ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ধামরাইয়ে হিন্দু মহাজোটের মানব বন্ধন।
রনজিত কুমার পাল (বাবু) স্টাফ রিপোর্টারঃ
ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে ধামরাইয়ে হিন্দু মহাজোটের মানব বন্ধন।
কুমিল্লার মুরাদনগরে ফেসবুক গুজব তৈরি করে হিন্দু বাড়ী ঘর ও মন্দিরে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মহিলাদের শ্লীলতাহানি; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অজুহাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হিন্দু শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের প্রতিবাদে এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও প্রক্টরের অপসারন ও সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারের দাবীতে আজ শুক্রবার (০৬-১১-২০২০) ধামরাই উপজেলা জাতীয় হিন্দু মহাজোট, ছাত্র মহাজোট ও যুব মহাজোটের উদ্যোগে ধামরাই উপজেলা চত্ত্বর এলাকায় মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
উক্ত মানব বন্ধন কর্মসূচি ধামরাই উপজেলা শাখা হিন্দু মহাজোটের সভাপতি শ্রী সুব্রত পাল এর সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ’সময় বক্তব্য রাখেন – হিন্দু মহাজোট ঢাকা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী খগেশ চন্দ্র রাজবংশী, ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি শ্রী সুব্রত পাল, সাধারণ সম্পাদক শ্রী মিলন কান্তি রায়, উপজেলা যুব হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক শ্রী মনোরঞ্জন ধর মনু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এ’মানব বন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন –
আপনারা জ্ঞাত আছেন যে গত ১ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে ফেসবুকে গুজব তৈরি করে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা করা হয়েছে। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে শত শত ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক জনতা স্থানীয় হিন্দু চেয়ারম্যান সহ ৪-৫ টি হিন্দু বাড়ী ও তিনটি মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করেছে, পরে গান পাউডার দিয়ে এসব বাড়ী ও মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
হিন্দু নারীদের শ্লীলতাহানি করেছে। চার ঘন্টার দীর্ঘ তাণ্ডবলীলা চলাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সাহায্য পাওয়া যায়নি। প্রতিবারের মতোই হামলার আগে গনজমায়েত করে সেখান থেকেই গ্রুপে ভাগ হয়ে বিভিন্ন বাড়ীতে হামলা শুরু হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা এখানে স্পষ্টতই সক্রিয় ছিলো না। সিনেম্যাটিক স্টাইলে হামলা শেষ হওয়ার পর এখন ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা প্রদান ভুক্তভোগী হিন্দু পরিবারগুলো পরিহাস হিসেবেই বিবেচনা করছে। মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, হিন্দুদের আরাধ্য প্রতিমা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। আচ্ছা মন্দিরে হামলা কি বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননা নয়?
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করে রাখার জন্য “ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা হয়েছে” মর্মে গুজব তৈরি করে সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্র তৈরি করা বর্তমানে ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছে।
টার্গেট করা হিন্দুর নামে ফেইক আইডি তৈরি করে অপ্রীতিকর পোস্ট দিয়ে সেটা ভাইরাল করে নিরীহ হিন্দুদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। অথচ আজ পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কোনটিই প্রমানিত হয়নি। সুতরাং স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে হিন্দু নির্যাতন করার একটা অজুহাত হিসেবে ফেসবুককে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে এই ফেসবুকেই ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে রামু, পাবনার সাঁথিয়া, যশোরের অভয়নগর, রংপুরের ঠাকুরপাড়া, ব্রাহ্মবাড়ীয়ার নাসিরনগর, ঠাকুরগাঁ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
বক্তারা সরকারের নিকট নিমোক্ত দাবি রাখেন – কুমিল্লার মুরাদনগরে ফেসবুক গুজব তৈরি করে হিন্দু বাড়ী ঘর ও মন্দিরে সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মহিলাদের শ্লীলতাহানি; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অজুহাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হিন্দু শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের প্রতিবাদে জানিয়ে তাদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও প্রক্টরের অপসারন ও সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারের দাবী করেন।