আন্তর্জাতিক

শ্রমিক সংকটে মালয়েশিয়ায়।

অনলাইন ডেস্ক -ঃ

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টানা লকডাউন চলেছে মালয়েশিয়ায়। এতে দেশটির আর্থিক ও শিল্প খাতের পাশাপাশি কৃষি খাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।লকডাউনে শ্রমিক সংকট চরমে ওঠায় দেশটির প্রধান রফতানিপণ্য পাম অয়েল উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আগামী মাসগুলোয় পরিস্থিতি আরো সংকটময় হয়ে উঠতে পারে বলে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।এ ধারাবাহিকতায় দেশটিতে ভোজ্যতেলটির উৎপাদন এক-চতুর্থাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার কৃষি খাতে বিদেশী শ্রমিকের ব্যাপক অবদান রয়েছে। মালয়েশিয়ান পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশন (এমপিওএ) জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে মালয়েশিয়া সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন বিদেশী শ্রমিক নিয়োগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এতে আগে থেকেই ভুগতে থাকা দেশটির রফতানিমুখী পাম অয়েল খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

এমপিওএর প্রধান নির্বাহী নাগিব ওয়াহাব জানান, কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের আগেই মালয়েশিয়ার পাম অয়েল খাতে ৩৬ হাজার শ্রমিকের অভাব ছিল। ওই সময় ধারণা করা হচ্ছিল, মালয়েশিয়ায়ি এবার ভোজ্যতলটির উৎপাদন ১০-২৫ শতাংশ কমতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ আশঙ্কা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।”

মালয়েশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশ। এমপিওএর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির পাম অয়েল খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের ৮৪ শতাংশ বিদেশী। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশটিতে গেছেন। মহামারী শুরুর পর মালয়েশিয়ার সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে অনেক শ্রমিক নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তাদের কাজে ফেরানো সম্ভব হয়নি। ফলে দেশটিতে পাম সংগ্রহ থেকে শুরু করে তেল উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। দেশটিতে পাম অয়েলের ভরা মৌসুম শুরু হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। এ সময়ে শ্রমিক সংকট খাতটিকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

নাগিব ওয়াহাব আরো বলেন, পাম অয়েল কোম্পানিগুলো সরকারি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা স্থানীয়দের খাতটির সঙ্গে জড়িত করছে। তবে এ খাতে স্থানীয়দের খুব একটা আগ্রহ নেই। ফলে প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ হলে আমাদের আর কিছু করার থাকবে না। তখন সরকারি সহায়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠবে।

নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগেই মালয়েশিয়ার পাম অয়েল উৎপাদনে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে শুরু করে। প্রতিকূল আবহাওয়া এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। এছাড়া অপর্যাপ্ত ও অপরিকল্পিত সার ব্যবহারকেও পণ্যটির উৎপাদন হ্রাসের জন্য দায়ী করেছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। টানা তিন বছর প্রবৃদ্ধি বজায় থাকার পর গত বছর মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি কমে ১ কোটি ৮৫ লাখ টনে নেমে এসেছে।

মহামারীর মধ্যে উৎপাদনের পাশাপাশি মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েল রফতানি নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ আশঙ্কা অনেকটা কেটে গিয়েছে। আমদানিকারকদের আকর্ষণ করতে বছরজুড়ে পণ্যটির রফতানি শুল্কে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। এছাড়া নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতিতে অনেক দেশে ভোজ্যতেলটির চাহিদা বেড়েছে। এমপিওবির এক নোটে বলা হয়েছে, বছরের শুরু থেকে ভাইরাস সংক্রমণ, লকডাউন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ থাকার কারণে দেশটি থেকে পাম অয়েল রফতানিতে ভাটা পড়েছিল। গত জানুয়ারি-মে সময়ে রফতানি ২৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। বিশেষত চীন ও ভারতের বাজার হারানোর শঙ্কায় পরেন রফতানিকারকরা।

মহামারীর কারণে চাহিদা কমায় চীন মালয়েশীয় পাম অয়েল কেনা কমিয়ে দিয়েছিল। অন্যদিকে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিরোধের আড়ালে মালয়েশিয়া থেকে পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দিয়েছিল ভারত। তবে জুনে এসে মালয়েশিয়ার বাজারে পাম অয়েলের রফতানি পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এমপিওএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে মালয়েশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে ১৭ লাখ ১০ হাজার টন পাম অয়েল রফতানি হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের আগস্টের পর মালয়েশিয়া থেকে পণ্যটির রফতানি সর্বোচ্চ অবস্থানে উন্নীত হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button