‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২০’ উদযাপিত।
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি প্রতিনিধিঃ
‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২০’ উদযাপিত।
নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২০’ তথা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (মহামারী করোনা ভাইরাস এর কারণে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প পরিসরে) উদযাপিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র হল উদ্বোধন ও ভার্চ্যুয়াল প্লাটর্ফমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২০ (১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী) এর শুভ উদ্বোধন করেন অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার ও বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৯.৩০ মিনিটে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এর শুভ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনষ্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এর প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এস. এম. আনোয়ারা বেগম, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, জবি প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১০:৩০টা ভার্চ্যুয়াল প্লাটফরমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতির বক্তব্যে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জগন্নাথ-এর অতীত গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে এবং এই ঐতিহ্যকে বেগবান রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত, নাট্যকলা, চারুকলা এবং ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, “প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানে স্থানীয় জনগণ এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে মেলবন্ধনের সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা ২০০৫ সালে হলেও মাত্র ৭.৫ একর জমির উপর মূলত ২০১১ সাল থেকে এটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। শতভাগ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অন্যান্য সকল সমস্যা অতিক্রিম করেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ এর উদ্বোধন হলো। করোনা মহামারীর পরেই ছাত্রীরা হলে উঠতে পারবে। অবকাঠামোগত যে সংকট রয়েছে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের মাধ্যমে সেটিও নিরসন হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক সহায়তায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কেরাণীগঞ্জে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০ একর (প্রায়) ভূমির অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সম্পদ হচ্ছে মেধাবী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষক পিএইচ.ডি গবেষণা করছেন। মানব সম্পদ উন্নয়নে আমরা অনেক এগিয়ে রয়েছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা আরো বৃদ্ধি করতে হবে, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়। যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীদের অবস্থান সবার শীর্ষে।”
তিনি আরো বলেন, “করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময় যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাস চালু রয়েছে। কিন্তু অনলাইন ক্লাস কখনই অন ক্যাম্পাসের বিকল্প হতে পারে না। ক্লাস সম্পন্ন করা হলেও পরীক্ষা নেয়া এখন সম্ভব হচ্ছে না। প্রটেক্টিভ এক্সাম সিস্টেম সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেকোন পরীক্ষা নেয়া যাবে , এটা নিয়েও কাজ হচ্ছে। বর্তমান প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায়ও নেই।”
তিনি বলেন, “স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য রবি মোবাইল অপারেটরের সাথে শীঘ্রই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা ৩০ জিবি ডাটা প্যাকেজ স্বল্পমূল্যে ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ই-মেইল আইডি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানে এই প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।”
আলোচনা সভায় রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ ওহিদুজ্জামান এর সঞ্চালনায় এছাড়াও বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ নূরে আলম আব্দুল্লাহ, কর্মকর্তার সমিতির সভাপতি বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষকদের পরিবহণের জন্য দুটি মাইক্রোবাস এবং পরিবহণ পুলের গাড়ি চালকদের ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার এর শুভ উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এসময় ট্রেজারার এবং পরিবহণ প্রশাসকসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে ভার্চ্যুয়াল প্লাটফরমে সংগীত বিভাগের উদ্যোগে (বেলা ১২:৩০টা থেকে বেলা ২:৩০টা পর্যন্ত) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
এছাড়াও ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় দিনব্যাপী সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশনা প্রদশর্নীর আয়োজিত হয়। প্রদর্শনীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান রচিত ‘সংকটে মার্কেটিং’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। প্রদর্শনীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ, বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ থেকে প্রকাশিত জার্নাল, শিক্ষকদের প্রকাশিত গ্রন্থ ও অন্যান্য মুদ্রণ উপকরণ স্থান পায়।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘মনোকথা’ এর মুজিব বর্ষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন এবং জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি অব জার্নাল অব সাইকোলজি/২০১৯ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এর নিকট হস্তান্তর করা হয়।