কপিলমুনির একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করতে মরিয়া চক্র ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এ কে আজাদ, পাইকগাছা উপজেলা প্রতিনিধি-(খুলনা)
কপিলমুনির একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করতে মরিয়া চক্র ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি বাজার কেন্দ্রীক সরকারি সম্পত্তিতে গড়ে তোলা একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের পায়তারা চালিয়ে আসছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।ফলে সামাজিক এ প্রতিষ্ঠানগুলি অস্তিত্ব প্রশ্নে হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলির জায়গা সরকারি হলেও তঞ্চকতা ডকুমেন্টস এর উপর ভিত্তি করে জনৈক ব্যাক্তির করা মামলায় কপিলমুনির ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন কে.কে.এস.পি, আনসার ও ভিডিপি ক্লাব, বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়সহ একাধিক সামজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী। কুচক্রীদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে প্রতিষ্ঠানগুলি রক্ষায় ইতোমধ্যে কপিলমুনির সর্বসাধারণ এক হয়ে প্রতিবাদ করেছেন।
তাদের দাবি, আধুনিক কপিলমুনির রুপকার (বিনোদগঞ্জ) প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর রেখে যাওয়া সরকারের অর্পিত সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা এসকল প্রতিষ্ঠান রক্ষা প্রয়োজন। তাদের অভিমত প্রতিষ্ঠান গুলি কারও ব্যাক্তগত সম্পত্তি না। এসব প্রতিষ্ঠান রীতিমতো কপিলমুনির ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
এদিকে উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলি রক্ষায় সর্বশেষ সচেতন কপিলমুনিবাসী ইতোমধ্যে ভূমি দখল প্রতিরোধ কমিটি নামের একটি কমিটি গঠন করেছেন।
জানাযায়,দক্ষিণ খুলনার ইতিহাস-ঐতিহ্যের আঁধার আধুনিক কপিলমুনির অন্যতম জনক রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু জনপদ ও জনপদের মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নিজ অর্থে প্রতিষ্ঠা করেন কপিলমুনি ভরত চন্দ্র হাসপাতাল, যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেন্সরি ,অমৃতময়ী টেকনিক্যাল স্কুল, কপিলমুনি সহচারী বিদ্যা মন্দির, গণ-সৌচাগার, সহচারী সরোবর, বিনোদ গঞ্জ বাজার, সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক, পাবলিক ষ্টেডিয়ামসহ নানা জনহিতকর প্রতিষ্ঠান।
স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের পালা বদলে দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন হলেও দৃশ্যত কপিলমুনির উন্নয়ন হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে বে-দখল হয়েছে তাঁর রেখে যাওয়া অনেক সম্পত্তি।
সুষ্ঠু তদারকি ও নীরিক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়েছে সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক, আধুনিক বাণিজ্য বিপণী প্রতিষ্ঠায় বালু ভরাট হয়েছে সহচরী সরোবর, ব্রিটিশ আমলের চা পট্টিরও ভগ্নদশা। ইতোমধ্যে অনেকে বন্দোবস্ত নিয়ে এর ঐতিহ্য নষ্ট করেছে। পাল হাটায় বন্দোবস্ত নিয়ে সেজেছে ভিন্ন পসরায়।
পাবলিক ষ্টেডিয়ামটিতে ১৯৮৫/৮৬ সাল পর্যন্ত খেলাধুলা চালু ছিল। খেলা-ধুলার পাশাপাশি এক সময় দ্বাপর যুগের ঐতিহ্যের বারুণী মেলাও বসত এখানে। সুবিশাল মাঠে খেলাধুলা থেকে শুরু করে বিনোদনের সব কিছুই হতো স্টেডিয়াম জুড়ে। এরপর এলাকার মানুষ প্রয়োজন অনুভব করে ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ নিয়েই মাঠপ্রান্তে গড়ে তোলেন সামাজিক একাধিক প্রতিষ্ঠান। এখানে রয়েছে কপিলমুনি প্রেসক্লাব, ১৯৯২ সালে বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়, আনসার ও ভিডিপি ক্লাব, ক্রীড়া সংগঠন কে.কে.এস.পি, পাবলিক লাইব্রেরী, এবং শেষের দিকে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ি, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংসদ একটি জামে মসজিদ। এক শ্রেনীর অতিলোভীদের অবৈধ দখল প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে সেকানে কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গতি করা হয় পাবলিক স্টেডিয়ামের এ সম্পত্তির। শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে সুফল পাচ্ছেন জনপদের মানুষ।
