নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও বিএনপি থেকে শত নেতার জাতীয় পার্টিতে যোগদান।
সাহাদাৎ হোসেন শাহীন, জেলা প্রতিনিধি-(নারায়ণগঞ্জ)
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও বিএনপি থেকে শত নেতার জাতীয় পার্টিতে যোগদান।
টানা ৩ মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝুঁকছে ক্ষমতাশালী দলের দিকে। চালক আসনে থাকা আওয়ামী লীগে পূর্বের মত প্রবেশ করার সুযোগ না থাকায় বিকল্প দল জাতীয় পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন বেশ বড় একটি অংশ। নারায়ণগঞ্জের ২টি আসনে জাতীয় পার্টির সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এ সুযোগ ভালোভাবেই লুফে নিচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ ৫ ও নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনের সাংসদদ্বয় জাতীয় পার্টির হলেও বিএনপির সবচেয়ে বেশী ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে ৩ আসন তথা সোনারগাঁয়েই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনারগাঁ বিএনপিতে ৩টি বলয়ের রাজনীতি বিরাজমান। এদের মধ্যে সাবেক সাংসদ রেজাউল করিমের অনুগামীরা ক্রমশই দল ত্যাগ করছেন। বাকি দুটি বলয় থেকে কে কখন যুক্ত হচ্ছেন জাতীয় পার্টিতে তা সব সময় আঁচ করা যাচ্ছে না। তবে বলয় নির্বিশেষে এককালের প্রভাবশালী বিএনপির নেতাকর্মীরা যে দল ছেড়ে সুবিধার আশায় যোগ দিচ্ছেন সাংসদের দলে তা একেবারেই পরিষ্কার। শুধু বিএনপি নয়, স্থানীয় অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকেও জাতীয় পার্টিতে যুক্ত হতে দেখা গেছে সোনারগাঁয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা ৩য় বারের মত ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সোনারগাঁয় বিএনপি ছাড়ার হিড়িক দেখা যায়। বিভিন্ন সভা সমাবেশে ফুল হাতে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগদান করেন জাতীয় পার্টিতে। বিএনপির মত অভিজ্ঞ দলের সাবেক নেতাকর্মীদেরকেও দূরে ঠেলে দেননি সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনিও তার দল ভারী করতে সহজেই টেনে নিয়েছেন তাদের। একই ভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীরা দুই দফায় সোনারগাঁয় সুবিধা করতে না পারায় তারাও বেঁছে নিয়েছেন জাতীয় পার্টির আশ্রয়।
সম্প্রতি, ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ তপনের নেতৃত্বে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। ঐদিন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে লাঙ্গল প্রতীক ও ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে এসব নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।
এর ২দিন পরেই ১২ সেপ্টেম্বর নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপিদর শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে। শনিবার বিকেলে চরকামালদি এলাকায় এ যোগদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নোয়াগাঁ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আবুল কালাম, রফিকুল ইসলাম, ওয়াইস কুরুনি, আবু সাইদ ও জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ফুলের তোড়া দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।
অথচ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন বিএনপির জেলা কমিটির নেতা। তার নেতৃত্বেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করেছে বিএনপি। অথচ তারই এলাকায় ধীরে ধীরে সটকে পড়ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর পূর্বেই এই অঞ্চলে একাধিকবার আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে ও উভয় দল থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বহু নজির রয়েছে। তবে জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর ও বন্দরে এমন দল বদলের চিত্র খুব একটা দেখা যায়না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত স্থানীয় সাংসদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে বাড়তি সুবিধা আদায় করতেই এমন নজির দেখিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের কাছে রাজনৈতিক আদর্শের চাইতে ব্যক্তি সুবিধা বেশী জরুরি। আর সেই কারনেই ধীরে ধীরে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে ঝুঁকছে তারা। ভবিষতে বিএনপির অন্ধকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত স্থানীয় সাংসদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে বাড়তি সুবিধা আদায় করতেই এমন নজির দেখিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের কাছে রাজনৈতিক আদর্শের চাইতে ব্যক্তি সুবিধা বেশী জরুরি। আর সেই কারনেই ধীরে ধীরে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে ঝুঁকছে তারা। ভবিষতে বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলত্যাগীদের চিহ্নিত করে রাখা উচিৎ এখনই। তারা সুবিধাবাদী দলের শত্রু স্বার্থপরদের চিনে রাখা উচিত।