ধর্ম ও জীবন

নারীদের রোযা সম্পর্কীয় গোপনীয় মাসআলা।-

নিউজ জাতীয় বাংলাদেশ

নারীদের রোযা সম্পর্কীয় গোপনীয় মাসআলা।
================================
১। রমজান মাসে মহিলাদের পিরিয়ডের রোজা না রাখলে অথবা রোজা রাখার পর পিরিয়ড শুরু হলে তার জন্য পানাহার করা বৈধ। তবে অন্য লোকদের সামনে পানাহার করা উচিত নয়। দিনের বেলায় যদি ঋতু বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলে দিনের বাকি অংশে রোজাদারের মতো পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করা ওয়াজিব। [আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪২০]

এ প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নামাজের নয়।’ [সহিহ বোখারি ও মুসলিম]

রোজা কাজা করা আর নামাজ কাজা না করা সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রাযিঃ) যা বলেছেন সমস্ত উলামায়ে কেরাম তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অর্থাৎ ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২। হায়েজ (মাসিক পিরিয়ড), নেফাসের (প্রসব পরবর্তী স্রাব) সময়গুলোতে রোজা রাখা নিষেধ, তবে পরবর্তীতে এ দিনগুলোর রোজার কাজা করতে হবে।

৩। পবিত্র অবস্থায় রোজা রাখার পর যদি হায়েজ শুরু হয় বা সন্তান প্রসব হয়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং পরে তা কাজা করতে হবে। চাই সেটা ফরজ বা নফল রোজা হোক।

৪। রমজান মাসে সুবহে সাদেকের পর যদি কোনো মহিলার হায়েজ, নেফাস বন্ধ হয়ে যায় এবং সে এই সময়ের মধ্যে কোনো কিছু পানাহার না করে এমতাবস্থয় যদি সে রোজার নিয়ত করে তাহলে ওই দিনের রোজা শুদ্ধ হবে না ববং পরবর্তীতে উক্ত রোজার কাজা করতে হবে, কারণ সে দিনের শুরুলগ্নে অপবিত্র ছিল।

৫। যদি কেউ পূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত পর, রাতের শেষভাগে গিয়ে পবিত্র হয় এবং তখন রাতের এতটুকু সময়ও হাতে নেই যার মধ্যে একবার আল্লাহু আকবার বলতে পারে। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব। আর যদি ১০ দিনের কমে হায়েজ বন্ধ হয় এবং এতটুকু রাত অবশিষ্ট থাকে, যার মধ্যে তাড়াহুড়া করে গোসল করে নিতে পারে তবে ১ বারও আল্লাহু আকবার বলা যায় না। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় গোসল না করে থাকলে গোসল ছাড়াই রোজার নিয়ত করে নিবে, আর যদি সময় তার চেয়েও কম থাকে তাহলে রোজা হবে না, তাই সে রোজা রাখবে না। তবে সারাদিন তাকে রোজাদারের মতোই থাকতে হবে এবং পরে কাজা করতে হবে।

৬। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা মুখস্থ হোক বা দেখে হোক জায়েজ নয়।

৭। কোনো মেয়ের হেফজ করা অবস্থায় হায়েজ এসে গেলে এবং মুখস্থ করার জন্য তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বা কোনো হাফেজা মেয়ের হায়েজ অবস্থায় কোরআন হেফজ করার জন্য তেলাওয়াত জারি রাখতে চাইলে মনে মনে তেলাওয়াত করবে মুখে উচ্চারণ করবে না।

৮। হায়েজ, নেফাসওয়ালি মহিলা বাচ্চাদেরকে কোরআন শরিফ বানান করে শিক্ষা দিতে পারবে। তবে রিডিং পড়ানোর সময় ১ শ্বাসে পূর্ণ ১ আয়াত পড়াতে পারবে না বরং শ্বাস ভেঙ্গে ভেঙ্গে ১-২ শব্দ করে পড়াতে হবে।

৯। কোনো মহিলা হায়েজ, নেফাস অবস্থায় আয়াতে সিজদার তেলাওয়াত শুনলে তার ওপর সিজদা করা ওয়াজিব নয়।

