প্রাণহানিতে শীর্ষে ইউরোপ, সংক্রমণে উত্তর আমেরিকা
পৃথিবীজুড়ে চলছে করোনা মহামারি। যার শিকার বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চল। যেখানে নারী, পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ বনিতা কেউই বাদ যায়নি। যার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষের। যদিও পুনরুদ্ধার হয়েছেন প্রায় ৭৬ লাখ ভুক্তভোগী।
এশিয়ার দেশ চীনে ভাইরাসটির উৎপত্তির মধ্যদিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও সবচেয়ে ভুক্তভোগী উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় মহাদেশের মানুষ। এর মধ্যে প্রাণহানিতে এখনও ইউরোপের দেশগুলো এগিয়ে রয়েছে। তবে, অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ক্রমান্বয়ে তা কমতে শুরু করেছে।
বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যমতে, ইউরোপের ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৫ জন মানুষের দেহে হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এর মধ্যে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৫৪০ ভুক্তভোগী বেঁচে ফিরলেও ১ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা বিশ্বের মহাদেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাণহানি।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাশিয়া, স্পেন, ব্রিটেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, বেলারুশ, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাশিয়ায় (সোয়া ৭ লাখ) এবং সর্বোচ্চ মৃত্যু ব্রিটেনে (প্রায় ৪৫ হাজার)।
অপরদিকে, এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও সহগোত্রীয় দেশগুলোতে তুলনামূলক কম হওয়ায় প্রাণহানিতে ইউরোপের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। তবে খুব বেশি নয়। যার ব্যবধান মাত্র ১০ হাজারের একটু বেশি।
জরিপ বলছে, ৪০ লাখের বেশি মানুষের দেহে মিলেছে ভাইরাসটি। যা মহাদেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে এক আমেরিকাতেই ভুক্তভোগী ৩৪ লাখের বেশি। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার মানুষের। এর মধ্যে সুস্থতা লাভ করেছেন প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ মানুষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এ অঞ্চলের অন্যান্য ভুক্তভোগী-মেক্সিকো, কানাডা, পানামা, হন্ডুরাস ও গুয়েতেমালার মতো দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মেক্সিকো। যেখানে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, দক্ষিণ আমেরিকায় এখন পর্যন্ত ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৬১১ জন মানুষ করোনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রাণ ঝরেছে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি মানুষের। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন পৌনে ১৯ লাখ রোগী। দক্ষিণ আমেরিকায় মোট আক্রান্ত ও প্রাণহানির অধিকাংশই ব্রাজিল, পেরু, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও আর্জেন্টিনায়।
এর মধ্যে সবচেয়ে সংকটাবস্থায় থাকা ব্রাজিলে আক্রান্ত ১৮ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৭২ হাজারের বেশি মানুষ। যদিও অর্ধেকের বেশি ভুক্তভোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন।
সংক্রমণ ও প্রাণহানির তালিকায় চারে এশিয়া মহাদেশ। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ দেশ চীনের উহান শহরে উৎপত্তি ঘটে ভাইরাসটির। এর মধ্যে মাত্র আড়াই মাসের মাথায় করোনাকে বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করা হয়। ততক্ষণে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। আর নিয়ন্ত্রণে আসে চীনে।
তারপরও এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত বেশ ভোগাচ্ছে ভাইরাসটি। যেখানে ২৯ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় ধুকছেন। আর প্রাণহানি ঘটেছে ৭০ হাজারের বেশি মানুষের। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন সাড়ে ২০ লাখের মতো রোগী।
এর মধ্যে সংক্রমণ ও প্রাণহানিতে শীর্ষে ভারত। যেখানে পৌনে ৯ লাখের বেশি মানুষের দেহে জেকে বসেছে করোনা। মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজারের বেশি ভারতীয়র। এরপরই রয়েছে ইরান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, তুরস্ক, বাংলাদেশ, কাতার, চীন, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস ও ওমানের মতো দেশগুলো।
ইউরোপ, উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়ায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালালেও এখনও নিয়ন্ত্রণে আফ্রিকার দেশগুলোতে। তবে, সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় কিছুটা সংক্রমণ বেড়েছে। সবমিলে এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ মানুষ করোনায় ভুক্তভোগী। এর মধ্যে অর্ধেকই সুস্থ হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজারের বেশি মানুষের।
দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও, মিশর, নাইজেরিয়া, ঘানা, আলজেরিয়া, মরক্কো, ক্যামেরুনের মতো দেশগুলোতে কিছুটা সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তবে, এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্বব্যাপী করোনা জ্বরে কাপলেও স্বাভাবিক রয়েছে ওশেনিয়া অঞ্চলের মানুষ। করোনার প্রথমদিকে ছড়িয়ে পড়লে কঠোর লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিয়ম পালন করে দেশগুলো।
ফলে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফ্রেন্স পলিনেশিয়া, ফিজি, নিউ কেলেডোনিয়া, পাপুয়া নিউ গিনির মতো দেশগুলো ও অঞ্চলগুলোতে করোনা পাত্তাই পায়নি।
এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে সাড়ে ১১ হাজার মানুষ করোনার ভুক্তভোগী। আর মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৩০ জনের। এর মধ্যে সুস্থই হয়েছেন ৯ হাজার ৩৭২ জন।