অর্থ ও বাণিজ্য

সরকারী দাম উপেক্ষা করে শার্শায় ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি।

এসএম স্বপন,বেনাপোল প্রতিনিধি-(যশোর)

সরকারী দাম উপেক্ষা করে শার্শায় ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি।

আলু সিন্ডিকেটের কারসাজি রোধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ এবং খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দাম নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। পাশাপাশি এই দরে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক ও বাজার কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই আদেশ অমান্য করে বেশি দাম রাখলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, দাম নির্ধারণ করার পরও শার্শা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খুচরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

আর বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষে আলুর দাম নির্ধারণের পর হিমাগার থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। যাতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু কিনে ভোক্তারা উপকৃত হতে পারেন।

চিঠিতে কৃষি বিপণন অধিদফতর জানায়, দেশে গত মৌসুমে প্রায় ১ দশমিক ৯ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ লাখ টন। অর্থাৎ, গত বছর ৩১ দশমিক ৯১ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু আলু রফতানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ মৌসুমে একজন চাষীর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। আর আলুর মৌসুমে যখন হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে তখন প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৪ টাকা। প্রতি কেজি আলু হিমাগার ভাড়া বাবদ ৩ দশমিক ৩৬ টাকা, বাছাই খরচ শূন্য দশমিক ৪৬ টাকা ও ওয়েট লস শূন্য দশমিক ৮৮ টাকা, মূলধন সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২ টাকা ব্যয় হয়।

অর্থাৎ, উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা। এ ক্ষেত্রে হিমাগার পর্যায়ে বিক্রিমূল্যের ওপর ২-৫ শতাংশ লভ্যাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে হিমাগারের আলুর দাম ২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আলু সংরক্ষণকারীর লাভ হয় কেজি প্রতি ২ টাকা।

অন্যদিকে, আড়তদারি, খাজনা ও লেবার খরচ বাবদ ৭৬ পয়সা খরচ হয়। সে ক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে দাম পড়ে ২৩ দশমিক ৭৬ টাকা। এর সঙ্গে মুনাফা ধরে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ভোক্তা পর্যায়ে সেটা ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়-যা অযৌক্তিক। কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং খুচরা বা ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বেনাপোল বাজারে বাজার করতে আসা শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ জানান, বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশ ধোঁয়া। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই হিমশিম খেতে হয়। তারপর অন্যান্য খরচ তো আছেই। সে তুলনায় করোনার কারণে আয়-ইনকামও অনেক কমে গেছে। সেখানে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে আলু কেনা অযৌক্তিক।

সাংবাদিক আসাদ বলেন, তিনি জামতলা বাজার থেকে আলু কিনেছেন ৪৫ টাকা কেজি দরে। তিনি আরও বলেন, সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও, বাজারে তদারকির অভাবে আলুর দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। তিনি প্রশাসনের প্রতি বাজার মনিটরিং এর আহবান জানান।

বাগআঁচড়া বাজারের তরকারি দোকানদার মেহেদী হাসান বলেন, আগের থেকে আলুর দাম কিছুটা কমেছে। ৫-৬ দিন আগেও যে আলু ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি করছেন ৪৫ টাকা কেজি দরে।

বেনাপোল বাজারের দোকানদার মিজান বলেন, আজ আলু বিক্রি করছেন ৪০ টাকা কেজি দরে। আর আড়তদারদের কাছ থেকে আলু কিনছেন ৩৭-৩৮ টাকা কেজি দরে।

আলুর দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে প্রসঙ্গে আড়তদাররা জানান, সরকার যে আলুর দাম কমিয়েছে, সে আলু এখনও বাজারে এসে পৌঁছায়নি। বিধায় সরকার নির্ধারিত দামে তারা আলু বিক্রি করতে পারছেন না। তাই একটু বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল জানান, কৃষি বিপণন অধিদফতর আলুর দাম নির্ধারন করে দিয়েছেন, এ ধরনের কোন চিঠি তারা এখনো পাননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button