১০। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন শরিফ স্পর্শ করা যেমন জায়েজ নয় অনুরূপভাবে কোরআনের আয়াত কোথাও লেখা থাকলে তাও স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে যদি এমন কোনো কিতাব হয় যার মধ্যে কোরআনের আয়াত অপেক্ষা অন্য কোনো লেখা বেশি থাকে তাতে হাত লাগানো যাবে, তবে আয়াতের ওপর হাত লাগানো যাবে না।

১১। বর্তন, পিরিচ অথবা কাগজের ওপর যদি শুধু কোরআনের আয়াত লেখা থাকে, তাতে হাত লাগানো যাবে না, তবে পৃথক কোনো কাপড় দিয়ে তা ধরা যাবে।

১২। কোরআন শরিফের গিলাফ যদি কোরআন শরিফ থেকে আলাদা হয়, তবে তা দ্বারা কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে। অনুরূপভাবে শরীরে থেকে বিচ্ছিন্ন কাপড় দ্বারাও কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে।

১৩। কোরআন শরিফের সঙ্গে সংযুক্ত গিলাফ এবং যে কাপড় শরীরের সঙ্গে যুক্ত আছে যেমন উড়না, জামার আস্তিন ইত্যাদি দ্বারা কোরআন শরিফ স্পর্শ করা বা ধরা জায়েজ নয়।

১৪। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ধর্মীয় কিতাব পড়া এবং সেগুলো স্পর্শ করা জায়েজ আছে। তবে যে সব স্থানে কোরআনের আয়াত লেখা আছে তা পাঠ করা যাবে না এবং সেখানে যেন হাতের স্পর্শ না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

১৫। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া যাবতীয় জিকির-আজকার, দোয়া-দুরুদ ও তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা জায়েজ আছে। এমনকি দোয়ার নিয়তে কোরআনের আয়াতও পাঠ করা জায়েজ আছে।

১৬। পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে কোনো অসুবিধা নেই।

১৭। গর্ভবর্তী বা স্তন্যদানকারিনী রোজাদার মহিলার যদি রোজা রাখার কারণে বাচ্চার বা তার প্রাণহানি মা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে রোজা ভেঙ্গে ফেলা জায়েজ; অন্যথায় জায়েজ হবে না।

১৮। ইস্তিহাযা (অসুস্থতাজনিত কারণে দেখা দেয়া স্রাব, নিয়মিত পিরিয়ডকালীন সময়ের বেশি সময়ে যা দেখা দেয়) অবস্থায় রোজা রাখা সহিহ এবং জরুরি। রোজা না রাখার অনুমতি নেই।

১৯। ইস্তিহাযা অবস্থায় মহিলারা নিজ ঘরে ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইতিকাফ করতে পারবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই ।

২০। ইস্তিহাযা অবস্থায় মহিলারা কোরআন শরিফ তেলাওয়াত ও স্পর্শ করতে পারবে।

২১। প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের প্রতিমাসে মাসিক হওয়া আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। নিয়মিত মাসিক হওয়া স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী। এ জন্য ইসলা‍মি শরিয়ত তাদের এ দিবসগুলোতে রোজা না রাখার বিধান রেখেছে। এতদসত্ত্বেও যদি কোনো নারী ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রাখে তাহলে শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা-নিষেধ নেই। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় এরূপ না করায় উত্তম। তা সত্ত্বেও যদি কেউ এমন ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। [আল বাহরুর রায়েক: ২/৪৪৯, ফতোয়ায়ে হক্কানি: ৪/১৫৮]

২২। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর প্রসূতি অথবা রুগ্ন দুর্বল মহিলা, যে রোজা রাখতে পারে না, এমতাবস্থায় তার পক্ষে ফিদইয়া দেয়া যথেষ্ট নয়। যদি ফিদইয়া দিয়ে দেয় এবং পরে সুস্থ হয় এবং রোজা রাখার সক্ষমতা এসে যায়, তাহলে ওই রোজার কাজা করা জরুরি। [ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৬/৪৭৮]

২৩। দুধ পান করানোর দ্বারা মহিলাদের রোজা ও অজু ভাঙ্গে না। রোজা এ জন্য ভাঙ্গে না, দুধ বের হওয়াই স্বাভাবিক। রোজা তো পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার নাম। [ফাতাওয়া দারুল উলুম: ৫/৪০৮]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন – আমীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button