারিখে রাজধানীর রামপুরাস্থ বনশ্রী এলাকা থেকে অন্যতম গুজব রটনাকারী নিরঞ্জন বড়াল (৫০) কে সনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সাইবার পুলিশ সেন্টার। এ বিষয়ে নিরঞ্জন বড়াল সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিএমপির পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পল্টন থানার মামলা নং-০৯, তারিখঃ ০২/১১/২০২০ খ্রি. ধারাঃ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২)/২৮(২)/৩১(২)/৩৫(২)।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তিথী সরকার তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় উস্কানীমূলক বিভিন্ন পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন, যার ফলশ্রুতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে।
এ সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ বিপদ এড়াতে এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে তার সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর পরামর্শে তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে মর্মে গত ২৩/১০/২০২০ তারিখে পল্লবী থানায় একটি জিডি করে (জিডি নং- ২৩৫৫)। তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বিগত ২৬/১০/২০২০ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিথী সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদকের পদ থেকেও তাকে বহিস্কার করা হয়।
গত ২৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে তিথী সরকারের বড় বোন স্মৃতি রাণী সরকার ডিএমপির পল্লবী থানায় তিথী সরকার নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি জিডি করে। উক্ত জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ অক্টোবর ২০২০ সকাল ০৯.০০ ঘটিকার পর তিথী সরকার মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন বলে জানান।
সাইবার পুলিশ সেন্টারের কাছে থাকা মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে গোপন তথ্য পাওয়া যায় যে, তিথী সরকার স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে গ্রেফতার/অপহরণের নাটক সাজাচ্ছে। তার ধারণা ছিল এভাবে করে আত্মগোপনে থেকে তার অপহরণের দায়ভার অন্যের উপরে চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে সে রেহাই পাবে এবং ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে ধাবিত হবে।
পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকা তিথী সরকারের অবস্থান সনাক্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের লক্ষ্যে সাইবার পুলিশের একটি বিশেষ টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও গোপন সোর্সের এর দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত ১১/১১/২০২০ খ্রি. তারিখে আনুমানিক বিকাল ১৫.৪৫ ঘটিকায় নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন দক্ষিণ শিলমান্ধি, পাচদোনা, নরসিংদী এলাকা থেকে তিথী সরকারকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে তার প্রেমিক শিপলু মল্লিক এর সাথে যোগাযোগ করে বাগেরহাট যান। সেখানে শিপলু মল্লিককে বিয়ে করে বাগেরহাটে অবস্থান করে ৯ নভেম্বর ঢাকায় আসে। পরবর্তীতে শিপলু মল্লিকের নরসিংদীর দূরসম্পর্কের চাচা দেবাশীষ রায়ের বাসায় অবস্থানকালীন সময়ে সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের ২টি টিম তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ১১/১১/২০২০ তারিখ সেখান থেকে তিথী সরকারকে আটক করা হয়। এর আগে ১১/১১/২০২০ তারিখে সকাল ১১.৪৫ ঘটিকায় ঢাকার গুলিস্থানের কাপ্তান বাজারের ইলেকট্রনিক মার্কেট থেকে শিপলু মল্লিককে আটক করা হয়।
নিরঞ্জন বড়াল তিথি সরকারকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট বিভ্রান্তিকর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানো এবং তিথি সরকার নিজে থেকে আত্মগোপনে যাওয়া এবং তিথি সরকারের যাবতীয় কাজে শিপলু মল্লিকের সহযোগিতা করা পূর্বপরিকল্পিত ও একই সূত্রে গাথা। বিগত ০২/১১/২০২০ তারিখে পল্টন থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সংক্রান্ত সিআইডির মামলায় তিথী সরকার এবং শিপলু মল্লিক কে গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে রিমান্ড আবেদন এবং পৃথক মামলাও দায়ের করা হবে।