বাঁশখালীতে ৩৪ জন ডাকাত আত্মসমর্পন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির হাতে।
এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি-(চট্টগ্রাম)
বাঁশখালীতে ৩৪ জন ডাকাত আত্মসমর্পন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির হাতে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা সুন্দর বনকে দস্যুমুক্ত এলাকা ঘোষণা করার পর আজকে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় জলদস্যুরা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এর ধারাবহিকতায় অচিরেই বাঁশখালী সহ চট্টগ্রামের সমগ্র উপকূলীয় এলাকাকে জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত করা হবে।
দস্যুতারমত হীন পেশায় যারা জড়িত আছে তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হলে দ্রুত আজকের আত্মসমর্পণ অনুষ্টানের ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বনদস্যু ও জলদস্যুরাও আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জিবনে ফিরে আসবে, অন্যতায় যে কোন মূল্যে অচিরেই বাঁশখালী সহ সমগ্র উপকূলকে দস্যুমুক্ত করা হবে।
১২ নভেম্বর’২০ ইং, বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার জলদী পাইলট হাইস্কুল মাঠে জলদস্যুদের এক আত্মসমর্পন অনুষ্টানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
র্যাব হেড কোয়াটার্স`র সুজা সরকারের সঞ্চালনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু এমপির সভাপতিত্বে আজকের আত্মসমর্পন অনুষ্টানে প্রধান অথিতি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বিশেষ অথিতি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ডঃ বেনজির আহমেদ, র্যাব (ডাইরেক্টর অপারেশন) কর্ণেল তোফায়েল মোস্তফা, বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিুজর রহমান চৌধুরী এমপি, বোয়ালখালীর সাংসদ মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন এমপি, কুতুবদিয়া-মহেশখালীর সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, চকরিয়ার সাংসদ মোহাম্মদ জাফর আলম এমপি। আজকের আত্বসমর্পণ অনুষ্টানে বাঁশখালী পেকুয়া, কুতুবদিয়া, ও মহেশখালির বাইশ্যা ডাকাত বাহিনী, খলিল বাহিনী, রমিজবাহিনী, বাদশা বাহিনী, জিয়া বাহিনী কালাবদা বাহিনী ফুতুক বাহিনী, বাদল বাহিনী, দিদার বাহিনী, কাদের বাহিনী ও নাছির বাহিনীর থেকে ৩৪ জন জলদস্যু তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে জমাদিয়ে আত্বসমর্পণ করেন। তাদের জমাদেওয়া ৯০ টি অস্ত্রের মধ্যেছিল ৪১ টি এলজি, ১৯টি থ্রি কোয়াটার এলজি, ১ বিদেশি পিস্তল, বিদেশি রিভলবার ১ টি, ডিবিবিএল বন্দুক ১ টি, টি, শুটারগান ৩ টি, পাইপগান ১টি, এয়ারগান ১ টি ।
জমাদেওয়া গোলাবারুদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২০৫৬ টি। আত্বসমর্পণকারী ডাকাতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাঁশখালী ছনুয়ার আব্দুল হাকিম ওরফে বাইশ্যা ডাকাত, মোঃ আহমদ উল্লাহ, আব্দুল গফুর, আব্দুর রহিম, মাহমুদ আলী প্রকাশ বেট্টা, ইউনুছ, নিজাম উদ্দিন ভান্ডারী, শাহাদত হোসেন, সেলিম বাদশা,আবু বক্কর ছিদ্দিক,ওবাইদুল্লা প্রমুখ।
বাঁশখালীতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান নিয়ে বিগত এক সপ্তাহ থেকে সমগ্র উপজেলায় সাজসাজ রব ছিল। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল অনুষ্ঠানস্থলের উভয়পার্শ্বে ১০ কি:মি: এলাকা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় উপজেলার চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নবনির্মিত হ্যালিপ্যাডে প্রথমে পুলিশের আইজিপি ড: বেনজির আহামদ এবং এরপর স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বহনকারী হেলিকপ্টার ল্যান্ড করলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার অতিথিদের অভ্যার্থনা জানান এবং পুর্ব থেকে প্রস্তুত থাকা র্যাব পুলিশের বিশাল গাড়ীবহর নিয়ে জলদি পাইলট হাইস্কুল মাঠের অনুস্থান স্থলে হাজীর হয়।
করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশাল প্যান্ডেলে শুধুমাত্র আত্মসমর্পনকারী ডাকাত ও জলদস্যু সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা হাজির ছিল, এছাড়া সর্বসাধারনের অনুষ্টানস্থলে ঢুকার কোন সুযোগ ছিলনা। ১১.৪৫ মিনিটে মুল অনুষ্টান শুরু হলে আত্মসমর্পনকারী ডাকাত সদস্যরা একের এক তাদের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পনের জন্য এগিয়ে আসতে থাকে মঞ্চে।
এসময় তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে উপস্থিত মেহমান ও দর্শকরা হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করতে থাকে। আত্মসমর্পনকারী ডাকাতদের পুনর্বাসন ও তাদের আইনী সহায়তার আশ্বাষ পেয়ে তারা আনন্দে অভিভুত হয়ে অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এখনো যারা আত্মসমর্পন করেননি তাদেরকে দ্রুত আত্মসমর্পন করার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি আত্মসমর্পনকারী ডাকাত সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাষ দেন।
অনুষ্টানে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালীব সাদলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা কাজমী, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন উপস্থিত ছিলেন।