ধর্ম ও জীবন

হৃদয়বিদারক করুন কাহিনী,লুন্ঠিত মানবতা।

নিউজ জাতীয় বাংলাদেশ ডটকমঃ

হৃদয়বিদারক করুন কাহিনী,লুন্ঠিত মানবতা।

এক নবীন মুজাহিদ। ট্রেনিং নিয়ে সবেমাত্র বাড়ি এসেছেন। গুপ্তচররা যেন তার জন্যই ওৎ পেতে বসে ছিল। বাড়িতে আসতে না আসতেই খবরটা তারা দেয় ভারতীয় সৈন্যদের কাছে।এ মুজাহিদের বাড়ি শ্রীনগরের মাইছামা নামক এলাকায়।

উপরের কথাগুলো মুজাহিদ কমান্ডার আমজাদের। তিনি সোপুর থেকে এ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে শ্রীনগর এসে ছিলেন। তিনি যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তা ছিল নবীন মুজাহিদের বাড়ির একেবারে কাছাকাছি। মাত্র পাঁচ ছয়টি ঘর পর। তিনি আরো বলেন-
গুপ্তচরের সংবাদ অনুযায়ী শেষ রাতে সৈন্যরা মুজাহিদের বাড়ির গলির সামনে অবস্থান নেয়। রাতের আঁধার কেটে পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়ার সাথে সাথে তারা তার ঘরটি চারিদিকে ঘিরে ফেলে। এরপর মুজাহিদের নাম ধরে বাইরে থেকে ডাকতে থাকে।

ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরীদের ঘরে ঢুকতে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।এসেই সরাসরি তারা ঘরে ঢুকে পড়ে।এটা তাদের সাধারণ রীতি। কিন্তু এখানে বিপদের আশঙ্কা থাকায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকে।
অভাবিত বিপদে পড়ে মুজাহিদ ঘাবড়ে যায়।

পালাবারো কোন পথ পাচ্ছে না।আর নিজ ঘরে বসে ওদের মোকাবেলার অর্থ -ভাই বোন সবাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া। কোনো উপায় না পেয়ে সে ঘরের মধ্যে তড়পাতে থাকে। পাঁচ ছ,জন সৈন্য এক সুযোগে ঘরে ঢুকে পড়ে। ঘরে প্রবেশ করে সৈন্যরা প্রথমে মুজাহিদ ও তার সাত বয়সী ছোট ভাইকে শক্ত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

এরপর তারা দুই যুবতী বোনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।মানব সভ্যতার কলংক ভারতীয় সৈন্যদের উপর্যুপরি ধর্ষণের ফলে ঘটনাস্থলে দু, বোন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। হিংস্র হায়েনাদের তাতেও তৃপ্তি হলোনা।ওরা রশি দিয়ে বাঁধা ভাইদের সামনে মৃত বোন দুটির হাত পা কেটে রাস্তায় নিক্ষেপ করতে থাকে। তাদের এ বীভৎস নির্মম অত্যাচার নির্যাতন দেখে অসহায় দু ভাই চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে,ভায়েরা আমার! আমাদের বাচাও। সৈন্যরা আমাদের কেটে টুকরো টুকরো করছে। তোমরা কেন এগিয়ে আসছ না? আমার ভাইয়েরা আমাদের বাঁচাও।

আমি অনেকক্ষণ ধরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অস্থির ভাবে তাদের করুন আর্তনাদ শুনছিলাম। তাদের প্রতিটি আহ্বানে আমার শরির শিউরে উঠেছিল। সাধারণত শ্রীনগরে কোনো ঘরে সৈন্যরা প্রবেশ করে অত্যাচার করলেও অন্য ঘরে থেকে তাদের উপর হামলা করা হয় না।কারণ সৈন্যরা সম্পুর্ন প্রস্তুতি নিয়ে আসে।অপ্রস্তত মুজাহিদরা তাদের উপর হামলা করলে পাল্টা আক্রমণের মোকাবেলা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তদুপরি যে থেকে আক্রমণ করা হয় সে ঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়।

আমি অনেকক্ষণ ধরে ভাবছিলাম,কি করা যায়।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সৈন্যদের গতিবিধি লক্ষ্য করছিলাম। এবার ওরা শক্ত রশি দিয়ে বাঁধা দুইভাইকে রাস্তার উপর দিয়ে টেনে হেঁচড়ে নিতে থাকে।ও অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মুজাহিদ ছেলেটি বিকট আওয়াজ করে বলছিল,হে মুসলমান ভাইয়েরা! কোথায় লুকিয়ে আছ তোমরা?ওরা আমাদের দু বোন কে শহীদ করেছে। আমাদের হত্যা করতে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর দোহাই, তোমরা এগিয়ে এসো। আমাদের বাঁচাও।

আমি দু, বোনের কর্তিত ও ক্ষত বিক্ষত লাশের দৃশ্য ও মুজাহিদ ভাইদের আকাশ ফাটানো চিৎকারে স্থির থাকতে পারলাম না। পরিণতির কথা মুহূর্তে ভুলে গিয়ে তাদের দিকে রাইফেল তাক করে এক ব্রাশ ফায়ারে চারজন সৈন্যকে জাহান্নামে পাঠালাম। অবস্থা বেগতিক দেখে বাকি সৈন্যরা প্রাণের ভয়ে দৌড়ে পালাল। শুধু তাই নয়,অবলা অসহায় নারীদের উপর অত্যাচারের সিদ্ধ সশস্ত্র কাপুরুষরা অস্ত্র তুলে নেওয়ারও হিম্মত করল না।

নবীন মুজাহিদ দুই দিনের লোমহর্ষক অত্যাচারের পর পাগল হয়ে যায়। এখন সে অলিতে গলিতে ঘুরে আর চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে,ওরা আমার বোনকে হত্যা করেছে । তাদের পবিত্র অঙ্গগুলো কেটে রাস্তায় নিক্ষেপ করেছে।এখনও তোমরা বসে আছ ? আমাকে বাঁচাও। আমার ভাইকে বাঁচাও।

**মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন,,লেখক সাংবাদিক
যশোর জেলা প্রতিনিধি-নিউজ জাতীয় বাংলাদেশ ডটকম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button