তবে স্টেডিয়ামের সম্পত্তির দখল নিতে থেমে থাকেনি কতিপয় চক্র। ১৯৭৬ সালে পাশ্ববর্তী কাজী মাহমুদ (মাখন কাজী) গং একাধিক পন বিহিন তঞ্চকি বেদাড়া দলিল তৈরী করে বিভিন্ন সময়ে দখল প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। যে কারণে সর্বশেষ জরিপেও দলিলগুলি উপস্থাপিত হয়নি। এরপর তারা সেখান থেকে দু’টি প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদ করতে পরিকল্পিতভাবে পাইকগাছা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ১৯/৯৯নং বাটোয়ারা মোকদ্দমা করেন। মামলায় ২৩/১১/০৬ তারিখে রায় ও ২৯/১১/০৬ তারিখে খারিজের ডিক্রী হয়। পরাজিত হয়ে তারা খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৭৬/০৭ নং আপিল মামলা করেন। পরে আদালতকে ভূল বুঝিয়ে তারা একটি বিতর্কিত এক তরফা রায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলি উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন ট্রাইবুনাল, খুলনায় কাজী মাহমুদ হোসেন দিং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসককে আসামী করে একটি মামলা করলে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপংকর বিশ্বাস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন দরখাস্তকারীগণের দাবিকৃত জমি বাবদ ইং ১৬/৮/৭৬, ১০/০৬/৭৬, ০৫/০৭/০৪ তারিখের কোবলা, ওয়াকফ ও দানপত্র দলিল,২৭/১০/০৩, ২৭/১১/৭৬, ০৭/০৬/৭৮ ও ১২/০৬/৭৯ তারিখের কোবলা দরিল সমূহ বেআইনী, পনবিহীন, অকায্যৃকরী, ভিত্তিহীন, বেদাড়া ও যোগসাজসী উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, কপিলমুনির রুপকার রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু একটি পাবলিক স্টেডিয়াম তৈরীর মানষে ১৯৩৩ সালে ছেলে যমুনা বিহারী সাধুর নামে এসএ ৬৪,৬৫,৬৬,৬৭,৬৮ ও ৬৯ খতিয়ানের ৪৩৫ দাগের ১.০৩ একর সম্পত্তি কোবলামুলে খরিদ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৬৫ সালে স্থায়ীভাবে দেশত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত যমুনা বিহারী সাধু স্বত্ত্ববান ভোগ দখলকার থাকেন। পরে কপিলমুনির আরেক রুপকার শেখ আমজাদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সেখানে প্রতিষ্ঠা পায় পাবলিক স্টেডিয়াম।
পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালের ১৭ জুলাই ত্যাক্ত জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভূক্ত করেন। এরপর ভিপি লীজ কেস নং ৩৮/৭৭-৭৮ এর মাধ্যমে রাজস্ব গ্রহনে ইজারা প্রদান শুরু করেন।
সর্বশেষ দখলদারদের অপতৎপরতায় রীতিমত ফুঁসে উঠেছে কপিলমুনিবাসী। ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে ভূমি দখল প্রতিরোধ নামের একটি কমিটি। জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষায় একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে। কমিটির পক্ষে আন্দোলনে সামিল হতে সর্বস্তরের সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কপিলমুনি বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোঃ মজিবর রহমান বলেন, সরকারের আইন মেনে গত ২৮ বছর ধরে তারা সরকারের কাছ থেকে ডি,সি,আর মুলে উক্ত জমির ইজারা গ্রহণ করে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এসময় তিনি বলেন, শুধু বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয় নয়, সকল প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদের সময় এসেছে।